সৈয়দ জুয়েল: দেহ ব্যাবসা যারা করেন, তাদেরও কিছু নীতি আদর্শ থাকে-নিজের শরীর বিকিয়ে দিয়ে, তার বিনিময়ে টাকা নেন। কিন্তু বরিশাল সহ বাংলাদেশের অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিয়ে – কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেহ ব্যাবসায়ীদের নামকেও কলংকিত করছেন।
ইদানিং বরিশালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অভিযান চালালে বেরিয়ে আসছে ভয়ংকর সব তথ্য। ১১৬ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভেতর ৮৮ টিরই কোন অনুমোদন নেই। মাত্র ২৮ টির অনুমোদন রয়েছে। প্রশ্ন হলো বছরের পর বছর এই ৮৮ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন ছাড়া প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে ব্যাবসা করে আসছে? শুধু বরিশালের নয়, সারা বাংলাদেশের ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর এই একই চিত্র। ডাক্তার নেই, টেকনিশিয়ান নেই, এভাবেই চলছে। অভিযোগ রয়েছে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে ব্যার্থ হচ্ছে।
বাংলাদেশে এমন পরিবারও আছেন- যাদের জায়গা জমি, এমনকি শেষ সম্বল ভিটে মাটি বিক্রি করেও অসুস্থ হলে সেবা নেন। সেবার প্রথম ধাপে পরীক্ষা করাতে এসেই প্রতারনার ফাঁদে ধরা পরেন রোগীরা। ভূল রিপোর্টের ফলাফলে ভূল ঔষধ সেবনে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। বেঁচে থাকার আশায় চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া এ সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান যে চালানো হয়না,তা নয়।
তবে সে অভিযানগুলোর অধিকাংশই আলোর মুখ দেখেনা, প্রভাবশালীদের ক্ষমতার কাছে প্রশাসন কেমন যেন অসহায় হয়ে পরে। স্বাস্থ্য বিভাগের ভগ্নদশার এ এক করুন চিত্র ফুটে উঠেছে দেশের অলিতে গলিতে। ব্যাঙের ছানার মত গজিয়ে উঠছে প্রাইভেট ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেবার নামে এসব কসাই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে আসার বিকল্প নেই।
একজন হত্যা মামলার আসামীকে যদি একটি হত্যার জন্য অথবা বহু মামলার আসামীকে যদি বন্দুক যুদ্ধে পরাজিত করা যায়, তাহলে প্রতিদিন যারা হাজার হাজার রোগীদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছেন, তাদের জন্য বন্দুক যুদ্ধ নয় কেন? সরকারের অনেক বন্দুক যুদ্ধই সাধারনের মনে প্রশান্তি নিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য যদি সরকারের নরম কথায় ভাল না হয়,তাহলে এই বিভাগের ধ্বংসের কুশীলবদের বন্দুক যুদ্ধে পরাস্ত করে এর স্বাস্থ্য ভাল করতে হবে বলে মত বিজ্ঞজনদের।
মৌলিক অধিকারের শক্তিশালী এই বিভাগটির শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকারের কঠিন এক সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায় কোটি কোটি ভুক্তভোগী রোগী সহ আপামর জনগন। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এ স্বাধীন দেশের সুনাম রক্ষায় এ সকল টাউট,বাটপার ক্লিনিক,ডায়াগনস্টিক ব্যাবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সহ- নতুন আইন করে স্বাস্তির মেয়াদ আরো বাড়ানো এখন সময়ের দাবী।
সবচেয়ে নাজুক এই স্বাস্থ্য বিভাগের ভগ্নদশার তকমা থেকে যদি বের না হওয়া যায়,তাহলে এই ব্যার্থতার পুরো দ্বায়ভার সরকারের। আমরা চাই সফল এক স্বাস্থ্য নীতির বাস্তবায়ন। কথা নয়,কাজেই যেন হয় স্বাস্থ্য বিভাগের আমূল পরিবর্তন। আমরা তাকিয়ে রইলাম-সেরকম এক সফল পরিবর্তন দেখার।