সৈয়দ জুয়েল:
একটি ঘরে কন্যা সন্তান না থাকলে কোথায় যেন অপূর্নতা। তপ্ত মরুভূমির মাঝে ছোট কোন বৃক্ষের ছাঁয়া দেখে যেমন শীতল হয় মন,তেমনি ঘরের কন্যা সন্তান। দিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফেরা বাবাদের কন্যার মুখ দেখে যতটা বিষাদ, ক্লান্তি দূর হয়, আর কিছুতে কি হয়! ছেলে সন্তান যত বড় হয়, ততই পরিবারের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে। কদাচিৎ কিছু ছেলে সন্তান একটু আলাদা। তবে কন্যা সন্তানরা তার পুরো বিপরীত। অধিকাংশ কন্যাদের বিয়ের পরও মনটা পরে থাকে তাদের বাবা,মার বাড়ী।
শশুর বাড়ী থেকে বাবার বাড়ী যাওয়ার সময় কোন মেয়ের মুখের দিকে কেউ যদি তাকিয়ে থাকেন, বুঝবেন-কত ভালবাসা জমিয়ে রেখেছে এই মেয়েটি তার বাবা মায়ের জন্য। ঘরের সামনে এসে যতটা দ্রুত পায়ে মেয়েরা তার বাবা, মায়ের কাছে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে, এরকম মায়ার টানের ছুটে চলা আর কারো মাঝে দেখা যায়!
পরিবারের মাঝেও ভাই-বোনের যে সম্পর্ক,সেখানেও বোনরা অনেক এগিয়ে। বোনদের যতটুকু মায়া তাদের ভাইদের জন্য, সে তুলনায় বোনদের জন্য ভাইয়ের ভালবাসা কম বৈ কি বেশি নয়। ভাই ছোট হোক বা বড়, নিজের ঘরে বা বোনের শশুর বাড়ী ভাইরা এলে বোনের জমানো টাকা চুপিচুপি ভাইদের পকেটে দিয়ে অশ্রুসজল চোখে বিদেয় দেয়। ভালবাসা,মায়ার প্রতিটি চোখের জলের ফোঁটায় আহারে ভালবাসা!
একজন বাবা তার মেয়েকে তার সেরা আদর,ভালবাসা দিয়ে গড়ে তুলেন। বিয়ের যত সময় ঘনিয়ে আসে,তত চিন্তার ভাঁজ-মেয়েটি তো সুখে থাকবে! যে মেয়েটির সাথে একটু রাগ করে কখনো কেউ কথা বলেনি,শশুর বাড়ীর লোকেরাও কি তার মেয়েকে সেভাবেই আগলে রাখবে!। হাজারও প্রশ্ন উঁকি দেয় বাবা,মার মনে।
অনেক মেয়ে প্রবাসে থাকেন,দেশে বাবা মা বছর,মাস,দিন,ঘন্টার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনেন-মেয়ের মুখটি কখন দেখবে বলে। মেয়ে আসবে বলে তার পছন্দের কত রান্নার পষরা সাজিয়ে বসে থাকেন মা। তুই আসবি বলে তোর বাবার উচ্চ রক্তচাপ,আর বুকের ব্যাথাটাও এখন নেই বললেই চলে।
তোর পছন্দের খেঁজুর রস সাত মাইল দূরে হেঁটে গিয়ে নিয়ে এসে তোর বাবার যেন রাজ্য জয়ের আনন্দ। কন্যা সন্তানটিও বিদেশের মাটিতে ভাল মানের দোকান ঘুরে বাবার জন্য নিয়ে আসা চাঁদরটি গায়ে জড়িয়ে ধরে, আর হাত মোজাটা পরিয়ে দিয়ে বলে-“বাবা তোমার তোমার হাত দুটো অনেক সুন্দর”। মেয়ের কথা শুনে বাবার চোখে জল! কতদিন এরকম করে কেউ বলেনি!
ছোটবেলার নির্ভরতার হাত, স্নেহের হাতের স্পর্শ কন্যা সন্তানরা একটু বেশি-ই ভুলতে পারেনা। বৃদ্ধ বয়সে কাঁপা হাতে বাবার হাতের একটু ছোঁয়া পেতে কন্যাদের কত আঁকুতি। আবার বাবাদেরও শরীরে যতই রোগ বাসা বাঁধুক, কন্যারা একটু পাশে বসলেই যেন সুস্থতা। মৃত্যুর পরও বাবার কবরের কাছে যখন কন্যাটি আসে- “তুমি যেমন করে তোমার কন্যাকে রাজকন্যার মত করে আগলে রেখেছিলে,সেরকম করে আর কেউ আর আগলে রাখেনা”। কন্যা দিবসে ভাল থাকুক সবার রাজকন্যারা।