নাগরিক রিপোর্ট: বরিশাল সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’র (টিটিসি) অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ কমপক্ষে দুই ডজন শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক ভবনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। চাকুরী বিধি অনুযায়ী তাদের মূল বেতনের ৪০ ভাগ বাড়িভাড়া কর্তনের নিয়ম। কিন্ত এ প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষসহ সকলে ৫ ভাগ হারে বাড়িভাড়া কর্তন করছেন। ফলে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষর গাড়ি তার গোটা পরিবার পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীরা বিদুৎ বিল যথাযথভাবে পরিশোধ করেন না। এসব ভয়ংকর অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের নজরে এলে দূর্ণীতি দমন কমিশন (দূদক) এর তথ্য চেয়ে জেলা হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে।
এ তথের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অডিটর মো. ফারুক হোসেন। তিনি বরিশাল টিটিসি’র যাবতীয় বিল প্রস্তুত করেন। ফারুক হোসেন বুধবার জানান, টিটিসির শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া পরিশোধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চেয়ে দূদকের একটি চিঠি আজ (বুধবার) হাতে পেয়েছেন। চলতি জুলাই থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিল আটকে দেয়া হবে বলে অডিটর মো. ফারুক হোসেন জানান।
সুত্রগুলো জানায়, অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. গোলাম কবির গতবছর ১৪ মার্চ বরিশাল টিটিসিতে যোগদান করেন। প্রতিষ্ঠান কম্পাউন্ডের মধ্যে নির্ধারিত আবাসিক ভবনে স্ত্রীসহ দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। তিনি মূল বেতনের ৪০ ভাগের পরিবর্তে ৫ ভাগ হারে বাড়িভাড়া পরিশোধ করছেন গত একবছর যাবত। তার স্ত্রী বরগুনা জেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সুত্রগুলো জানিয়েছে, অধ্যক্ষের স্ত্রী স্বামির গাড়ি নিয়ে প্রায়ই বরগুনাতে যাতায়াত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. গোলাম কবির ৫ ভাগ হারে বাড়িভাড়া দেয়ার কথা অকটপটে স্বীকার করেন। তিনি দাবী করেন, অধ্যক্ষর আবাসিক ভবন ব্যবহার অনুপযোগী। তিনি যোগদান করার পর সংস্কার করে বসবাস করছেন। অধ্যক্ষ বলেন, চলতি জুলাই থেকে তিনি ৪০ ভাগ হারে বাড়িভাড়া পরিশোধ করবেন। তার সরকারি গাড়ি নিয়ে স্ত্রীর কর্মস্থল বরগুনা জেলাতে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ। টিটিসির অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের ৫ ভাগ হারে বাড়ি দেয়া প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, যার যার দায় তারা বহন করবেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, উপাধ্যক্ষ ওয়াহিদ মোড়ল একবছর আগে বরিশাল টিটিসিতে যোগদান করার পর ক্যাম্পাসের মধ্যে তার নির্ধারিত বাসভবনে থাকেন। ৪০ ভাগের পরিবর্তে ৫ ভাগ হারে বাড়িভাড়া দিচ্ছেন। উপাধ্যক্ষর ঘনিষ্ঠজন ইন্সট্রাক্টর তৈয়বুর রহমান ৩ সন্তান নিয়ে থাকেন ছাত্রাবাসের দুটি কক্ষে। ভাড়া দেন ৫ ভাগ হারে। দেননা বিদ্যুৎ বিলও। তিনি দাবী করেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই সেখানে বসবাস করে ৫ ভাগ হারে ভাড়া দিচ্ছেন।
ইলেকট্রিকাল ট্রেডের ইন্সট্রাক্টর মো. ফরিদউদ্দিন দুই বছর আগে অবসরে গেলেও এখনও পরিবার নিয়ে বাস করছেন শিক্ষকদের নির্ধারিত আবাসিক ভবনে। অথচ তার নামে বরাদ্ধ ছিল ছাত্রাবাসের চতুর্থতলার একটি কক্ষ। অধ্যক্ষর নিকটাত্মীয় ইন্সট্রাক্টর চাকুরীকালিন সময়ে ৫ ভাগ হারে ভাড়া দিতেন। এ প্রসঙ্গে ফরিদউদ্দিন দাবী করেন, তিনি মহাপরিচালকের অনুমতি নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন।
একইভাবে বরিশাল টিটিসির কম্পাউন্ডে থাকা আবাসিক ভবনে বাস করে ৫ ভাগ হারে বাড়িভাড়া দিচ্ছেন- প্রধান ইন্সট্রাক্টর মো. হাবিবুল্লাহ, ইন্সট্রাক্টর গোলাম ফারুক, মো. আলাউদ্দিন, স্টানোগ্রাফার আবুল বাশার, চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালক মো. বছির উদ্দিন, টিসিসি জামে মসজিদের ইমাম, ছানি ইমাম ও মোয়াজ্জেমসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরা প্রত্যেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধেও নয়-ছয় করছেন। তাছাড়া প্রত্যকে অবৈধ হিটার ব্যবহার করছেন।
এসব প্রসঙ্গে টিটিসির হিসাবরক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ অন্যারা দাবী করেছেন তাদের আবাসিক ভবনগুলো ব্যবহার অনুুপযোগী। সেগুলো মেরামতের জন্য অনেক আগে গণপূর্তে চিঠি দেয়া হয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য তারা ৫ ভাগ হারে বাড়িভাড়া দিচ্ছেন। এভাবে নামমাত্র বাড়ি ভাড়া কর্তন সঠিক কিনা এ প্রসঙ্গে হিসাব রক্ষক আব্দুর রশিদ বলেন, অনেকেই অনলাইনে বিল করেন। যে কারনে তার কাছে এসবের হিসাব দেয়া হচ্ছে না।
২০২০-০৭-১০