সৈয়দ জুয়েল: স্বাধীন দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য কখনোই ভাল ছিলনা। পুষ্টিহীনতায় রুগ্ন শরীরের হাড় দু খানা দেখার বাকী ছিল,এবার করোনায় সে ক্যালসিয়ামহীন হাড়ও দেখলো সাধারন জনতা। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দূর্দশা তৈরীর কুশীলবদের স্বাস্থ্য কিন্তু শাহেদদের মতই ফুলে ফেঁপে একাকার। এক শ্রেনীর চিকিৎসকরাও সেবা বাদ দিয়ে ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে রোগী দেখে সরকারী বেতন ভাতাও নিচ্ছেন,আবার প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো থেকেও পকেট ভরে স্থুলকার হয়ে যাচ্ছেন।
দেখার যেন কেউ নেই। করোনায় অধিকাংশ হাসপাতালগুলো থেকে করোনা রোগী ছাড়াও অন্যান্য রোগীরা ডাক্তারদের সেবাদানে অনীহার কারনে ফিরে যেতে হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ততই বাড়ছে। বেসরকারী ক্লিনিকগুলো সেবা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে না হয় মেনে নেয়া যায়,কিন্তু জনগনের টাকায় যে সব সরকারী ডাক্তারদের বেতন দেয়া হয়,তাদের এই অপারগতা সত্যিই বিস্ময়কর। দেশের সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী,পুলিশ, যতগুলিই দেশ রক্ষা বাহিনী আছে- যে কোন যুদ্ধে তাদের জীবনের মায়া ত্যাগ করেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করে। এ থেকে তারা পিছু হটেনা। তাহলে ডাক্তারদের ভিতর বড় একটা অংশ এই করোনায় সেবা দিতে কেন উৎসাহ দেখাবেনা।
হাতে গোনা অল্প কিছু উন্নত মানবিকাতা সম্পন্ন ডাক্তার দিয়েই খুঁড়িয়ে চলছে এ করোনাকালীন সেবা। বেশ কিছু চিকিৎসক প্রানও দিয়েছেন। এরাই হলো প্রকৃত দেশপ্রেমিক জনগনের চিকিৎসক। করোনার মৃত্যুর হার কিন্তু ততটা নয়,তারপরও চিকিৎসকদের হাত গুটিয়ে বসে থাকা এ পেশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আহত হচ্ছে সাধারনের হ্রদয়। উন্নত দেশগুলোতে সরকারী ডাক্তারদের ঘরে থাকার কোন সুযোগ নেই। অনেকে ইচ্ছায়,আবার অনেকে বাধ্য হয়েই চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশেও কেন এই নিয়ম চালু করা যাচ্ছেনা। জনগনের মৌলিক অধিকারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে আপোষ করার কোন সুযোগ নেই।
দরকার হলে যে সব চিকিৎসক দূর্যোগে সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করবে,তাদের চাকুরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠিয়ে,বা চাকুরীচ্যুত করে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি ২০০০ ও ২০১১ সালে যে দুটি স্বাস্থ্যনীতি ঘোষনা করা হয়েছিলো,তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবেই ঝুলে আছে সে স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়নে,এরকমই ধারনা অভিজ্ঞজনদের। তাই স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী হয়ে পরেছে।
ব্যাঙের ছানার মত যত্রতত্র গড়ে ওঠছে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে সরকারী চিকিৎসকরা অধিকাংশ সময়ই ব্যায় করেন। সরকারী বেতনাদি সুরক্ষায় মাঝে মাঝে নামকাওয়াস্তে ঢু মারেন চিকিৎসকদের বড় এক অংশ। স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন সব বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা নয়,তেমনি করোনার এ যুদ্ধে সব চিকিৎসকই করোনা যোদ্ধা নয়। সব ডাক্তারই যদি করোনা যোদ্ধা হত,তাহলে দেশের চিকিৎসা সেবার চেহারাটা অনেকটাই পাল্টে যেত। বাংলাদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রীর জন্য যারা ইউরোপ আমেরিকায় সরকারী অর্থে অথবা ব্যাক্তিগত অর্থে এসে থাকেন,তারা কিন্তু দেশীয় ঘরানার চিকিৎসকদের মত সেবা দিয়ে থাকেননা।
অনেক বছর এসব দেশে থেকে দেশে গিয়ে তারা যখন সেবা দেন,তখন এখানের জনসেবার কথা অধিকাংশ চিকিৎসকই ভূলে যান।চিকিৎসা সেবা যদি ব্যাবসায়িক ধান্ধা হয়ে থাকে,তাহলে সেটা আর সেবা থাকেনা। জনগনের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হলে এ ধরনের ব্যাবসায়িক চিকিৎসকদের বিষয়ে কঠোর হতে হবে সরকারকে। চিকিৎসকদের অবহেলায় কারো মৃত্যুও হত্যার সামিল। তাই একটি শুদ্ধি অভিযান জরুরী হয়ে পরেছে। যে সন্তানটি চিকিৎসা না পেয়ে তার বাবা,মার মৃত্যুর কোলে ঢলে পরা দেখে। আবার-যে বাবা,মা তার সন্তানদেরও এরকম করুন মৃত্যু দেখেন,শুধু তারাই অনুধাবন করেন রক্তের বাঁধন হারিয়ে যাওয়ার তীব্র যন্ত্রনা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কোন করুনা নয়।
এটা নাগরিকের অধিকার। এ অধিকার রক্ষায় সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে পুরাতন চিকিৎসা ব্যাবস্থা ভেঙে নতুন করে সাজাতে হবে। না হয় ভঙ্গুর স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যার্থতার দায়ভারে সরকারের বাকী সফলতাগুলো ঢাকা পরে যাবে।