নাগরিক রিপোর্ট : করোনা সংকট শুরুর পর গত মার্চ থেকে বরিশাল নগরীতে অসহায়দের সহায়তা ও সেবায় নানামুখী মানবিক কর্মসূচী পালন করছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। নগরীর ফকির বাড়ি সড়কে বাসদ কার্যালয় সংলগ্ন কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের একটি অব্যবহৃত ভবন ব্যবহার করে এ কর্মযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন বাসদ। রোববার সকালে বাসদ কার্যালয়ে এক সংবাদিক সম্মেলন করে জেলা বাসদের সদস্য সচিব ডা. মানিষা চক্রবর্তী এ অভিযোগ করেন।
ডা. মনিষা বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত যুক্ত করার দাবীতে চলমান আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা তার প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। তারা নেপথ্যে থেকে বাসদ কার্যালয় উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে। বরিশাল সিটি কলেজের অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথকে সামনে রেখে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনিও একই বাড়ির অন্যতম ভাড়াটিয়া। তিনি বাসদের অস্থায়ী ক্যাম্প উচ্ছেদের জন্য কোতোয়ালী থানায় রোববার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ডা. মণীষা জানান, গত শুক্রবার রাতে বাসদ কার্যালয় এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া দেয়ার পর অধ্যক্ষ সুজিতের কার্যালয়ে সভা করেছেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্র্মী। উচ্ছেদের নামে যেকোন সময় বাসদ কার্যালয়ে হামলার আশংকা করছেন তিনি। একইদিন দুপুরে মুল বাড়িতে ঢোকার প্রধান ফটক ও একটি টয়লেট আটকে দেয়া এবং বাসদ নেতাকর্মীদের হুমকি-ধামকি দিয়েছেন অধ্যক্ষ সুজিত।
নগরীর ফকির বাড়ি সড়কে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম হাসান ইমাম চৌধুরীর বাড়ির দ্বিতল ভবনের একটি কক্ষে বাসদ কার্যালয়। ভবনের বাকি অংশে অধ্যক্ষ সুজিত পরিচালিত মাতৃছায়া কিন্ডারগার্ডেন। মূল ভবনের পেছনের দিকে কিছু খোলা জায়গা ও তিন কক্ষের একটি আধাপাকা ভবন। জানা গেছে, মরহুম হাসান ইমাম চৌধুরীর পরিবার ঢাকাসহ বিদেশে অবস্থান করায় মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসাবে বাড়ির দেখভাল করার দায়িত্ব অধ্যক্ষ সুজিতের।
জেলা বাসদের আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন জানান, আধাপাকা ভবনটি কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষার্থীদের কোচিং করার জন্য ভাড়া দেয়া ছিল। করোনা সংকটে মার্চে কোচিং বন্ধ হলে বাসদ অসহায়দের ত্রানসহ বিভিন্ন মানবিক সহায়তা কর্মসূচীতে অস্থায়ী ক্যাম্প হিসাবে ভবনটি ব্যবহার শুরু করে। অধ্যক্ষ সুজিতের মৌখিক অনুমতি ছিল তাতে। একমাস আগে অধ্যক্ষ সুজিত তাদের ভবনটি ভাড়া নেয়ার প্রস্তাব দিয়ে এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসিক ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা দাবী করেন। এনিয়ে তার সঙ্গে কথা চলার মধ্যেই জানতে পারেন অধ্যক্ষ সুজিতের সঙ্গে মুল মালিক পরিবারের ভাড়াটিয়া চুক্তি শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রকৌশলী রুম্মন জানান, এমন পরিস্থিতিতে তারা মুল মালিক পরিবারের থেকে ভাড়া নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ সুজিত তাদের উচ্ছেদে ষড়যন্ত্রে নামেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ সুজিত বলেন, বাসদ ওই ভবনে করোনা রোগীদের এনে চিকিৎসা দেয়, রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয় সেখানে। এ কারনে স্থানীয় লোকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামীলীগ নেতা গাজী আক্তারুজ্জামান হিরুর মাধ্যমে চাপ দিয়েছেন বাসদের কার্যক্রম সরিয়ে নেয়ার জন্য। বাসদের সঙ্গে ভাড়াটিয়া চুক্তি করার উদ্যেগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ সুজিত বলেন, তিনি মুল মালিকের সঙ্গে চুক্তি করিয়ে দিতে উদ্যেগ নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তার কার্যালয়ে কতিপয় ছাত্রলীগ নেতাদের আগমনের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সুজিত বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব খান তার কক্ষে এসেছিলেন অন্য একটি কাজে। এসময় বাইরে কেউ ছিল কি-না তা তার জানা নেই।##
২০২০-০৭-২৬