বরিশালে করোনায় গ্রামগঞ্জে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে বরিশালের তৃনমুল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে যে কোন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যারা যাচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়েও কেউ হাসপাতালে এলেই লাপাত্তা হয়ে যান চিকিৎসক ও প্যাথলজিস্ট। অন্যান্য রোগীরাও চিকিৎসা সেবা থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছেন। অধিকাংশ স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ইনডোর ব্যবস্থা বন্ধ। আউটডোর কার্যক্রম চলছে নামেমাত্র। এবস্থায় গ্রামগঞ্জের সাধারন মানুষ চিকিৎসার জন্য গেলে কেবল তুচ্ছতাচ্ছিল্যরই শিকার হতে হচ্ছে।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে রোববার একজন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরেজীবী করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল দিতে যান। তিনি বলেন, তাকে দেখেই প্যাথলজিস্ট এবং চিকিৎসকরা পালিয়ে যান। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় হাসপাতালে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেয়া হলে দরজার ফাঁকগলে অনেকটা তাচ্ছিল্যের ন্যায় স্যাম্পল নেয় প্যাথলজিস্ট। ওই হাসপাতালের ইনডোর এবং আউটডোর ব্যবস্থা অনেকাংশে অচল। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তার সাথে চিকিৎসকদের এতো সম্পর্ক অথচ এখন যেন চেনেনই না।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সাঈদ মো: আমরুল্লাহ বলেন, তার এখানে টেস্ট কিটের সংকট আছে। তাছাড়া স্যাম্পল পাঠালেও রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। যেকারনে স্যাম্পল নিতে কিছুটা জটিলতার সৃস্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, ইনডোর কার্যক্রম এখন লকডাউন বলতে নতুন রোগী ভর্তি করেন না তারা। আউটডোরে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে করোনার স্যাম্পল গ্রহনকারী প্যাথলজিস্ট বিভূতি রঞ্জন বাড়ৈ আক্রান্ত হওয়ায় বর্তমানে সেখানে স্যাম্পল সংগ্রহ বন্ধ রয়েছে। উজিরপুরের একাধিক সাধারন মানুষ বলেন, অন্যান্য রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা পাওয়া কস্টের ব্যাপার। কেন না সেখানে চিকিৎসক নেই বললেই চলে। জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা: শওকত আলী বলেন, তার ৫০ শয্যার হাসপাতালে ৮টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছে ১জন মেডিকেল অফিসার ও আরএমও। আর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে তার তো চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, জনবল সংকটে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারন রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। আর করোনার স্যাম্পল সংগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট আক্রান্ত হওয়ায় নতুন লোক খোজা হচ্ছে।
মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে আউটডোর ও ইনডোর কার্যক্রম দায়সারাভাবে চলছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে কেউ আসলে হাসপাতালের চিত্র পাল্টে যায়। তখন আর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকদের খোজ পাওয়া যায় না। হাসপাতালের সামনে ২টি বুথ করে কোন রকম লোকদেখানো চিকিৎসা সেবা চালানো হয়। রোববার মুলাদী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে বোনকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য যান স্থানীয় সংবাদকর্মী কবীর হোসেন প্যাদা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে কেউ যেতে পারেন না। এখন আর কোন রোগী ভর্তি নেয়া হয় না। ২/১জন আসলে কোন রকম চিকিৎসা সেবা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: সাইদুর রহমানকে এ বিষয়ে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: কবির হাসান ২ সপ্তাহ পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হন। যেকারনে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। দায়সারাভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সামান্য সর্দি, জ্বর হলেও রোগী দেখতে অনীহা প্রকাশ করছেন নবীন মেডিকেল অফিসাররা।
জেলার সন্ধ্যা নদীর ওপারে বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স হওয়ায় সাধারন রোগীর যাতায়েতই এখানে অনেকটা কম। করোনার প্রাদুভার্ব দেখা দেয়ায় শুরুতে ইনডোর আর আউটডোর অনেকাংশেই অচল ছিল। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে এখন দায়সারা সেবা চলছে সেখান। এ প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: সুভাস সরকারকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এব্যপারে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা: মনোয়ার হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের আগেই নির্দেশ দেয়া রয়েছে- যেকোন রোগী হাসপাতালে আসলে আগে নিশ্চিত হতে হবে তিনি করোনায় আক্রান্ত কি-না। এসব কারনে চিকিৎসকরা হয়ত অতি সতর্ক হয়েছেন। তবে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা উপজেলা হাসপাতালে বহাল আছে বলে সিভিল সার্জন দাবী করেন। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে কীট সংকট দেখানো হলেও সিভিল সার্জন বলেন, পর্যাপ্ত কীট রয়েছে তাদের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *