নৌপথ যাত্রী নিরাপত্তায় বিজয়ের মাসে আন্দোলনের আভাস

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক: ঢাকা-বরিশাল নৌপথের লঞ্চে খুনখারাবী, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়াসহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এ রুটের যাত্রীরা। উচ্চ মুল্যে ভাড়া নিলেও যাত্রী সেবা বৃদ্ধি করতে পারছে না লঞ্চ মালিক এবং বিআইডব্লউটিএ । এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লঞ্চে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বরিশালের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষও লঞ্চে যাত্রীসেবা ও যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। ভেতরে ভেতরে তারা নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই যাত্রী নিরাপত্তায় আন্দোলন কর্মসুচী ঘোষনা করা হচ্ছে।


গত ১৭ নভেম্বর ভোরে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের ছাদে শামীম তালুকদার (২৫) নামে এক যাত্রী খুন হন। এর আগে পারাবত-১১ এর কেবিন থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত এক নারী যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ২০ জুলাই বরিশালে এমভি সুরভী-৮ নামে একটি লঞ্চের স্টাফ কেবিন থেকে আঁখি নামে এক নারীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল। গত ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল বরিশালগামী পারাবত-৯ লঞ্চে সিফাত নামে এক তরুণকে দুর্বিত্তরা গলাটিপে হত্যার পর পেট কেটে নদীতে ফেলে দেয়। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকা থেকে বরিশালগামী পারাবাত-১০ লঞ্চ থেকে মিনারা বেগম নামে এক কেবিন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়।


লঞ্চে যাত্রী সেবা এবং নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন তাপস উল্লেখ করেছেন, ‘লঞ্চে অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলছে। এসব রোধ করা দরকার।’ বেসরকারী সংগঠন গ্রীন মুভমেন্ট এর জেলা সমন্বয়কারী কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ বলেন, একের পর এক খুন দুর্ভাগ্যজনক! লঞ্চ মালিক এবং বিআইডব্লউটিএর দায়িত্বহীনতার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।’ শহিদুল ইসলাম রাকিব নামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এত কাড়ি কাড়ি টাকা যাদের জন্য কামাই করে অথচ সেই যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কেন সশস্ত্র আনসার বহিনী রেখে বেতন দিতে পারবে না।’


জানতে চাইলে নৌপরিবহন যাত্রী স্বার্থ সংরক্ষন পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, নৌপথের যাত্রীদের নিরাপত্তায় তারা নানাভাবে কথা বলেছেন। যাত্রীদের জিম্মী করে রোটেশন প্রথার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন। সাবেক মেয়র হিরনের সময় এ নিয়ে সচিবলায় যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিতে নানা বিষয় দাবী তোলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে অদৃশ্যকারনে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি বলেন, একের পর এক অত্যাধুনিক বিলাসবহুল লঞ্চ মালিকরা নামাচ্ছে। কিন্তু একের পর এক এতোটা অপকর্ম হচ্ছে যেন নৌপথই হত্যাসহ নানা ঘটনা ঘটার নিরাপদ ঘাটি। মালিকদের উদ্দেশ্য হচ্ছে টাকা কামাই করা। দক্ষিনের মানুষ অসহয় হয়ে পড়েছে নৌপথে। এর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই নিজেস্ব স্তরে তারা বসেছেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজয়ে মাস ডিসেম্বরে আন্দোলন কর্মসুচী শুরু করবেন। করা হবে সংবাদ সম্মেলন। তিনি এজন্য সর্বস্তরের মানুষকে একাট্টা হওয়ার আহবান জানান।


জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির বরিশালের আহ্বায়ক মো. মুনাওয়ারুল ইসলাম ওলি বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চে খুন খারাবিতে তারা উদ্বিগ্ন। জনস্বার্থ রক্ষা কমিটি এ বিষয়ে অচিরেই কর্মসুচী নিয়ে লঞ্চ মালিক সমিতি এবং বিআইডবিøটিএর কাছে দাবী তুলবেন।


সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ঢাকা-বরিশাল নৌপথে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াতে করছে। এদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শংকিত। তারা ইতোমধ্যে বরিশালের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের সাথে কথা বলেছেন। শিক্ষক নেতা মহসিন উল ইসলাম হাবুলও এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তারা পরিকল্পনা করছেন সবার সাথে বৈঠক করে যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কর্মসুচী গ্রহন করার।


সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, একের পর এক খুনের ঘটনায় তারাও চিন্তিত। সশস্ত্র আনসার না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, লঞ্চে মালিকদের ২/৩জন নিজেস্ব স্টাফকে গার্ড হিসেবে নামে মাত্র ব্যবহার করা হয়। এতো বড় লঞ্চে ১ থেকে দেড় হাজার যাত্রীর নিরাপত্তায় তা যথেস্ট নয়।


এসব প্রসঙ্গে অভ্যন্তরীন লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, মালিক সমিতি এবং বিআইডব্লউটিএ বসে লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তায় কি ব্যবস্থা নেয়া যায় তা খোজা হবে। তবে তিনি দাবী করেন বেতন দিয়ে সশস্ত্র আনসার রাখা কোন মালিকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
এব্যাপারে বরিশাল বিআইডব্লউটিএর বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপত্তায় তারা মালিকেদের সাথে বসে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, বেতন দিতে হবে- এ কারনে লঞ্চ মালিকরা আনসার রাখছে না। তবে যাত্রী নিরাপত্তার কথা সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *