বর্ষায় ভাঙ্গন আতংকে মেঘনা পাড়ের মানুষ

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশালের মেঘনা পাড়ের বিচ্ছিন্ন দুই উপজেলা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের মানুষের মাঝে নদী ভাঙ্গনের আতংক বিরাজ করছে। এই বর্ষায় দুটি উপজেলার প্রান কেন্দ্রের সদর ইউনিয়নই তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। এতে বিলীন হচ্ছে সরকারী স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘনার ভাঙ্গনের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছে, চলতি বর্ষায় দুটি উপজেলার নদী ভাঙ্গন রোধে প্রায় ৩ কোটি টাকার ‘এমার্জেন্সি বরাদ্ধ’ মন্ত্রনালয়ে চাওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ভরা বর্ষায়ও ভয়াল মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা প্রশাসন কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
হিজলা: ঐতিহ্যবাহী হিজলা উপজেলা ভয়াল নদীর ভাঙ্গনে দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসূমে মেঘনার চোখ পড়েছে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দিকে। এই ইউনিয়নের হিজলা উপজেলা চত্বর সংলগ্ন মেঘনা নদীর শাখায় তীব্র ভাঙন ধরেছে। বিশেষ করে বড়জালিয়ার বাউসিয়া গ্রাম তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। গতবছর এখানে জিওব্যাগ ফেললেও তা এখন নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে। এর পাশের টেকের বাজার এবার ধ্বসের আশংকা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পুরাতন হিজলা বন্দরের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার গত এক মাসে নদী গর্ভে চলে গেছে। সেখানকার নৌ টার্মিনাল সরিয়ে গাছের সাথে বেধে রাখা হয়েছে।
হুমকীর মুখে রয়েছে পুরাতন হিজলা বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোস্ট গার্ডের দক্ষিন জোনের পতিত জমি, মধ্য বাউসিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিন বাউসিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিশেষ করে বাউসিয়া কলনী সড়ক ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে।
হিজলার বাউসিয়া এলাকার ধান চাল ব্যবসায়ী মো: রফিক বলেন, মেঘনার ভাঙ্গনে চলতি বছরই ৮ থেকে ১০টি ঘর বিলীন হয়ে গেছে। পাশের দক্ষিন চর বাউসিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ও হুমকীতে। ভাঙ্গনকবলিত নদী তীরে পাথর ফেলার চেস্টা করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সানোয়ার মিয়া। কিন্তু তাতে বাধ সাধে প্রভাশালীরা। দক্ষিন বাউসিয়া ৮ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য ঝন্টু হাওলাদার বলেন, তার বাড়ির ১০০ফিট দুরে সাইক্লোন সেন্টার কাম স্কুল, মসজিদ, হাফিজি মাদ্রাস মেঘনার ভাঙ্গনের ঝুকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন সুফল পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মেঘনার ভাঙ্গনে উপজেলা পরিষদ চত্বরও হুমকীতে রয়েছে। ভাঙ্গন প্রবন এলাকা চিহিৃত করতে ভুমি অফিস তথ্য নিচ্ছে। ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আগামী সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হবে। তবে হিজলা উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুল আলম বলেন, বর্ষায় ভাঙ্গন শুরু হলেও উপজেলা প্রশাসন যদি তা রোধে ব্যবস্থা না নেয় তবে সংশ্লিস্টরা এর দায়ভার এড়াতে পাড়বে না।
মেহেন্দীগঞ্জ: পার্শবর্তী উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জের সদর ইউনিয়নের রুকন্দি, সাদেকপুর, চানপুর মেঘনার মোহনা ইলিশা নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। এর কারন হিসেবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তীব্র গতির জাহাজ গ্রীন লাইন বরিশাল থেকে মেঘনার শাখা ইলিশ নদী দিয়ে যাওয়াকালে এই গ্রামগুলো ভাঙ্গছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলিনের পথে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী রুকুন্দি, বাহাদুরপুর, সাদেকপুর গ্রাম নদীর কাছাকাছি চলে এসেছে। বর্ষা এলেই ভাঙ্গনের শিকার হন এলাকার মানুষ। নদীর পাড় দেবে গাছপালা, বাড়ি ঘর বিলীন হচ্ছে। বর্ষায় উত্তাল মেঘনার ঢল ইলিশা নদীতে প্রভাহিত হওয়ার কারনেই মানচিত্র থেকে হারাতে পারে সদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। রুকুন্দি সরকারী প্রা: বি: কাম সাইক্লোন সেন্টার এবং ঐতিহ্যবাহী সাদেকপুর দাখিল মাদ্রাসা ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। মেহেন্দীগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রিপন বলেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় এমপি, সচিব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তখন বলেছিলেন কিছু একটা করবে। কিছু বস্তাও ফেলেছিল, কিন্তু কাজে আসেনি। এই বর্ষায় ভাঙ্গন রোধে কিছু হবে কিনা তাতে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
একইভাবে উপজেলার দড়িরচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। সেখানকার একটি স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার মেঘনার শাখা নদীতে বিলীন হওয়ার পথে রয়েছে। একই অবস্থা ভাষানচর ইউনিয়ন পরিষদ। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুষ চন্দ্র দে বলেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। এর আগে একটি স্কুলের বিষয়ে পাউবো কে বলাও হয়েছে। উপজেলার অন্য কোন কোন স্থান ভাঙ্গনকবলিত তা খতিয়ে দেখা শিঘ্রই ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এব্যপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের (হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত) উপ সহকারী প্রকৌশলী মো: সোহাগ তালুকদার বলেন, মেঘনা নদী বেষ্টিত হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বেশ অনেকটা অংশই ভাঙ্গছে। এই ভাঙ্গন ঠেকাতে করোনা পরিস্থিতির আগেই মন্ত্রনালয়ে প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। হিজলা উপজেলার বাউসিয়া, পুরাতন হিজলা নিয়ে ২টি পয়েন্ট আড়াই কি:মি এবং হরিনাথপুরে ২.২২ কি:মি: ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেহেন্দীগঞ্জের শ্রীপুর এলাকার ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রনেও একটি প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। চলতি বর্ষায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ৩ কোটি টাকার বেশি এমার্জেন্সি বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। এমার্জেন্সি বরাদ্ধের তালিকায় হিজলার বাউসিয়া, হরিনাথপুর, মেহেন্দীগঞ্জের দরিচর খাজুরিয়া, সাদেকপুর, রুকন্দি এলাকা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *