নাগরিক রিপোর্ট: বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগটি স্থাপনের পর সেখানকার একমাত্র চিকিৎসক ছিলেন সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এম.এ আজাদ। তিনি রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন। গত বছর ২৭ এপ্রিল অজ্ঞাত এক দূর্ঘটনায় তার অকাল মৃত্যুঘটে। তারপর থেকে চিকিৎসক ছাড়াই চলছে বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগটি। যে কারনে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা দক্ষিনের আগুনে পোড়া রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সেবিকা আয়শা আক্তার চাঁদনী বলেন, বরিশাল বিভাগে আগুনে পোড়া রোগীদের একমাত্র ভরসা ছিল এই বার্ন ইউনিট। ৩০ শয্যায়র এ বিভাগে আগে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ৪০ থেকে ৪৫ জন। এক বছর যাবত চিকিৎসক না থাকায় এখন আগুনে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাদের অধিকাংশকেই উন্নত চিকিৎসা দিতে ঢাকায় প্রেরন করা হয়।
বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের এক সেবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ন এ বিভাগটি জন্মলগ্ন থেকে চিকিৎসক সংকটে ভূগছে। তবে অন্যান্য জনবল প্রয়োজন অনুযায়ী রয়েছে। ডা. এম.এ সজল আজাদের মৃুত্যুর পর চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক রাখতে শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. শাখাওয়াত হোসেনকে এ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিন পরই তিনি চাকুরি থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর থেকে বিভাগটি চিকিৎসশুন্য। এখন সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকরা আগুনে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
ঝালকাঠীর নলছিটির বাসিন্দা আ: রহমান বলেণ, রান্না করতে গিয়ে গ্যাসের চুলার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন তার স্ত্রী। বরিশাল মেডিকেলের চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে বলেছেন। এখন তিনি ঢাকা যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করছেন।
এব্যপারে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগুনে পোড়া রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে, প্রধান অস্ত্র চিকিৎসক নেই’। তিনি জানান, সার্জারী বিভাগের অধীনে ২০১৫ সালে বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারি বিভাগ চালু করা হয়। ওই বিভাগটিসহ হাসপাতালের শুন্যপদে চিকিৎসক চেয়ে মন্ত্রণালয়ে বারবার চিঠি দেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতবছর ২৮ এপ্রিল সকালে নগরীর কালিবাড়ি সড়কে মমতা স্পেশাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে শেবাচিম হাসপাতালের সিনিয়র বার্ণ ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগের প্রধান ডা. এমএম সজল আজাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই ভবনের ৯ম তলায় একা থাকতেন। তার আগের দিন সন্ধ্যায় তাকে সর্বশেষ পায়চারি করতে দেখেন হাসপাতালের কর্মচারীরা। তার মৃত্যুর ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড নাকি দূর্ঘটনা তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। ডা. সজল আজাদের ভাই ডা. শাহরিয়ার অজ্ঞাতদের আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করলে সেটি তদন্তাধীন রয়েছে।