ইকবাল হোসেন তাপস: গত তিন মাস কোন ভাল খবর নিয়ে সকাল হয় না। দু:সংবাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আজকাল অসময়ে কোন ফোন কল আসলেই হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি কোন দু:সংবাদের রিংটোন বাজলো। এতো কিছুর মধ্যেও কিছু কিছু সংবাদ নানা সময়ে ভিন্ন চিন্তার খোড়াক জোগায়।
সভ্যতা ও গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকা করোনায় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু যতটা না দিশেহারা করতে পেরেছে, জর্জ ফ্লোয়েড এর একার মিত্যু তার চেয়ে বেশী বেকায়দায় ফেলেছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। আমেরিকান গনতন্ত্রের নমুনা টেলিভিশনের কল্যাণে সারা পৃথিবী দেখল করেছে। একজন পুলিশের হাতে নাগরিকের নির্মম হত্যা এখন সবাই জানে। পাশাপাশি প্রতিবাদের নামে লুটপাট, জ্বালাও পোড়াও ভাংচুরও দেখলাম। মনে হয়েছে বাঙ্গালির কাছ থেকে জ্বালাও পোড়াও ভাংচুরের আন্দোলন টা ঠিক ঠাক মতো রপ্ত করে নিয়েছে আমেরিকানরাও।
এতো কিছুর মধ্যেও হাসির খোড়াক পেলাম যখন দেখলাম একদল বিক্ষোভকারি একত্রিত হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে তাদের উদাম পাছা প্রদর্শন করছেন। মনে পরে গেল কেয়ার টেকার সরকারের উপদেষ্টা জনাব আকবর আলি খানের ‘পাছায় লাথি’ ফর্মুলার কথা। যখন কলেজে পড়তাম তখন পিএল (পাছায় লাথি) কথাটা বেশ প্রচলিত ছিল। বন্ধুদের মধ্যে ভুল কিছু একটা হলেই পিএল বরাদ্দের কথা বলতে শুনা যেতো।
পাছা শব্দটা কিছুটা অশ্লীল মনে হলেও গণতন্ত্র, স্বৈরাতন্ত্র উভয়ের পাছার সাথে খুব সম্পর্ক রয়েছে। এই যেমন ধরুন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পাছা দেখিয়ে প্রতিবাদ করব। আবার স্বৈরতন্ত্রে জনগনকে ধরে নিয়ে পাছা থেরাপি দেয়ার বেশ রেওয়াজ আছে । আসামীর জবানবন্দি নেওয়ার জন্য বিশেষ থেরাপি পুলিশেরও বেশ পছন্দ যাতে আসামি তার পৎচাতদেশ অন্যজনকে দেখাতে না পারে।
আবার পাছা দেখিয়ে সম্মান দেখানোর গল্পও আছে। আমাদের লাকুটিয়ার জমিদারের কথা বরিশালের অনেকেই জানেন। জমিদারী প্রথা তখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। জমিদারের নায়েব কাজেম সাহেবের উপর জমিদার বাবু খুব নাখশ। কারন কোন এক কারনে কাজেম জমিদার বাবুর সাথে বেয়াদবী করেছেন।
কাজেম লাপাত্তা জমিদার বাড়ির আশেপাশেও হাঁটেন না। কাজেমকে ছাড়া জমিদার বাবুরও চলে না, তাই একদিন কাজেম কে তলব করা হল। কাজেম জমিদার বাবুর বৈঠক খানায় ঢুকার সময় পিছন মুখ করে ঢুকে পিছন ফিরে জমিদারের দিক করে দাড়িয়ে রইলেন। জমিদার বাবু রাগান্বিত হয়ে বললেন এ কি রকম বেয়াদপি। নাজেম বললেন হুজুর এ বেয়াদবী নয় সম্মান। যে অন্যায় আমি করেছি তাতে মুখ দেখাই কেমন করে।
আকবর আলি খান তার পাছায় লাথিটা শুধু ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের উপর চালিয়েছেন। আমার মনে হয়ে আমাদের শাসন ব্যাবস্থার উচ্চস্তর থেকে একেবারে নি¤œস্তর পর্যন্ত সব যায়গায় এরকম একটা থেরাপি চালু থাকলে খারাপ হত না। এই থেরাপির আঘাত কেউ না দেখলেও দিন শেষে বাসায় এসে স্ত্রীর হাতের গরম ছ্যাঁক নিতে গিয়ে লজ্জিত হলেও হতে পারেন।
করোনা মহামারীতে সরকারের একটা মহলের দায়িত্বহীন আচরন স্বাস্থ্যখাতের করুণ চিত্র সহ ডাক্তারদের অপেশাদারী আচরণ, পাশাপাশি জনগণের দায়িত্বহীনভাবে চলাফেরা জাতির এই চরম মুহূর্তে একজন পাছা থেরাপিষ্ট বড্ড প্রয়োজন।
আসুন লজ্জায় মুখ দেখাতে না পারলেও পাছা দেখাই, কাউকে লজ্জা দিতে হলেও পাছা দেখাই, তার পরেও সোজা রাস্তায় না আনতে পারলে পাছা থেরাপি দেই।
ইকবাল হোসেন তাপস, রাজনীতিবিদ।
২০২০-০৬-১৫