নাগরিক ডেস্ক : কোভিডে আক্রান্ত অ্যালিসন ক্লার্ক গত সেপ্টেম্বরে তার ঘ্রাণ শক্তি হারিয়ে ফেলেন। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া স্ট্রাটেজিস্ট ক্লার্ক বলেন, আমি সকালে উঠে যখন কফি খাচ্ছিলাম, আমি শুধু কফির উত্তাপটাই টের পাচ্ছিলাম। এর কয়েক মাস পর ক্লার্ক আবিষ্কার করলেন, তিনি তার প্রিয় ল্যাভেন্ডার শ্যাম্পুর গন্ধ চিনতে পারছেন না। তিনি বলেন, এই শ্যাম্পুর গন্ধ আমার অনেক প্রিয় কিন্তু এটি তখন সালফার ও গানপাউডারের গন্ধের মতো লাগছিল। এরপরই বিভিন্ন জিনিসের গন্ধ বিকৃতভাবে অনুভব করতে শুরু করেন ক্লার্ক। যেমন, লাল মাংশের গন্ধ অসহ্য ও পচা মনে হতো। সবথেকে ভয়াবহ বিষয় ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
কারণ এটি সব জায়গাতেই তখন ব্যবহার হচ্ছে। এর গন্ধ মনে হতো সস্তা টকিলার ও হ্যামের মতো।
ক্লার্ক প্যারোস্মিয়ায় ভুগছেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি আসল গন্ধ পান না। তার নাকের যে কোষগুলো রয়েছে তা গন্ধ শনাক্ত করতে পারে না বা পারলেও সেটি ঠিকভাবে অনুবাদ করতে পারে না। এটি সাধারণত হয় সাইনাস ইনফেকশন, মাথায় আঘাত, খিঁচুনি কিংবা মাদক গ্রহণের কারণে। প্যারোস্মিয়ার সঙ্গে মানুষ এনোস্মিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন যাতে পুরোপুরি খাবারের স্বাদ হারিয়ে যায়। এটিকে কোভিডের সাধারণ উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে কোভিডের চিকিৎসা নেয়ার ৬ মাস পরেও ক্লার্কের ঘ্রাণশক্তি এখনো পুরোপুরি ফিরে আসেনি। ক্লার্ক বলেন, আমি গন্ধ পাচ্ছি। তবে বুঝতে পারছি না এটি কিসের গন্ধ।
তবে গত বৃহস্পতিবার জামা নেটওয়ার্ক ওপেন একটি নতুন গবেষণা প্রকাশ করেছে। গবেষণার জন্য ৯৭ জন কোভিড রোগিকে বেছে নেয়া হয়। প্রতি ৪ মাস পরপর তাদেরকে পরীক্ষা করা হয়। এতে জানা যায়, ৮ মাসের মধ্যে রোগিদের ৯৬.১ শতাংশের স্বাদ ও গন্ধ ফিরে এসেছে। গবেষণাটি করেন ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের গবেষক ড. মারিওন রেনড এবং তার সহকর্মীরা। তারা দেখেন দুজন রোগির গন্ধ নেয়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। একজন গন্ধ পাচ্ছেন তবে তা বিকৃতভাবে। অপরদিকে আরেকজনের কোনো উন্নতিই নেই। গবেষণা বলছে, যারা সুস্থ হয়েছেন তাদেরও অনেকের স্বাদ ও গন্ধের তীব্রতা কমে গেছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার হার ৮ মাসে ৫০ শতাংশের বেশি।
কোভিড আক্রান্তদের ৪০ থেকে ৬৮ শতাংশই ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এটিকে সামান্য থেকে মধ্যম মাত্রার সংক্রমণের একটি উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। একইসঙ্গে দেখা গেছে, এটি পুরুষের তুলনায় নারীর বেশি হয়। ইস্ট অ্যাঙ্গালিয়া নরউইচ মেডিক্যাল স্কুলের গবেষক কার্ল ফিলপট বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে মিস্টি ও তেতো স্বাদ গ্রহণ করা রিসেপ্টরগুলোর কার্যক্ষমতা কমে যায়। লেবার পার্টির পক্ষ থেকে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রতি হ্যানকককে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির বেশিরভাগ নেতারা বলছেন, বৃটেনে বিধিনিষেধ চললেও কাজের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে নেই। তবে সরকারের পরামর্শ হচ্ছে, যেখানে সম্ভব মানুষ যেন দুই মিটার বা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখে। পাশাপাশি দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানতে হবে বা মাস্ক পরতে হবে। হ্যানকক নিজের ভুলের জন্য যখন দুঃখ প্রকাশ করেছেন তখন এ নিয়ে আর কথা না বাড়াতে তারা অনুরোধ করেন। কিন্তু লেবার পার্টির চেয়ারম্যান অ্যানেলিস ডডস তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, হ্যানকক নিজেই নিয়ম ভাঙার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এখন তার পদত্যাগই একমাত্র পথ। বিবিসি বলছে, সরকার মনে করে, এই ঘটনায় কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। কারণ, হ্যানকক ও তার সহকারী দুজনই দপ্তরে বৈধ কাজের জন্য গিয়েছিলেন। দেশটির লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে হ্যানকককে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে তার বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্ব রাখার বিষয়টি নিয়ে ‘ভণ্ডামি’র অভিযোগ করা হয়েছিল।