মেয়াদ শেষের পথে : শুরুই হয়নি বরিশালের ৬টি প্রকল্পের কাজ

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : বরিশালের উজিরপুরে দোয়ারিকা এলাকায় সুগন্ধা নদীর ভাঙনে কূলের মানুষের জীবন বিপন্ন। যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে এ নদীতে স্থাপিত বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মইিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুটি। সেতু এবং নদীর কূল রক্ষায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এর নাম ‘সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষার্থে নদীতীর স্থায়ী রক্ষা প্রকল্প’। প্রায় চার কিলোমিটার নদীতীর রক্ষার উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্পে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি এ প্রকল্পের। অর্থাৎ দেড় বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।

বীরশ্রেষ্ঠ মইিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুটির মতোই বরিশাল বিভাগের অন্তত ৬টি প্রকল্পে এক টাকাও কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। এই ৬ প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য। অগ্রগতি ১ শতাংশের নিচে এ রকম প্রকল্পের সংখ্যা অন্তত দুটি। অগ্রগতি ১০ শতাংশের নিচে এ রকম প্রকল্প আছে অন্তত ৫টি। ২৫ শতাংশের নিচে অগ্রতির প্রকল্পের সংখ্যা ১৩।

দেড় বছরে কেন প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি- জানতে চাইলে সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরিশাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, টেন্ডার হতে দেরি হয়ে গেছে। সম্প্রতি টেন্ডার হয়েছে। এখন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হবে। টেন্ডার হতে দেরির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের কাজ আসলে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা। মূল কাজ করছে সরকারের অন্য বিভাগ। তারা শুধু দেখভাল করছে। শূন্য অগ্রগতির আরও একটি প্রকল্প বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীত এবং প্রশস্তকরণ প্রকল্প। এ প্রকল্পেরও পরিচালক তিনি। সার্বিকভাবেই সারাদেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে বরিশাল বিভাগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।

এডিপিতে বরিশালের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার দুই লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এতে বরিশালের অংশ সাত হাজার ১০৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এখন সারাদেশে প্রকল্প আছে এক হাজার ৭২৪টি। এর মধ্যে ৬৭টি বরিশালে।

কভিডসহ অন্যান্য কারণে টাকার অংকে এডিপি বাস্তবায়ন গত ১১ বছরের

মধ্যে সর্বনিম্ন। এর মধ্যে আরও পিছিয়ে আছে বরিশাল বিভাগ। এডিপি বাস্তবায়নে বরিশাল বিভাগের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ জানতে চায় সরকার। এ জন্য সরেজমিন পরিস্থিতি জানতে আজ সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সদস্য সরকারের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ অন্য ঊর্ধ্বতনরা রয়েছেন এ মিশনে।

কভিডের কারণে সারাদেশেই এডিপি বাস্তবায়নের গতি ধীর। বরিশালে বাস্তবায়নে আরও পিছিয়ে থাকার বিশেষ কী কারণ- জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব জানান, সে কারণ জানতেই পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে তারা বরিশাল পরিদর্শনে যাচ্ছেন। সরেজমিন যাচাই এবং সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত কারণ তারা জানতে চাইবেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।

শূন্য অগ্রগতির ৬ প্রকল্প :এক টাকাও কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি এ রকম ৬ প্রকল্প হচ্ছে- বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীত ও প্রশস্তকরণ, সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষা প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার-বরিশাল স্থাপন, ভোলা (পরান তালুকদার হাট)- চরফ্যাসন (চরমানিকা) আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন। এ ছাড়া কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ উপজেলা হেডকোয়ার্টার থেকে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া ভায়া নাজিরপুর রাস্তা ও সেতু নির্মাণ কাজের সমীক্ষা প্রকল্প। বরিশালে বাস্তবায়নাধীন বড় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্প। তিন হাজার ৯৮২ কোটি টাকা বরাদ্দের এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। বরাদ্দের মাত্র ৩১৭ কোটি টাকা কাজে লাগানো হয়েছে এ পর্যন্ত।

সংবাদটি দৈনিক সমকাল থেকে সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *