বরিশালে চিকিৎসার নামে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতারনার ফাঁদ

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশালে চিকিৎসা সেবায় চরমভাবে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। জীবন বাঁচাতে রোগীরা অন্ধ বিশ^াসে ছুটছেন হাসপাতাল, ডাক্তার থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টি সেন্টার পর্যন্ত। কিন্তু নগরীতে সেবা প্রত্যাশীরা পদে পদে ঠকছেন। একদিকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে পাহাড় সমান পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপরদিকে সেই পরীক্ষায়ও অবিশ^াস্য প্রতারনা। এই নগরীর গজিয়ে ওঠা অসংখ্য ডায়গানস্টিক সেন্টারে রোগীদের পরীক্ষার রিপোর্ট দিচ্ছে ভুয়া চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান। আইনশৃংখলাবাহিনীর অভিযানে ধরাও পড়ছে এধরনের প্রতারক। স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্যমতে, নগরীতে নিবন্ধনকৃত অথচ অনুমোদনহীন ২৮টি ক্লিনিক ও ৮৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সংশ্লিস্টরা মনে করছেন, এসব অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে গড়ে ওঠা ভয়াবহ ফাঁদে বহুদিন ধরে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
রাজধানীতে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযানের পর বরিশালেও টনক নড়েঝে স্বাস্থ্যবিভাগের। নগরীর জর্ডান রোডে সেন্ট্রাল মেডিকেল সার্ভিসেস নামক একটি ডায়গণষ্টিক সেন্টার প্রতারনা করে আসছিল রোগীদের সাথে। বুধবার ভ্রাম্যমান সেখানে এক চিকিৎসকসহ ৩জনকে কারাদন্ড দেয়। বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মুবিনুল হক বলেন, খাদিজা নামক এক রোগীকে প্যাথলজি পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া হয়। ওই রিপোর্টে স্বাক্ষর ছিল গত ১৯ জুলাই মৃত্যুবরন করা ডা. গাজী আমিনুল্লাহ খানের। ডায়গণষ্টিক সেন্টারের সাইনবোর্ডে নাম লেখা রয়েছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সদ্য মৃত্যুবরন করা বরিশাল সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইমদাদ উল হকের নাম। এধরনের ডায়াগনস্টি সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান। গত শনিবারও নগরীতে মুন ডায়াগনস্টি সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীতে এমন অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে যেখানে নেই ডাক্তার, নেই টেকনিশিয়ান, নেই যন্ত্রপাতি। এগুলো কেবল দালাল নির্ভর চিকিৎসা সেন্টার। নগরীর সদর রোড, প্যারারা রোড, শেবাচিম হাসপাতালের সামনে, সদর হাসপাতালের সম্মুখ সহ বিভিন্ন অলিগলিতে দালালরা অখ্যাত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে মানুষকে নি:স্ব করছে বলে সুত্র জানায়। এমনকি অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ের তথ্যমতে, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধনকৃত ক্লিনিক-হাসপাতাল রয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে ১১টির কাগজপত্র বৈধ। বাকি ২৮টির অনুমোদন নেই। সিটি এলাকায় নিবন্ধনকৃত ১১৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ২৮টির। অনুমোদনহীন হচ্ছে ৮৮টি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে মানুষের সাথে প্রতারনা করা হচ্ছে। রোগী নিয়ে চলছে বানিজ্য। মানুষ সরল বিশ^াসে গিয়ে ঠকছে। ডাক্তার নেই, টেকনিশিয়ান নেই, অথচ চিকিৎসা সেন্টার দিয়ে বসেছে অনেকে। দালাল নির্ভর এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার নামে এই নগরীর এক শ্রেনীর প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছে ভয়াংকর ফাঁদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিভাগ কেন এতোদিনে এসব অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং করেনি সাধারন মানুষের মাঝে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ থেকে বলা যায়- স্বাস্থ্যবিভাগ পার্সেস্টিজ পাচ্ছে। সারাদেশে স্বাস্থ্য সেক্টরে হৈচৈ পড়ায় এখন বরিশালেও তাদের টনক নড়েছে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর বরিশালের সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে ডাকাতি চলছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে জরুরী ব্যবস্থা নিতে হবে।
এব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিবচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, বরিশালের হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করার জন্য গত সপ্তাহে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। নগরীতে নিবন্ধনের বাহিরে কতটা ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হলেও নবান না করার নেপথ্যে তাদের ডাক্তার-টেকনিশিয়ান আছে কিনা, মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতারিত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। ইতোমধ্যে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ল্যাব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াও শুরু হয়েছে বলে জানান পরিবচালক ডা. বাসুদেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *