সরকারী বরিশাল কলেজ: নাম পরিবর্তন চায় না বড় দলগুলো

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: যুগ যুগ ধরে বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সম্পর্ক বিপরীতমুখী। জাতীয়পার্টিও হেটেছে প্রতিকূলে। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভুমিকা বরাবরই সব দলের চিন্তা-চেতনা থেকে ভিন্ন। কিন্তু বৃহত্তম এই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ বরিশালে হঠাৎ একটি ইস্যুতে একাট্টা হয়ে গেছেন। তা হলো সরকারী বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখা। এ দাবীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজপথ গরম করে রেখেছে। তাদের সাথে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরও কর্মসুচীতে দেখা গেছে। সবশেষ চরমোনাই পীরের দল শনিবার কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবীতে নগরীতে মানববন্ধন করেছে। এ অবস্থায় কলেজটির নাম ‘অশ্বীনী কুমার দত্ত’ রাখার জন্য শিক্ষামন্ত্রনালয়ে পাঠানো জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন অনেকাংশে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৩ মে ৪০ হাজার ২৯৫ টাকায় অশ্বীনী কুমারের বাড়ির জমি অধিগ্রহন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তৎকালীন জেলাপ্রশাসক অধিগ্রহন অনুযায়ী ১.৪৭৬ একর জমি বরিশাল নাইট কলেজ কে প্রদান করেন। ১৯৮৬ সালে সরকারী বরিশাল কলেজ নামে প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরন করা হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর নাসির উদ্দিন বলেছেন, নাম পরির্বতনের প্রস্তাব জেলাপ্রশাসক মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে কোন মতামত নেয়া হয়নি।
গত ফেব্রæয়ারীতে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়ার রহমান কলেজটির নাম পরিবর্তন করে অশ্বীনী কুমার দত্তের নামে নামকরনের জন্য শিক্ষামন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠান। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রনালয় শিক্ষাবোর্ডকে গত ২৯ জুন এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়। বিষয়টি চলতি মাসে চাউড় হয়ে গেলে নগরীতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

গত ১৫ জুলাই কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখতে আকস্মিকই নগরীর সদর রোডে মানববন্ধন করে সাবেক ছাত্রনেতাদের ব্যানারে আ’লীগ নেতাকর্মীরা। তাতে একাতœতা প্রকাশ করে ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরা। একই দাবীতে ক’দিন ধরে গনসাক্ষর নিচ্ছে সাবেক ছাত্রনেতারা। শনিবার চরমোনাই পীরের দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবীতে মানববন্ধন করেছে। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক কে এম শরিয়তুল্লাহ বলেন, বরিশালের মানুষ চায় না ঐতিহ্যবাহী সরকারী বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন হোক।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বরিশালবাসীর আবেগ অটুট রাখতে মাঠে নেমেছে। এটি বরিশালবাসীর ঐতিহ্য এবং অস্তিত্বের বিষয়। এতো বছর পর কোন মহলের স্বরযন্ত্রে কলেজটির নাম পরিবর্তন হলে লাগাতার আন্দোলন কর্মসুচী ঘোষনা করা হবে।

অপরদিকে সরকারী বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরনের দাবী জানিয়ে আন্দোলনে নেমেছে নগরীর সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বাম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। দাবী বাস্তবায়নে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যালের নেতৃত্বে সাংবাদিক সম্মেলন এবং প্রধানমন্ত্রী ও জেলাপ্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
যদিও সরকারী বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখতে ধীরে ধীরে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো।

বরিশাল কলেজের সাবেক ভিপি ও মহানগর আ’লীগের সভাপতি এ্যাড. এ কে এম জাহাঙ্গির বলেন, দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ করে কেন কলেজটির নাম পরিবর্তনের দাবী উঠলো। ১৯৮৬ সালে যখন কলেজটি সরকারী হলো তখন কেন এই দাবী উঠলো না। বরিশাল জেলা প্রশাসক গোপনে কাদের নিয়ে কলেজটির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠালো। এই প্রস্তাব পাঠাতে হলে ডিসি যে রেজ্যুলেশন করেছেন তাতে কারা ছিল বরিশালবাসী জানতে চায়। তিনি দাবী করেন, সরকারী বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত থাকতে হবে।

বিএনপির যুগ্নর মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, তিনি বরিশাল হার্ট ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। অনেকেই এটিকে জিয়াউর রহমানের নামে করার প্রস্তাব করলেও প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করেননি। বরিশাল বিভাগীয় শহর। সরকারী বরিশাল কলেজ বরিশালের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত। এই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রও ছিলেন তিনি। এটি বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্য। নতুন করে এর নামে পরিবর্তন করা উচিৎ হবে না। মানুষ এটি ভালভাবে গ্রহন করবে না বলে জানান তিনি।

সরকারী বরিশাল কলেজের সাবেক ছাত্র ও মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, তিনি ৮০’র দশকে এই কলেজের একাধিকবারের ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। ৮৬’ তে আন্দোলনের মুখে কলেজটি সরকারী হল। বরিশালবাসী এক হয়ে ওই আন্দোলন করেছে। তখন কলেজটির নাম পরিবর্তন নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু এতো বছর পর একটি স্বার্থান্বাসী মহল কলেজের অস্তিত্বে নাড়া দিতে চায়। যারা এটি করতে চায় তারা কি কলেজের সাথে কোনভাবে জড়িত! এই কলেজের সৃস্টি ও সৃজনে তাদের কি কোন ভুমিকা আছে। বিভাগীয় শহরের নামে কলেজটির নাম কেন পরিবর্তন করতে হবে? তিনি বলেন, একজন সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে বলতে চাই- বরিশালবাসী কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখতে আজ ঐক্যবদ্ধ। এর নেপথ্যে যারা স্বরযন্ত্র করছে তাদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবে সরকারী বরিশাল কলেজের সাবেক ও বর্তমান ছাত্ররা। অচিরেই এই স্বরযন্ত্রকারীদের নামও জাতির কাছে উন্মোচন করা হবে বলে জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, ৮০’র দশকে এরশাদের আমলে কলেজটি সরকারী করনের দাবীতে আন্দোলন করে বরিশালবাসী। এর প্রেক্ষিতে ১৯৮৬ সালে এরশাদ বরিশালে এসে বরিশাল কলেজকে সরকারী ঘোষনা করেন। তিনি বলেন, তখন এই কলেজের নাম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু এতো বছর পর কারা, কোন স্বার্থে এই কলেজটির নাম পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন তা জাতি জানতে চায়। তারা কি কলেজটির উন্নয়নের কথা কখনওই ভেবেছে? কলেজের নামকরনে অশ্বীনী কুমার দত্তের মত গুনী ব্যক্তিকে মুল্যয়ন করা হোক- জাপা তা মনে করে না।

ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশ’র মহানগর সভাপতি মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম বলেন, সরকারী বরিশাল কলেজের নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবীতে তার ছাত্র সংগঠন শনিবার নগরীতে মানববন্ধন করেছে। দেশটিকে যারা ভিনদেশী করার স্বপ্নœ দেখছে তারাই নাম পরিবর্তনের এই চক্রান্ত করছে। এটা বরিশালের অস্তিত্বের প্রশ্ন। এমন চক্রান্ত রুখতে অচিরেই তিনি গোলটেবিল বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এমস অজিয়র রহমান বলেন, সুধীসমাজের দাবীর প্রেক্ষিতে তিনি কলেজটির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। মন্ত্রনালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। এব্যপারে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারাম্যান মোহাম্মদ ইউনুস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রনালয়ে কোন প্রতিবেদন পাঠাবেন না। এর কারন হিসেবে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কথা অবহিত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *