মেঘনায় অবৈধ মাছঘাটে ক্ষমতাসীন দলের কোটি টাকার বানিজ্য

Spread the love

নাগরিক রিপোট : জনৈতিক হায়েনার কবলে পড়েছে বরিশাল জেলা সংলগ্ন ইলিশের অভায়শ্রম মেঘনা। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা মেঘনার তীরে অনুমোদনহীন শত শত মাছঘাট স্থাপন করে মৎস্য নির্ভর সকল ব্যবসা বানিজ্য নিয়ন্ত্রন করছেন। বৈধ-অবৈধ সবধরনের মৎস্য নিধন করে এক মৌসুমেই লাখপতি হচ্ছেন মেঘনা তীরের প্রভাবশালী মাছঘাট মালিকরা। ২০০১ সালে তৎকালীন চার দলীয় জোট আমলে চালু হওয়া এ রেওয়াজে এখনও চলছে মেঘনা তীরের জনপদে। সম্প্রতি হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশাল মেঘনার ২২ কিলোমিটার বয়ে গেছে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার পাশ দিয়ে। এটি ইলিশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম। প্রতিদিন হাজার হাজার জেলে ইলিশ শিকার করে মেঘনায়। চিংড়ির রেনু ধরা নিষিদ্ধ হলেও বছরের চৈত্র-বৈশাখ মাসে রেনু নিধনের ধুম পড়ে সেখানে। শুধুমাত্র ইলিশ ও চিংড়ির রেনুতে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য হয় মেঘনা তীরের জনপদে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ২০০১ সালের পর থেকে দুই উপজেলার মেঘনার তীরে গড়ে উঠেছে শত শত মাছঘাট। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকেন সেই দলের স্থানীয় নেতারা হন ওই মাছঘাটের মালিক।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির যুগ্ন মহাসচিব ও হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, নদীর তীরের প্রতিটি মাছঘাট হচ্ছে একটি করে ‘জেলে শোষণের ঘর’। এগুলোর সরকারি অনুমোদন নেই। দাদন বাবদ লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন জেলেদের জিম্মি করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের সিন্ডিকেট করা মূল্যে জেলেরা সেখানে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হন। বিক্রিত টাকা থেকে জেলেদের কাছ থেকে ১০ ভাগ হারে কমিশন রাখেন মাছঘাট মালিক। ফলে এক মৌসুমেই মাছঘাট মালিকরা লাখ লাখ টাকা মুনাফা করছেন। ইকবাল মাতুব্বর বলেন, প্রশাসন ম্যানেজ করে মেঘনায় আহোরন নিষিদ্ধ জাটকা (১০ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) ও চিংড়ির রেনু পোনা নিধনেও জেলেদের বাধ্য করেন ওই অবৈধ মাছঘাট মালিকরা।
জানা গেছে, মৎস্য নির্ভর কোটি কোটি টাকার ব্যানিজ্য নিয়ন্ত্রনে রাখতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন স্থানীয় নেতারাই হন মেঘনার শাসক। অল্প সময়ের মধ্যে অর্থে-বিত্তে শক্তিশালী হয়ে তারাই হন দ্ইু উপজেলায় বড় দুটি দলের চালিকাশক্তি। মেঘনা তীরের জনপদে জনপ্রতিনিধিও হন তারা। জলদস্যু থেকে জনপ্রতিনিধি ও বড় রাজনৈতিক দলের উপজেলার প্রভাবশালী নেতা হওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে এই দুই উপজেলায়।
ওই এলাকায় মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯ সাল থেকে দুই উপজেলার মেঘনা নিয়ন্ত্রন আওয়ামীলীগ নেতাদের হাতে। নিয়ন্ত্রন সুরক্ষিত রাখতে স্থানীয় নেতাদের জোনভিত্তিক এলাকা ভাগ করে দিয়েছেন সেখনাকার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি।
সুত্র মতে, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া ইউনিয়নের সুলতানী গ্রাম থেকে হাসানপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনার নিয়ন্ত্রক ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মিঠু চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক ইয়সিন রাজু। হাসানপুর থেকে হিজলার ধুলখোলা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করেন ধুলখোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কালাম বেপারী। মেঘনার পূর্বপ্রান্ত গোবিন্দপুর এলাকার নিয়ন্ত্রক স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সামসু কাজী, ইউপি মেম্বর জয়নাল ও কৃঞ্চা। হিজলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধানর সম্পাদক ও হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মিলনের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ওই উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার মেঘনার বড় অংশের। ওই উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন মেঘনা নিয়ন্ত্রন করছেন ইউপি চেয়ারম্যান লতিফ খান ও সাবেক চেয়ারম্যান তৌফিক হোসেন।
এর আগে চারদলীয় জোট শাসনমালে মেঘনার নিয়ন্ত্রক ছিলেন ধুলখোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মকবুল দপ্তরী, হিজলা উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গাফফার তালুকদার, সাবেক সাধারন সম্পাদক মেজবাহউদ্দিন চৌধুরী অপু, মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফয়সাল চৌধুরী, তৎকালীন বিএনপি দলীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত আব্দুল হাই হিরু চৌধূরী ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি মিল্টন চৌধুরী।
এ প্রসঙ্গে উলানিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক মিঠু চৌধুরী বলেন, মেঘনার তীরে যার জমি আছে তিনিই মাছঘাট করতে পারেন। অথবা খাজনা পরিশোধের বিনিময়ে অন্যের জমিতেও মাছঘাট হয়। মাছঘাট মালিকরা দাদন হিসাবে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ১০ ভাগ হারে কমিশন নেন। এ ব্যবসায় সরকারের কোন অনুমোদন লাগেনা। তবে রাজনৈতিকভাবে মেঘনা নিয়ন্ত্রনের অভিযোগ অস্বীকার করে মিঠু চৌধুরী বলেন, এখনও সেখানে বিএনপি নেতাদের মাছঘাট আছে ও তারা ব্যবসা করছেন।
নদীর তীরে অবৈধভাবে মাছঘাট স্থাপন ও জেলেদের জিম্মি করে প্রভাবশালীদের ব্যবসা করা প্রসঙ্গে জানতে বরিশাল মৎস্য অধিপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের করনীয় কিছু নেই। নদীর মাছ রক্ষণাবেক্ষনেই তাদের শুধু দায়িত্ব।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *