এস এ রব: সময় কি বদলে গেছে খুব? আমি একটু ভাবতে চেষ্টা করি। তবে আমার মনে হয় সময় তার জায়গায় ঠিকই আছে শুধূ বদলে যাচ্ছি আমরা। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া সেই মায়ের স্ট্যাটাস নিশ্চয়ই পড়েছেন সবাই, যেখানে তিনি তার মেয়েকে বিয়ের আগেই যে কয়জন পুরুষ ভালো লাগে, তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অনুমতিই শুধু দেননি, বরং রীতিমতো উৎসাহিত করেছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সেটা সবাইকে জানান দিয়েছেন। একজন মা হিসেবে তিনি তার মেয়েকে প্রাইবেটলি যে কোন উপদেশ দিতেই পারেন কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরণের উপদেশের জানান সমাজের তরুণ-তরুণীদের জন্য কী ইঙ্গিত বহন করে?
এহেন অবস্হায় কোমলমতি শিশুদের চারপাশকে বদলে দেবার যে সমস্ত সহজলভ্য উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে বর্তমান সময়ে সেখানে শিশুদের জন্য কোনো কল্যাণমুখী দিক রয়েছে কী না সেটির গুরত্ব অনুধাবনে চেষ্টা করার সময় এসেছে সকলের জন্য।অপসংস্কৃতির ক্রান্তিকালে সন্তানের মঙ্গলের জন্য সেই দিকে একটু অতিরিক্ত সময় মা-বাবাদের ব্যয় করা উচিত বলে আমি মনে করি।
যে সকল শিশুদের সামনে সুন্দর কোনো ভবিষ্যতের আলো নেই, যে শিশুদের সামনে আনন্দ আহরণের সঠিক কোনো ঠিকানা নেই, যে শিশু কিশোরেরা দিকভ্রান্ত, বিভ্রান্ত, যারা মিথ্যে বিলাস, পণ্যসর্বস্ব জীবনকেই সত্য বলে জানছে তাদের সামনে আলো হাতে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নৈতিক চরিত্র সম্পন্ন বাবা-মায়ের খুবই প্রয়োজন এই সময়।
যদি সন্তানের কাছে একজন আদর্শ মা-বাবা হিসেবে নিজেকে উপস্হাপন করতে ব্যর্থ হন, তখন সেই শিশুর কাছ থেকে আপনি আসলে কী প্রত্যাশা করতে পারেন ? পরিবার,সমাজ ও দেশকে কী দিতে সক্ষম হবে এইসব শিশু আর কিশোরেরা? তারা যদি বিনোদন খুঁজতে গিয়ে বিকৃত যৌনতাকেই শেষোব্দি খুঁজে নেয়, তাতেই বা আপনার বলার বা করার কী থাকবে। পারিবারিক ও সামাজিক সুশিক্ষা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবে যে সকল কুকর্ম সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত সেইগুলি রোধকল্পে বাবা-মায়ের ভূমিকার কোনা বিকল্প নেই।
ক্যারিয়ার গঠনের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরীর পাশাপাশি চরিত্র গঠনের ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা যদি সন্তানকে না দেওয়া যায় তাহলে অনুশকা-দিহানের মত ঘটনা একদিন নিজের ঘরে প্রত্যক্ষ করার অগ্রিম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন সেই সব বাবা-মায়েরা যারা অতি আধূনিকতা পরায়ণে ব্যস্ত।
ধর্ষণ বর্তমান সময়ে দেশ ও জাতির জন্য একটি বিষ ফোড়া হিসেবে প্রতিষ্টিত। এর পচঁন এখন সর্বাঙ্গে। অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও জগণত্যম এই অপরাধ প্রবনতা সমাজে চরমভাবে বিকাশ লাভ করছে প্রতিানয়ত। ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন তৈরী হবার পর কেন ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না সেটি জাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিনের বেশি অংশ জুড়েই থাকে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিভৎষ চিত্র ! এর থেকে মুক্তি কী ? এরজন্য কী শুধূ পুরুষরাই দায়ী? নারীদের এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা নেই? এই প্রশ্নগুলি এসে যায়। কারণ এক শ্রেণীর নারীবাদী বুদ্ধিজীবিরা এর জন্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে দায়ী করছেন।
কিন্তু নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও তো অনেক পুরুষের অভিযোগ রয়েছে বর্তমান সমাজে। নারীরা তাদের অবলার দ্বার ভেঙে আজ আদালতে যেতে পেরেছেন বিধায় তাদের খবরগুলো ভাইরাল হচ্ছে। কিন্তু এই সমাজে নারী নিয়াতনের অনেক পুরুষ আছেন যারা সামাজিক লোক-লজ্জার ভয়ে সে জায়গায় যেতে পারছেন না বিধায় তাদের কাহিনীগুলো খবরের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
অন্য দিকে নারী ও পুরুষ নিয়ে রাষ্ট্রের বৈষম্য কম কীসের? রাষ্ট্রে নারী নির্যাতন বিরোধী আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন বিরোধী কোনো আইন নেই । সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা থাকলেও বাস্তবে এর চিত্র উল্ঠো। ঢাকা বার কাউন্সিলের স্টাডিতে অনেক কেইস রয়েছে যেখানে পুরুষ নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্রের কথা শুনলে শরীর শিহরে উঠে।এরপরও দেশের পুরুষ সমাজকে কখনও “মি টু” ক্যাম্পেইনের জন্য রাজপথে নামতে দেখা যায়নি। সত্যিকার অর্থে ধর্ষকের নিদ্রীষ্ট কোনো পরিচয় থাকতে নেই। ধর্ষকের প্রকৃত পরিচয় ধর্ষক ।
আবার শালীন অনেক পরিবারের সন্তানেরাও ভেতরে ভেতরে যে নানা ধরনের আজে-বাজে প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে তেমন তথ্যও পাওয়া যায়। মুখে দাড়ি বা পোশাকে বোরকা থাকলেই তার মধ্যে ইসলামের বেসিক চেতনা থাকবে- এমনটাও প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। হিজাব পরিহিতা ব্যান্ডের শিল্পী আর গিটারিস্ট কিংবা মডেল সবই আগামী দিনে পাওয়া যাবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ হিজাবকে অনেকক্ষেত্রে আমরা ফ্যাশন শো’র মতো পণ্য বানিয়ে ফেলছি।
গোটা সমাজেই যখন পদস্খলন আর পতনের চালচিত্র চলছে, আর সেই সমাজের যেহেতু আমরা বাসিন্দা, তাই সবাই রিস্কের মধ্যে বসবাস করছি। খেয়াল রাখতে হবে অন্যকে নিয়ে সমালোচনা ও উপহাস করতে গিয়ে যেন নিজেদের কথা ভুলে না যাই। সতর্কতা সবার জন্যই প্রয়োজনীয়।