কম ভোটারের কুয়াকাটায় নির্বাচনী উত্তাপ-উত্তেজনা অনেক বেশী

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : দক্ষিণের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নয়াভিরাম কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে রয়েছে সূর্যোদয়-সুর্যান্ত উপভোগের বিরল সুযোগ। এ কারনে বছর জুরেই কুয়াকাটায় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভীড় থাকে। ২০১০ সালে কুয়াকাটাকে পৌরসভাতে উন্নীত করা হয়। আগামীকাল ২৮ ডিসেম্বর (সোমবার) কুয়াকাটা পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় পৌর নির্বাচন। এবার প্রথম এ পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন করা হবে। ৮ দশমিক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ও মাত্র ৮ হাজার ১২২ জন ভোটারের এ পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি দুই মেয়র প্রার্থী এবং একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এবং বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় পৌর শহরে বিরাজ করছে উত্তাপ-উত্তেজনা। ভোটারদের মধ্যেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আছে ভয় ও শংকা।
আগামীকাল ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ন রাখতে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের আবাসিক হোটেলগুলোতে পটুয়াখালী জেলার মানুষকে শনিবার থেকে নির্বাচন পর্যন্ত কক্ষ বরাদ্দ না দিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন পৌর নির্বাচনের রিটানিং অফিসার ও পটুয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউল খলিফা। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে।
মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে কিছুটা উত্তেজনা থাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য ৯টি কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের পুলিশ টিম দায়িত্ব পালন করবেন। দুটি কেন্দ্রের জন্য থাকবে একটি করে ষ্ট্রাইকিং ফোর্সের টিম। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে কুয়াকাটায়।
কুয়াকাটা পৌরসভার দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও সাগরতীরের এ পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামীলীগের আব্দুল বারেক মোল্লা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারে মধ্যে। স্থানীয় সচেতন মহল এমটাই মতামত ব্যক্ত করেছেন। গতকাল শনিবার পৌর শহরের খাজুরা, ষাটঘর, হোসাইনপাড়া, কচ্ছপখালী, পাঞ্জুপাড়া এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী বারেক মোল্লার সমর্থকদের মধ্যে প্রচার-প্রচারনার মধ্যে অন্তত ৪ বার সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে। যে কারনে আগামীকালের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
এখানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আব্দুল আজিজ মুসুল্লী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম মাঠে থাকলেও ভোটের প্রচারনায় তারা খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। সাধারন ভোটারদের অভিমত, আওয়ামীলীগের প্রার্থী বারেক মোল্লা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের মধ্যেই হবে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
কুয়াকাটার সাধারন ভোটারদের মতে, পৌরসভা হওয়ার আগে আব্দুল বারেক মোল্লা ৩ বার লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও তার রয়েছে বিশেষ রাজনৈতিক প্রভাব।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদার কুয়াকাটা পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী পরিকল্পনা মাথায় রেখে গত ৪/৫ বছর ধরে পৌর শহরের সব ওয়ার্ডের মানুষের সমস্যা, সংকট এবং উৎসব আনন্দে পাশে ছিলেন। এ দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি একে অপরের বিরুদ্ধে আচরন বিধি ভঙ্গ, কর্মী সমর্থকদের মারধর ও প্রচারে বাঁধা দেয়ার বহু অভিযোগ করেছেন।
গত শনিবার রাখাইন মার্কেট মাঠে শেষ প্রচারনা সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করেন, আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থকরা পৌর শহরে আতংকের সৃষ্টি করেছে। প্রচারেও বাঁধা দিচ্ছে। বহিরাগতদের আনাগোনায় পৌর শহরে আতংক বিরাজ করছে। এসব কারনে সাধারন ভোটাররা শংকায় আছেন। আদৌ সুষ্ঠু ভোট হবে কি-না?
আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল বারেক মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, তারা নিজেরা বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে নৌকার কর্মী সমর্থকদের ওপর দায় চাপাচ্ছে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য। বারেক মোল্লা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়াকাটার যে উন্নয়ন করেছেন, তা স্বাধীনতার পর আর কোন সরকার করেনি। তাই কুয়াকাটা পৌরবাসী নৌকা প্রতীকের সঙ্গে আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *