নাগরিক রিপোর্ট : শনিবার নড়িয়ার বাসিন্দা একজন বৃদ্ধ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। মৃত্যুর আগের কয়েককটা দিন তিনি কি করেছেন, শুনবেন? লেখাটা একটু বড়, ধৈর্য নিয়ে পড়ুন-
৩ মার্চ ইতালি থেকে তার ছেলে এসেছেন। আলহামদুলিল্লাহ,
ছেলেটা এখনও করোনামুক্ত। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায় হয়েছে। ছেলেটা
ঢাকাতেই ‘নিয়ম মেনে’ কোয়ারান্টাইনে ছিলেন। কিন্তু ক্রিকেট পাগল এই
রেমিটেন্স যুদ্ধা একটু মহল্লায় পোলাপানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছিলেন। তাতে
তার হাত ভেঙে যায়। আহারে! বাবার মন বলে কথা, ছেলেকে দেখতে নড়িয়ার গ্রাম
থেকে ঢাকায় ছুটে আসলেন তিনি।
গত ২০
মার্চ প্রবাসীর বাবা গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে এসে ঢাকার
মিরপুরের ১৩ নম্বরে মেয়ের বাসায় ওঠেন। তিনি আবার দেওয়ানবাগ দরবার শরিফের
পীরের মুরিদ ছিলেন। সেদিন শুক্রবার, তাকে কি আর থামানো যায়! ‘বাবার’ দরবারে
চলে গেলেন জুমার নামাজ পড়তে। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি জুমা আদায় করেছিলেন
সেখানে।
কিন্তু কপাল খারাপ! পরদিন থেকেই তার ডায়রিয়া শুরু হয়ে যায়। স্বজনেরা তাকে ভর্তি করেন মিরপুর ১০ নম্বরে আলোক হেলথ কেয়ার হাসপাতালে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসার পর তাকে ২৪ মার্চ গ্রামের বাড়ি নেওয়ার জন্য ঢাকার সদরঘাট নেওয়া হয়। তবে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার অ্যাম্বুলেন্সে করে নড়িয়ার থিরপাড়ায় গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়।
২৮ মার্চ গ্রামের বাড়িতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর তাকে নড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ( মুলফৎগঞ্জ হাসপাতালে) নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা ধারনা করেন, বৃদ্ধের স্ট্রোক হতে পারে। তারা তাকে দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। এরপর তাকে ওই দিনই ঢাকায় এনে নিউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতাল থেকে দুইদিন পর বলা হয়, স্ট্রোক হয়নি। তার শ্বাসকষ্ট অব্যাহত থাকায় তাকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন সেখানকার চিকিৎসকেরা।
৩০ মার্চ তাকে নেওয়া হয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎকরা শুরুতেই ধারনা করেন, বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। পরে তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শনিবার সকালে ওই হাসপাতাল থেকে ফোন করে স্বজনদের জানানো হয়- তিনি ( বৃদ্ধ) আর নেই! মুসলিম রীতি অনুযায়ী তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
কি বুঝলেন তো? সন্তানেরা বাবার মুখটি শেষবার আর দেখতে পারেন নি, দাফনেও উপস্থিত থাকতে পারেন নি।
মাঝে গ্রামে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী, মেয়ের বাসা, নড়িয়ার হাসপাতাল, নিউরোসাইন্স হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং যে স্বজনেরা তাকে নিয়ে দৌড়ঝাপ দিয়েছেন, তাদের যা ছড়ানোর তা কিন্তু ছড়িয়ে গেছে।
তাই বলছি কি, আসুন আপাতত বাবার দরবারে যাওয়া, স্বজনের বাসায় যাওয়া বাদ দেই, অপরিচিতদের সঙ্গে নামাজ না পড়ে বাসার ভেতর নামাজ আদায় করি, সবার মঙ্গলের জন্য বাসাতেই থাকি।
একবার ভাবুন তো, আপনার হেয়ালি বা খামখেয়ালির জন্য এতোগুলো মানুষকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করলে আল্লাহ কি আমাদের ক্ষমা করবেন?
(তথ্যগুলো শরীয়তপুরের এসপি এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্বজনদের বক্তব্য থেকে নেওয়া)
সংবাদটি সমকাল সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুলের ফেসবুক আইডি থেকে সংগৃহীত।