সৈয়দ জুয়েল:
এ বছরের রমজানের এখন বিদায়ের সুর। ক’দিন পরেই খুশীর ঈদ। পুরো রমজানে নিজেকে ত্যাগের মহিমায় কতটা উজ্জ্বল করেছি! পরচর্চা, পরনিন্দা, গীবত, বুহতান, মিথ্যে, ঘুষ, দূর্নীতি থেকে কতটা দূরে ছিলাম!
আদৌ কি এগুলো ত্যাগ করতে পেরেছি! শুদ্ধ জীবন গঠনে রমজানই হলো উত্তম মাস। সিয়াম সাধনার এ দিনগুলোতে ঈবাদতের মাধ্যমে-সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের ত্যাগটুকু কি সঠিক পথেই ছিলো! ঈবাদত কবুল অথবা কবুল না হওয়া আমরা বলতে না পারলেও- উপলব্ধি করা যায় নিজের ভেতর কতটুকু পরিবর্তন এসেছে তার মাধ্যমে।
উপরোক্ত অভ্যাসগুলো অনেকটা পরিবর্তন হলে বুঝতে হবে- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আপনি সঠিক পথেই এগোচ্ছেন। আর যদি ঐ অভ্যাসগুলো থেকেই যায়,তাহলে বুঝতে হবে উপোস থাকাই হয়েছে, নিজেকে শুদ্ধি হওয়ার দৌড়ে কার্যতঃ কোন ফসল তুলতে ব্যার্থ হয়েছি আমরা। নিজেকে উত্তম কাজে বিলিয়ে দেয়ার মাঝে যে সুখ অনুভূত হয়,সেই অনুভূতির মিষ্টি গন্ধ যার শরীরে বাসা বাঁধে,মানুষ হিসেবে সে-ই উত্তম।
এ বছর করোনার কারনে অনেকেই চাকুরী হারিয়েছেন,হারিয়েছে ব্যাবসাও। গরীব আর নিম্ন মধ্যবিত্তের মাঝে তেমন ফারাক এখন নেই। গরীব মানুষ হাত পেতে চাইলেও নিম্ন বিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তরা আত্নসন্মান বোধের কারনে আপনার দুয়ারে কখনো আসবেনা। এক বেলা বা আধা পেটে থাকলেও ব্যাক্তিত্ব শক্তিশালী এ সব মানুষ হাসি দিয়ে বলবে-“আমি ভাল আছি”।
প্রতিবছরই আমরা শপিংয়ে অনেক টাকা খরচ করি, এ বছর না হয় একটু মানবিক হয়ে দরিদ্র থেকে শুরু করে না চাওয়া মানুষগুলোর পাশে একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেই। ঈদ তো খুশীর বারতা নিয়ে আসে। আপনার, আমার একটু ত্যাগে খুশীর এ দিনটি হতে পারে সবার ভালবাসাময় এক ঈদ। মনুষ্যত্ব জাগ্রত না হলে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতা কতটুকু! দিন ঠিকই কেটে যাবে।
রাস্তার ধারে, লঞ্চ, রেল স্টেশনে ঘুমিয়ে থাকা অসহায় মানুষগুলো বা নিম্ন আয়ের মানুষ হয়তো নতুন কাপড় ছারা বা অর্ধাহার, অনাহারেই কাটাবে। হয়তো তখন রোস্ট চিকেনের ঘ্রানে আপনি ভূলে থাকবেন অসহায় মানুষের বাসি খাবারের গন্ধ। দিন ঠিকই চলে যাবে। সূর্য মাখা দিনে অন্ধকার মনের আলো কি আর জ্বলবে!
সবাইকে নিয়ে সুখে থাকার প্রদীপ জ্বালা ভালবাসায় এবারের ঈদ যেন হয়-সুখের ঈদ,ত্যাগের ঈদ,মানুষের পাশে থাকার ঈদ। মানুষে মানুষে ভালবাসার স্রোতে ভেসে যেন যায়-অহংকারী মন,মরে যায় মানুষে মানুষে ভেদাভেদের সীমান্ত।