বিসিসি’র সর্বাধিক বড় বাজেট : বছর শেষে স্বপ্নভঙ্গ নগরবাসীর

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : গতবছর ৩১ জুলাই বিকালে জাকজমক অনুষ্ঠান করে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষনা করা হয়েছিল। নগরভবন সংলগ্ন ফজলুল হক এভিউনিউ চত্বরে উম্মুক্ত পরিবেশে বাজেট ঘোষনা করেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। বাজেটে টাকার অংক ছিল ৫৪৮ কোটি ১০ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪৩৭ টাকা। ছিল একাধিক মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। ২০০২ সালে বিসিসি গঠনের পর এত বড় অংকের বাজেট এবং ঘোষণায় এত বড় আয়োজন আগে কখনও হয়নি।
৩০ জুন অর্থ বছর শেষ হওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে নগরবাসীর। মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের একটিও আলোর মুখ দেখেনি। সম্পন্ন হয়নি বিগত অর্থবছরে শুরু হয়ে চলমান অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও। সংস্কারের অভাবে বরিশাল নগরীর ৮০ ভাগ সড়ক এখন যাববহন চলাচলের অনুপযোগী। রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে হওয়ার পথে। বাজেট বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলরা এ ব্যর্থতা ঢাকতে করোনার দোহাই দিয়েছেন।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের কতভাগ বাস্তবায়ন হলো এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরের কবে নাগাদ ঘোষণা হবে- এ বিষয়ে জানতে বিসিসির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার যোগাযোগ করা হলে কেউ সদুত্তর দেননি। তারা এ বিষয়ের কোন তথ্য দিতে কিম্বা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে বরাদ্ধ না পাওয়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান নির্ভর মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। তেমনি সম্পন্ন করা যায়নি বিগত অর্থ বছরে শুরু হওয়া প্রকল্পগুলো।
গত অর্থবছরে ৫৪৮ কোটি টাকার বাজেটে অনুদান নির্ভর উন্নয়ন ব্যয় ছিল ৪১৬ কোটি ২২ লাখ ৪৮ হাজার ১৪৪ টাকা। তারমধ্যে সড়ক ও ড্রেন নির্মান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গাড়ি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, নগরীর খালগুলো উদ্ধার করে সংরক্ষনের ৩টি পৃথক মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৫০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পগুলোর বিপরীতে একটিরও বরাদ্ধ মেলেনি বলে জানা গেছে।
এডিবি’র অর্থ বরাদ্দ পেলে বাস্তবায়ন করা যাবে এমন উন্নয়ন প্রকল্প ছিল ১০টি। মোট ব্যয় দেখানো হয়েছিল ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- আবদুর রব সেরনিয়াবাত বাস টার্মিনাল নির্মান, নতুন নগর ভবন নির্মান, নতুন পানির পাইপ লাইন স্থাপন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন, নগরীর গুরুত্বপূর্ন সড়কে ওভার ব্রীজ নির্মান, ৪টি ভাসমান পানি শোধনাগার স্থাপন, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও শহর রক্ষা বাঁধ নির্মান। যা আলোর মুখ দেখেনি সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে।
করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের আগের মেয়াদে শুরু হওয়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম, সদর রোড ৭ তলা সুপার মার্কেট, কাশীপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ট্রাক টার্মিনাল, নগরীর দুটি হরিজন পল্লীতে আবাসন ব্যবস্থাসহ অনেকগুলো চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে। তেমনি গত বাজেটে অনেকগুলো প্রস্তাবিত প্রকল্পও অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া শুরু করা যায়নি। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর কার্যালয় নির্মান, ঝাউতলা দ্বিতীয় গলিতে নিখিল সেনের বাড়ি সংলগ্ন পুকুরটি সৌন্দর্যকরন, নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন নির্মান ইত্যাদি।
গত অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন বিষয়ে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন। তবে নতুন বছরের (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজেট তৈরীর কাজ চলছে।
বিসিসির প্যানেল মেয়র (১) গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, গত অর্থবছরের বাজেট ছিল প্রকল্পভিত্তিক। যে সময় মন্ত্রাণালয় থেকে অর্থ বরাদ্ধ হয় তখনই দেশে করোনা দুর্যোগ শুরু হয়। এ কারনে অনেক কিছু শুরুই করা যায়নি। এতে আগামীতে ঘাটতি বাজেট হতে পারে। নতুন অর্থবছরে বাজেট পেশের খসড়া কাজ চলছে বলে তিনি জানান। নগরীর সড়কগুলোর বেহাল দশা প্রসঙ্গে প্যানেল মেয়র লিটু বলেন, করোনা দুযোর্গের পর বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সংস্কার করা যায়না বিধায় আগামী নভেম্বর পর্যন্ত নগরবাসীকে কস্ট পেতে হবে।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *