নাগরিক রিপোর্ট: জীবনের দীর্ঘ সময়ে ছাত্র রাজনীতি করেছেন তিনি। তৃনমুল থেকে উঠে আসা আ’লীগের পোড় খাওয়া পঞ্চাশোর্ধ এই নেতার এখন কোন পদ নেই। তার মত অসংখ্য ত্যাগী নেতা পরিচয়বিহীন ঘুরছেন বরিশালে। অবশ্য গত ৯ মাসেও মহানগর আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি হয়নি। কেবল সভাপতি ও সম্পাদক দিয়ে চলা নগর আ’লীগ অনেকাংশে থমকে আছে। গুঞ্জন রয়েছে পূর্নাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতরা ঠাঁই পেতে লবিং চালাচ্ছে। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে তৃনমূল আ’লীগ। এদিকে কেন্দ্রীয় আ’লীগ চলতি মাসেই সকল জেলা, মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি উপস্থাপনের তাগিদ দিলেও বরিশালে তা বাস্তবায়ন সংশয় দেখা দিয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সকল জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। এসময় তিনি উপজেলা, ইউনিয়ন সম্মেলনের তাগিদও দেন। কিন্তু বরিশাল জেলা ও মহানগর আ’লীগে তা বাস্তবায়ন নিয়ে মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মহানগর আ’লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন দলের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক নগর সভাপতি হিসেবে এ কে এম জাহাঙ্গিরের ও সাধারন সম্পাদক হিসেবে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নাম ঘোষনা দেন। এর পর থেকে ওই কমিটি আর পূর্নাঙ্গ হয়নি। যেকারনে দলের পোড় খাওয়া অনেক নেতা পূর্নাঙ্গ কমিটিতে ঠাই পেতে মুখিয়ে আছেন । কিন্তু দলীয় পরিচয় সৃস্টি না হওয়ায় হতাশ অনেক ত্যাগী নেতা।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি এ্যাড. আফজালুল করিম বলেন, ৭১ সদস্য বিশিস্ট নগর কমিটি করার কথা রয়েছে। এটির কি অবস্থা তা কেবল সভাপতি ও সম্পাদক বলতে পারেন। তিনি বলেন, ‘কমিটিতে রাখলে আছি, না রাখলে নাই।’
মহানগর আ’লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, তিনি এখন আর কমিটির দায়িত্বে নেই। এটি কেবলমাত্র সভাপতি, সম্পাদকই বলতে পারেন। তারা হয়তো কমিটি পূর্নাঙ্গ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে আলোচনা করে কেন্দ্রে উপস্থাপন করবেন।
নগর আ’লীগের সাবেক এক সদস্য বলেন, তারা কাউকে দলীয় পরিচয় দিতে পারেন না। কারন পদ নেই, পাবেন কিনা তাও অনিশ্চিত। পূর্নাঙ্গ কমিটিতে কারা থাকছেন তাও জানেন না। কেন না এটি দলিয় ফোরামে আলোচনার সম্ভাবনা ক্ষীন। তিনি বলেন, গুঞ্জন রয়েছে, পূর্নাঙ্গ কমিটিতে কতিপয় বিতর্কিত ব্যক্তি পদ পেতে যাচ্ছেন। এমনটা হলে অনেক ত্যাগী নেতা নগর আ’লীগ থেকে ছিটকে পরবেন বলে তিনি আশংকা করেন।
এব্যপারে বরিশাল মহানগর আ’লীগের সভাপতিক এ্যাড. এ কে এম জাহাঙ্গিরকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মহানগর সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সাথেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এদিকে ২০১৬ সালের জুনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে সভাপতি ও এ্যাড: তালুকদার মো: ইউনুসকে সাধারন সম্পাদক রেখে বরিশাল জেলা আ’লীগের ৭১ সদস্য বিশিস্ট কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। সবশেষ গত বছরের ৮ ডিসেম্বর জেলা আ’লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। জেলার ৪টি উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনও অনিশ্চিত। যে কটিতে সম্মেলন হয়েছে তাও পূর্নাঙ্গ হয়নি। যেকারনে তৃনমুল আ’লীগ অনেকাংশে স্থবির হয়ে পড়েছে বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। ত্যাগী নেতারা দলে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন।
হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম মিলন বলেন, চলতি বছরের মার্চে তাদের উপজেলায় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এরপর আর এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জেলা থেকে এ বিষয়ে কোন তাগিদ দেননি বলে তিনি জানান। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দীর্ঘ বছর নেতৃত্ব সৃস্টি না হওয়ায় এখানে দলের চেইন ইন কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে।
এব্যপারে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মো: ইউনুস বলেন, জেলার নেতৃত্ব আগে যেমন ছিল তেমনটাই আছে। গত বছরের ডিসেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা ওই সময়ে স্থগিত করা হয়েছিল। যেকারনে অনেগুলো উপজেলা কমিটিও করা হয়নি। এরপর প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবে আর এ নিয়ে আগানো যায়নি। জেলা আ’লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সহধর্মীনি গত ৭ জুন ইন্তেকাল করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র তাগিদ দিলেও হাসানাত ভাই কে ছাড়া এই মুহুর্তে জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কিছুই করা যাচ্ছে না।