জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: টানা চারদিন যাবত বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পাশাপাশি মাঝারী ও ভারি বর্ষনও হচ্ছে মাঝে মাঝে। আর এতেই আরেক দফা জলাবদ্ধতায় নাকাল বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। গত মাসে দুই দফায় নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবেছিল নগরবাসী। এর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতায় আরেক দফায় দূর্ভোগে পড়তে হলো তাদের। বরিশাল সিটি করপোরেশন দাবী করেছে, জলাবদ্ধতা দুর করতে নগরীর খালগুলোর ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু বর্ষায় খালের আবর্জনা পরিস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে শংকিত নগরবাসী।


নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহমান খালগুলোর প্রায় ভরাট এবং যথাযথ রক্ষানাবেক্ষনের অভাবে ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহ প্রায় গভীরতা কমে যাওয়ায় এ জলবদ্ধতার সৃস্টি বলে দাবী করেছেন সচেতন নগরবাসী।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. মাসুদুর রহমানের দেয়া তথ্যমতে, গত রোববার বিকাল ৩টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ৩টা পর্যন্ত ২৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বরিশাল নগরীতে। এসময়ের মধ্যে কয়েকবার ভারি বর্ষনও হয়েছে। গতকাল চতুর্থ দিনের মতো বরিশালে সূর্যের কিরন দেখা যায়নি। থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল।


নগরীর একাধিক বাসিন্দার মতে, যেহেতু একটানা ভারি বর্ষন হয়নি, তাই নগরীতে দীর্ঘস্থায়ী জলবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। তারপরও নগরীর কয়েকটি এলাকায় ৪ দিনেরও বেশী স্থায়ী জলবদ্ধতা চলছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরমে।


নগরীর গুরুত্বপূর্ন সড়কগুলোর একটি বটতলা চৌরাস্তা থেকে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে চৌরাস্তা পর্যন্ত টু ওয়ে সড়কটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে সড়টির দক্ষিণপার্শ্ব পুরোটায় পানির নিচে। ওই এলাকার মুদী দোকানী আ: রাজ্জাক জানান, গত চারদিন যাবত সড়কটির এ অবস্থা। ওই সড়ক সংলগ্ন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমির কুটিরসহ প্রায় সবগুলো অলিগলি ও বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন খান অসহায়ত্বের সঙ্গে বলেন, ‘আমি নিজেও জলাবদ্ধতার শিকার। আমার বসতবাড়ির চারদিকে পানি’। তিনি বলেন, এ এলাকার পানি নেমে যাওয়ার একমাত্র উৎস্য চৌমাথা খালটি ভরাট হয়ে গেছে। ড্রেন নির্মিত হয়েছে অপরিকল্পিভাবে। তাছাড়া বরিশাল সিটির কাউন্সিলরদের কার্যকর কোন ক্ষমতা নেই। তারা সকলে অসহায়।


খোঁজ নিয়ে জানা যায় নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগরের সড়ক ও সংলগ্ন বসতবাড়িগুলো গত ৪দিন যাবত পানিতে ডুবে আছে। পলাশপুর, ভাটিখানা ও আমানতগঞ্জ এলাকারও একই অবস্থা।
জানতে চাইলে, বরিশাল নদী খাল বাচাঁও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরীর ভেতরের খালগুলো দখল ও ভরাটে বিলুপ্ত হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশণ সম্প্রতি কিছু খালের ময়লা অপসারন শুরু করেছে। শিবলুর দাবী, এতে অর্থের অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হবেনা। নগরীর জলাবদ্ধতা দুরের স্থায়ী সমাধান করতে হলে শুকনো মৌসুমে খাল খনন করে গভীর করতে হবে।


এব্যপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, নগরীর সবগুলো বড় ড্রেনের সংযোগ খালগুলোর সঙ্গে। ড্রেনের মুখ ময়লায় আটকে যাওয়ায় নগরীর কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি নামছেনা। পানি অপসারনের জন্য ড্রেনের সংযোগ মুখ ও খালগুলো পরিচ্ছন্ন করার কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে জেল খালের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *