করোনায় বরিশালে পেশা বদলানো মানুষের ভীড়

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: রাজধানীর একটি বেসরকারী কোম্পানীতে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরী করতেন আ: রহমান। করোনায় ছাটাইয়ের মুখে পড়ে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে দ্বীপ জেলা ভোলার সেই ব্যক্তি বরিশাল নগরীতে এখন ভাড়ায় মোটারসাইকেল চালাচ্ছেন। তার এক চাচাতো ভাইও রাজধানী ছেড়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছেন। অচেনা এই মানুষের সংখ্যা বরিশাল নগরীতে ক্রমশই বাড়ছে। প্রাণঘাতী করোনায় চাকরী হারিয়ে দুরদুরন্ত থেকে এই নগরীতে ঠাঁই নেয়া এমন শত শত মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়ে ১০ থেকে ১৫ ধরনের ক্ষুদ্র পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করছেন। বিশেষজ্ঞরা একে অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে অবহিত করে দেশে করোনার প্রভাবে ৭৪ ভাগ মানুষের আয়ের সক্ষমতা কমেছে বলে দাবী করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর নবগ্রাম সড়কে কথা হয় ভ্রাম্যমান ফল বিক্রেতা হালিম মিয়ার সাথে। তিনি জেলার বাবুগঞ্জে একটি দোকানে চাকরী করতেন। করনোয় টানা ৩ মাস বেকারত্বের যন্ত্রনা কাটাতে এক প্রতিবেশীর পরামর্শে এই ব্যবসা শুরু করছেন। এখন দিন শেষে ৩/৪শ টাকা থাকে। ঝালকাঠীর একটি কেজি স্কুলের শিক্ষিকা এখন বরিশাল নগরীতে এসে উঠেছেন ভাইয়ের বাসায়। সেখানে হাতের কাজ করে (কাথা শেলাই) জীবিকা অর্জন করছেন অতি কস্টে এমনটাই জানালেন নাম প্রকাশ ননা করার শর্তে ওই শিক্ষিকা।
নগরীর গীর্জমহল্লার সামনে স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করা বিএম কলেজের দুই ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা করোনার আগে টিউশনি করাতেন। এখন আর বাসায় প্রাইভেট টিউটর রাখছেন না। হোস্টেলও বন্ধ। যেকারনে বাধ্য হয়ে হ্যান্ড সেনিটাইজার, মাস্কসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছেন।
জানতে চাইলে বরিশাল বিএম কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান খান বলেন, করোনায় মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে এখন রাজধানী ছেড়ে বরিশাল নগরীতে নতুন নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, এভাবে পেশা হারিয়েছে কত সংখ্যক সরকারকে তার পরিসংখ্যান তৈরি করে তাদের প্রনোদনার আওতায় আনতে হবে। অর্থনীতির বাস্তবতা মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে। অর্থনীতিবিদ আক্তারুজ্জামান বলেন, এটি অভ্যন্তরীন মাইগ্রেশন। এ অবস্থা রোধ করা না গেলে শহর থেকে গ্রামের উপর চাপ পড়বে। উদাহরন হিসেবে তিনি বলেন, কেজি স্কুলের শিক্ষকরা এখন বেকার। এর মধ্যে সাংবাদিকও আছেন। বাংলাদেশ অর্থনিতি সমিতি এক পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে দেশের ৭৪ ভাগ মানুষের আয়ের সক্ষমতা কমেছে। এটি অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, তার পরিচালিত সামাজিক সংগঠন ‘প্লিজ হেল্প দ্যা করোনা অ্যাফেকটেট পিটুল’ এর আওতায় বরিশাল নগরীতে ৩জনকে সেলাই মেশিন, রাজধানীতে জুতা বিক্রি করা একজনকে চায়ের সরঞ্জামাদী, অপর একজনকে ভ্যানের সরঞ্জামাদী, টিউশনি করানো এক নারীকে নকশি কাথা তৈরির ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকারকে এখন আর খাদ্য সহায়তা নয় বরং টেকশই কর্ম উপকরন নিশ্চিত করতে হবে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, মরনঘাতী করনোর কারনে মানুষের আয়ের পথ কমে গেছে। চাকরী হারিয়ে এখন নানাভাবে জীবিকা নির্বাহের চেস্টা করছেন মানুষ। বরিশাল নগরীর সদর রোড, গীর্জমহল্লা, নগরভবনের সম্মুখে, লঞ্চঘাট, নথুল্লাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন নতুন নতুন মানুষ দেখা যাচ্ছে। এরা কেউ দেশী ফল বিক্রি করছেন, কেউ জুতা সেলাই করছেন, কেউ রিকশা চালাচ্ছেন। এদের অনেকেই অন্য জেলা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, এই লোকগুলো কর্ম হারিয়েছেন। তাদের কর্মসংস্থান দরকার। কেন না এমন ভ্রাম্যমান ব্যবসা করে জীবিকা অর্জন কঠিন। সরকারকে তাই চলতি বাজেটেই আঞ্চলিকভাবে কর্মসংস্থান সৃস্টির দাবী জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *