১০ টাকার চাল এক লাফে এখন ৩০ টাকায়

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বিশেষ ওএমএস(ওপেন মার্কেট সেল) এর আওতায় ১০ টাকা করে চাল বিক্রি কার্জক্রম বাতিল করেছে সরকার। এর বিপরীতে এ সপ্তাহেই কেবল মহানগরীতে ক্ষুদ্র পরিসরে সাধারন ওএমএস কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ। ওএমএস এর এই একই চালের দাম এক লাফে বেড়ে প্রতি কেজি ৩০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। হঠাৎ একই চালের দাম তিন গুন বাড়ায় তা উত্তোলনে অনিহা প্রকাশ করেছেন বরিশালের ডিলাররা। এদিকে ১০ টাকা করে চাল বিক্রি কার্যক্রম বাতিল হওয়ায় করোনাকালে চরম বিপাকে পড়েছেন বরিশালের দেড় লাখ দরিদ্র।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিশেষ ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় বিভাগের প্রায় দেড় লাখ কার্ডধারী দরিদ্র মানুষ মাত্র ১০টাকায় চাল পেয়ে আসছিলেন। এর মধ্যে বরিশাল নগরীসহ জেলায় কার্ডধারীর সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার। বরিশাল জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ শাখার অডিটর জহির উদ্দিন বলেন, সরকার বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম বাতিল করে ১ জুলাই থেকে সাধারন ওএমএস কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় শুধুমাত্র নগরীতে দৈনিক মাত্র ৭জন ডিলারকে ১টন করে চাল দেয়া হবে। কেজি প্রতি ৩০টাকা দরে এই চাল ডিলারদের দোকান থেকে যে কেউ কিনতে পারবেন।

তিনি বলেন, তখন নগরীসহ জেলায় ৩০ হাজার লোককে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হত। মাসে বরাদ্ধ ছিল ৬০০ টন। এখন নগরীতে ৭জন ডিলার চাল পাবেন। সাধারন ওএমএস এর আওতায় এই নগরীতে মাসে ২শ টন চালও বরাদ্ধ দেয়া হবে না। চলতি সপ্তাহেই ৩০ টাকা দরে এই চাল বিক্রি হবে।
বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাজুল ইসলাম বলেন, বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম বাতিল করেছে সরকার। নগরীর ৭টি পয়েন্টে এখন ৭জন ডিলার ওই চালই বিক্রি করবেন। যার দাম এখন কেজি প্রতি ৩০ টাকা। তিনি বলেন, সরকার ওএমএস কার্যক্রম সংকোচিত করার সিদ্ধান্ত। কিন্তু ডিলারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা বলেছে ৩০টাকায় এই চাল সাধারন মানুষ কিনবে কিনা তাতে তারা সন্দিহান। তিনি আরও বলেন, বিশেষ ওএমএস এ নগরীতে ৬০০ মে: টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল। এখন মাসে দেড়শ মে: টনের বেশি নয়।

নগরীর একাধিক ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১০ টাকার চাল এখন ৩০টাকায় কেন সাধারন মানুষ কিনবে। এই চাল তুললে তারা বিক্রি করতে পারবেন না। তাছাড়া সাধারন মানুষের তোপের মুখেও পড়তে হবে। নগরীর একাধিক দরিদ্র বলেন, গত ৩ মাস ধরে ১০টাকা কেজিতে মাসে ২০ কেজি চাল কিনতে পাড়তেন। কিন্তু এখন সেই চালই ৩০ টাকায় কিনতে হবে। এই করোনায় কিভাবে চড়া দামে চাল কিনবেন বলে হতদরিদ্ররা জানান।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফারুক হোসেন বলেন, করোনাকালে বিশেষ ভাবে ১০ টাকা করে চাল বিক্রি করা হয়েছে। যার বরাদ্ধ জুন পর্যন্ত ছিল। এখন সাধারন ওএমএস চলবে কেবল নগরীতে। ওই চাল প্রতি কেজি বিক্রি করা হবে ৩০ টাকা দরে। এর আগে জেলায় জেলায়ও এই চাল ১০টাকায় বিক্রি হত। গত ৩ মাসে বরিশাল বিভাগের ১ লাখ ৬৮ হাজার কার্ডধারী মানুষ ১০ টাকা কেজিতে চাল ক্রয় করতে পেড়েছেন। বেশি দামে ডিলারদের চাল নিতে অনিহা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগরীর ২০ জন ডিলারকে ক্রমানুযায়ী চার বরাদ্ধ দেয়া হবে। দৈনিক ৭জন ডিলার এই চাল পাবেন। তাদের চাল নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সরকারী এই সিদ্ধান্ত তারা কেবল বাস্তবায়ন করছেন।

এব্যাপারে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর বরিশালের সাধারন সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, হঠাৎ করে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে স্বল্প মুল্যে চাল কেনার সহায়তা না পেয়ে সাধারন মানুষ বিপদগামী হয়ে পড়বেন। বাজারেও এখন চালের দাম বেশি। তার মধ্যে ওএমএস এর একই চাল ১০ টাকার স্থলে ৩০টাকা দরে বিক্রি করা আ্ত্নঘাতী সিদ্ধান্ত। স্বল্পমুলে চাল পাওয়া বিভাগের এই দেড় লাখ মানুষ এখন কোথায় যাবেন। করোনাকালীন আন্দোলনও করতে পারবেন না। তাছাড়া বাজারেই তো এখন ৩৫-৪০ টাকাকায় চাল পাওয়া যায়। ডিলারই বা কেন বাড়তি দামে চাল সরবরাহ করবেন। তিনি বলেন, ক্যাব বিষয়টি অতিস্বত্ত¡র জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে ওএমএস চালের দাম কমানোর দাবী জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *