উচ্চতা বৃদ্ধিতে গোমা সেতুর গার্ডার হবে স্টীলের

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা রাঙ্গামাটি নদীর ওপর নির্মানাধীন গোমা সেতু নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সুষ্ঠু সমাধানের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। সেতুটির উচ্চতা বৃদ্ধি করার জন্য গার্ডার স্থাপনে কংক্রিটের বদলে ষ্টীলের পাত ব্যবহারের পরমর্শ দিয়েছে কারিগরি প্রতিনিধি দল। এতে নৌপথটি সচল থাকবে বলে মনে করছেন তারা। ২ জানুয়ারী যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কারিগরি প্রতিনিধি দল নির্মানাধীন সেতু এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এ সিদ্ধান্তে সম্মতি দিলে সেতুটি নির্মানে জটিলতার অবসান হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি তোলায় প্রায় এক বছর যাবত সেতুটির নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানায়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো, জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ এবং সওজের একটি কারিগরি প্রতিনিধি দল গত ২ জানুয়ারী নির্মানাধীন গোমা সেতু পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে ফিরে তারা সওজের বরিশালের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেন, সেতুতে এক পিলারের সঙ্গে আরেকটি পিলারের সংযোগ স্থাপনে ষ্টীলের গার্ডার ব্যবহৃত হলে দেড় মিটার বৃদ্ধি পেয়ে সেতুর উচ্চতা হবে জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে ৯ দশমিক ৩০ মিটার। যা সেতুর নিচ দিয়ে যানবহন চলাচলের জন্য যথেষ্ট মনে করেন বিশেষজ্ঞ দল।
সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিনিধি দলের এ সিদ্ধান্ত মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন আকারে দেয়া হবে। পরে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভায় বিআইডব্লিউটিএ সম্মতি দিলে গোমা সেতু নির্মানের সকল জটিলতা দুর হবে।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল আরও জানান, বর্তমান নকশা অনুযায়ী নির্মানাধীন সেতুতে গার্ডার কংক্রিটের গার্ডার স্থাপনের কথা ছিল। সেটার উচ্চতা হতো ৭ দশমিক ৮৬ মিটার। প্রতিটি গার্ডারের দৈঘ্য হবে ৪৯ মিটার। কারিগরি প্রতিনিধি দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুর উচ্চতা বৃদ্ধিতে সওজ ষ্টীলের পাত ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছে।
কারিগরি প্রতিনিধি দলের নতুন এ প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, গোমা সেতু নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে তার সংস্থা পুরো বিষয়টি আন্ত:মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তার প্রতিষ্ঠান সেটাই মেনে নেবে। তবে কারিগরি প্রতিনিধি দলের কোন সুপারিশ বা মতামত এখন পর্যন্ত বিআইডব্লিউব্লিউএ’র কাছে পৌছেনি।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আরও বলেন, উন্নয়নের জন্য যেমন সেতুর প্রয়োজন, আবার নৌপথও রক্ষা করতে হবে। এজন্য তারা প্রয়োজনীয় উচ্চতা রক্ষা করে গোমা সেতু নির্মান করার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেছেন। এ সেতুর উচ্চতা সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় ১০ মিটার হলেই সেখান থেকে ৩ তলা উচু নৌযান চলাচল করতে পারবে বলে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান জানান।
উল্লেখ্য, বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটির নদীর গোমা পয়েন্টে ৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যায়ে ২৮ দশমিক ২৮৩ দশমিক দীর্ঘ সেতু নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ৬৫ ভাগ নির্মান কাজ শেষ হওয়ার পর সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। তাদের অভিযোগ. সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় পানির স্তর থেকে ৭ দশমিক ৬২ মিটার উচুতে সেতু নির্মিত হলে ওই নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। নৌপথটি সচল রাখার জন্য ১২ দশমিক ০৫ মিটার উচুতে সেতু নির্মানের দাবী তোলে বিআইডব্লিউটিএ। তারা এ নৌপথটি দ্বিতীয় শ্রেনীর নৌপথও দাবী করেছে।
অপরদিকে সওজ কর্তৃপক্ষ বলছে, বিআইডব্লিউটিএ’র চুড়ান্ত অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর সেতুর নকশা অনুমোদন করে দরপত্রের মাধ্যমে নির্মান কাজ শুরু করে। তখন তারা নৌপথটি ‘গ’ শ্রেণীর উল্লেখ করেছিল। চার বছর পর বিআইডব্লিউটিএ নৌপথটি ‘খ’ শ্রেণীর উল্লেখ করে উচ্চতা বৃদ্ধির দাবী তোলায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে সওজকে। এরই মধ্যে সেতুর সবগুলো পিলার স্থাপনসহ ৬৫ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। এমন জটিল পরিস্থিতিতে যোগাযোগ মন্ত্রাণালয় প্রায় এক বছর আগে সেতুর নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে নানান উপায় খুুঁজতে শুরু করে। ##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *