জঙ্গী সংগঠন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরল ৯ জঙ্গী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় ৯ সদস্য র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের জড়িয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকায় তাদের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে তারা আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যাব সদর দপ্তরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের কাছে তারা আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পনের পর র‌্যাব তাদেরকে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে।
আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিরা হলেন- শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত (৩৪), ডা. নুসরাত আলী জুহি (২৯), আসমা ওরফে রামিসা (১৮), মোহাম্মদ হোসেন হাসান গাজী (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), মো. সাইফুল ইসলাম (৩১), মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬) মো. সাইদুর রহমান (২২) ও আবদুর রহমান সোহেল (২৮)।

র‌্যাব জানায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জঙ্গিদের সঠিক প্রক্রিয়ায় ডি-রেডিক্যালাইজেশন করে জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করেছেন তারা। দীর্ঘ সময় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের উগ্র আদর্শকে ধ্বংস করা হয়েছে। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে আছেন জেএমবি’র ছয় জন এবং আনসার আল ইসলামের তিন জন।

আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, ডা. নুসরাত আলী জুহি (২৯) সিলেটের একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্রী থাকাবস্থায় আনসার আল ইসলামের সদস্য শাওনের সাথে বিবাহ হয়। বিবাহটি সাংগঠনিক অনুমাদনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। মূলত স্বামী শাওন তাকে উগ্রবাদের দিকে অনুপ্রাণিত করেছিল। স্বামীর সঙ্গে সে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করত। জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়ার কারণে ঢাকায় কয়েকটি হাসপাতালে তার পরিচয় গোপেনে খন্ডকালীনভাবে চাকুরী করতে হয়েছে।

জঙ্গিবাদের অনুসারী হওয়ার কারণে শাওন ও ডা. নুসরাতকে দীর্ঘ দিন ফেরারী জীবনযাপন করতে হয়। এতে তাদের দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আত্মীয় স্বজনের সাথে সৃষ্টি হয় দুরত্ব। এক পর্যায়ে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে। ফলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত করে।

আবিদা জান্নাত আসমা ওরফে তারাদা ওরফে রামিসা (১৮) সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, তিনি উগ্রবাদে আকৃষ্ট হওয়ার পর পিতামাতার অজান্তে ২০১৮ সালে আনসার আল ইসলামের এক সদস্যের সঙ্গে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে বিয়ে করে। ফলে শুরু হয় স্বামীর সঙ্গে আত্মগোপনের জীবন। আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান হওয়ায় সে আত্মগোপন থেকে ফেরারী জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে। ফলে সাংগঠনিকভাবে পরিচিত স্বজনের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। শাওনের পরামর্শ অনুযায়ী সে আত্মসমর্পনের সিন্ধান্ত নেয়।

র‌্যাব আরও জানায়, অপর জঙ্গি মো. সাইফুল্লাহ (৩৭) মাদ্রাসায় পড়াকালীণ তার সহপাঠীর মাধ্যমে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হন। সে দাওয়াতী কার্যক্রম ও অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিল। কিন্তু তার কিছু সঙ্গী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সে পালিয়ে বেড়াতে থাকে। ফেরারী জীবনের কারণে তার পারিবারিক জীবনে অশান্তি শুরু হয়। সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং এক পর্যায়ে সে তার ভুল বুঝতে পারে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং পরবর্তীতে সে আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এছাড়াও, আত্মসমর্পণ করা মোহাম্মদ হাসান (২৩) পেশায় ছিল রাজমিস্ত্রি। ২০১২ সালে ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শুরু করে। এ সময় সাইফুল্লাহ তাকে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। সে সাইফুল্লার সঙ্গে জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যায়। কিন্তু ফেরারী জীবনের অনিশ্চয়তায় ও পারিবারিক জীবনে অশান্তির কারণে এক পর্যায়ে সে তার ভুল বুঝতে পারে। সে সাইফুল্লাহর সাথে আলোচনা করে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে সে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

র‌্যাব সূত্রে আরও জানা যায়, আত্মসমর্পণ করা মো. সাইফুল (৩১) ২০১৩ সালে সে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করে। ছাত্রাবস্থায় সে জেএমবিতে যোগ দেয়। সে নিজ এলাকায় ব্যাপক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালায়। জঙ্গি হিসেবে সে এলাকায় পরিচিতি পায়। ইতিমধ্যে জঙ্গি সংগঠনের কিছু সদস্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়ায় সে আত্মগোপনে চলে যায়। তাকে দীর্ঘ দিন বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে হয়। তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এরকম জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে। পরবর্তীতে সে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কখনো জঙ্গিবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। এজন্যই আমরা জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছি। জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে না পারলেও আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *