সংকুচিত হচ্ছে মেঘনা ঘেরা হিজলা, আন্দোলনের হুশিয়ারী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: উত্তাল মেঘনাবেষ্টিত বরিশালের হিজলা উপজেলার মানচিত্র দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে। তবে নদীভাঙ্গন কিম্বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে নয়, এ উপজেলার ভূখন্ড কেটে পার্শবর্তী জেলা, উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করায় আয়তনে ছোট হয়ে যাচ্ছে হিজলা উপজেলা। এর আগে দুই দফায় হিজলার তিনটি ইউনিয়ন পাশ্ববর্তী শরিয়তপুর জেলার গোসাইরাহাট ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় সংযুক্ত করা হয়। এবার হিজলার একটি ইউনিয়নের ৪টি মৌজা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় অন্তর্ভূক্তের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর বিরুদ্ধে হিজলাবাসী আন্দোলন করার হুমকি দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ও আর্থিক ফায়দা নেয়ার জন্য ভূখন্ড কেটে অন্য উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করে হিজলার আয়তন সংকুচিত করে দিচ্ছে প্রভাবশালী মহল।
হিজলা উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম দুলাল বলেন, মেঘনা ঘেরা এ উপজেলাটি মৎস্যসহ অর্থনৈতিক সম্পদে ভরপুর। যুগ যুগ ধরে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, আমলাসহ বিভিন্ন স্বার্থান্বেসী মহলের শকুনী দৃস্টি রয়েছে এ উপজেলার ওপর। বার বার হিজলার বুকে ছুড়ি বসিয়ে কেটে এর মানচিত্র ছোট করে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে হিজলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় যুক্ত করা হয়। তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি মোশারফ হোসেন মঙ্গু এবং জামাত নেতা আবুল হাশেম হাসেম এটি করেছেন। অধ্যাপক মাহবুব বলেন, গোবিন্দপুর হিজলার সবচেয়ে জনবহুল এবং সমৃদ্ধ এলাকা। এখানে মোঘলদের নৌ ঘাটি ছিল। গোবিন্দপুরেই এ অঞ্চলের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯০৮ সনে উত্তর সাহবাজপুর জর্জ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
২০০৪ সালে ফের হিজলা উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে সংযুক্ত করা হয় পার্শবর্তী শরিয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার সঙ্গে। একই সময়ে হরিনাথপুর ও হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের আংশিক এলাকা গোসাইরহাটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
অধ্যাপক মাহবুব অভিযোগ করেন, এসবের মুল হোতা ছিলেন তৎকালীন সময়ে বিএনপি দলীয় এমপি মোশারফ হোসেন মঙ্গু। তখন মুলাদী-হিজলা উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন ছিল। মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা মঙ্গুর পরিকল্পনা ছিল এভাবে হিজলার ভোটার সংখ্যা কমিয়ে স্থায়ীভাবে হিজলাকে মুলাদীর কলোনী বানানো।
তিনি অভিযোগ করেন, এসবের মুল হোতা ছিলেন তৎকালীন সময়ে বিএনপি দলীয় এমপি মোশারফ হোসেন মঙ্গু। তখন মুলাদী-হিজলা উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন ছিল। মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা মঙ্গুর পরিকল্পনা ছিল এভাবে হিজলার ভোটার সংখ্যা কমিয়ে স্থায়ীভাবে হিজলাকে মুলাদীর কলোনী বানানো। তৎকালীন সরকারের একটি প্রভাবশালী মহলকে খুশি করতে শরিয়তপুরকে হিজলার বিশাল অংশ দিয়ে দেয়া হয়। এখন সেই স্থানের কয়েকশ একর জমিতে প্রভাশালী একজনের ডেইরি ফার্ম স্থাপিত হয়েছে। চরগুলো দখল করে সরকারী রাজস্ব ফাঁিক দিয়ে সেখানে অর্থনৈতিক লাভভাবন হওয়াই তাদের টার্গেট। এই অবস্থা থেকে হিজলার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অচিরেই আন্দোলনে নামবে নাগরিক কমিটি।
হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মিলন এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার ইউপির ৪টি মৌজা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হলেও তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। বিষয়টি উপজেলা পরিষদও জানে না।
চেয়ারম্যান মিলন বলেন, ওই চরগুলোতে জনবসতি তেমন নেই। শোনা যাচ্ছে, ৪ হাজার একরের ওই চারটি মৌজায় ইকোনমিক জোন করার পরিকল্পনা চলছে। এর নেপথ্যের হোতারা সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিশাল বানিজ্য করবেন। সংলগ্ন মেঘনার মৎস্যসম্পদ আহরন, ফসল ফলানোসহ ইকোনমিক জোন হলে সেটিও তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকবে। এতে হিজলাবাসী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
এ প্রসঙ্গে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের ৪টি মৌজা মেহেন্দীগঞ্জে সংযুক্ত করার প্রস্তাব অনেক আগের। সেটির একটি গেজেট হলেও তিনি এখন পর্যন্ত হাতে পাননি। তিনি শুনেছেন, ওইসব মৌজার বাসিন্দাদের বসবাস মেহেন্দীগঞ্জে। তাদের সরকারী নানা কাজে জটিলতা হওয়ায় এমনটি করা হয়েছে। তবে ইউএনও আমিনুল বলেন, বর্তমানে হিজলার আয়তন ৫৩৫.৩৫ বর্গ কিলোমিটার। তবে সরকারী নির্দেশের বাহিরে হিজলার ওই আয়তনের এক ইঞ্চিও ছাড়া হবে না।
এব্যপারে বরিশালস্থ হিজলা কল্যান সমিতির উপদেস্টা এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, মৎস্য ও কৃষি সম্পদে সমৃদ্ধশালী হিজলাকে সংকুচিত করার জন্য আবারও এর বেশ কয়েকটি মৌজা কেটে নেয়া হচ্ছে। এর নেপথ্যে বিশাল খাসজমি দখল করে রাজস্ব ফাঁিক দেয়া এবং নির্বাচনী কুটকৌশল রয়েছে। ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে তিনি মনে করেন, জনগনের মতামত উপেক্ষা করে এটা করা হচ্ছে। তিনি এর বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *