বরিশাল নগর বিএনপিতে বিভক্তি : প্রকাশ্যে সরোয়ার বিরোধীরা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : প্রায় তিনদশক যাবত বরিশাল বিএনপিতে একচ্ছত্র আধিপত্য দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের। তিনি ২০১৩ সাল থেকে বরিশাল নগর বিএনপিরও সভাপতি। নগর বিএনপিতে তার নেতৃত্ব নিয়ে দলের বড় একটি অংশের ভিন্নমত থাকলেও প্রকাশ্যে হননি কেউ। সরোয়ারের নেতৃত্বেই নগর বিএনপি সকল কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে। তবে গত এক সপ্তাহের মধ্যে নগর বিএনপির ব্যানারে পৃথক দুটি কর্মসূচী পালিত হয়ে মজিবর রহমান সরোয়ারের একক নেতৃত্ব অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- সরোয়ারের নেতৃত্বে চ্যালেঞ্জ করে বরিশাল নগর বিএনপির বিভক্তি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।


রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দলীয় কার্যালয় থেকে রওনা হয়ে সরোয়ারের নেতৃত্বে নগর বিএনপির নেতাকর্মীরা সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূস্পার্ঘ অর্পন করেন। দেড়ঘন্টা আগে সকাল ৯টায় নগর বিএনপি ব্যানারে পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূস্পার্ঘ অর্পন করেন মহানগর বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পদাক আফরোজা খানম নাসরিন। তার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যাক কর্মী সদর রোড কাকলীর হলের মোড় থেকে শোভাযাত্রা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান।
গত বৃহস্পতিবার নগরীর জিলা স্কুল মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু মহানগর বিএনপি ব্যানার নিয়ে শোডাউন করে সমাবেশে অংশগ্রহন করেন।


অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু বহু আগে থেকে বরিশাল বিএনপিতে সরোয়ার বিরোধী বলয়ের নেতা হিসাবে পরিচিত। মাঝে মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে সাময়িক সমঝোতায় নগর কমিটির সহ সভাপতি পদে পদায়ন হন। বর্তমানে তিনি দূর্ণীতির দায়ে দন্ডিত হয়ে কারান্তরীন সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত।


অপরদিকে চারদলীয় জোট শাসনমলে (২০০১-২০০৬) বিএম কলেজের ছাত্রদল নেত্রী একবছর আগেও সরোয়ারের আস্থাভাজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তার আনুকূল্যেই মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক ও নগর বিএনপির নগর কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পদে পদায়িত হন বলে জানা গেছে।
আকস্মিক মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বের বাইরে অবস্থান এবং অমর একুশের সকালে পৃথক কর্মসূচী পালন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ‘রাজনীতি করো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। আমরা এখন বিরোধী দল। দলকে শক্তিশালী করার জন্য যে যার মতো করে কাজ করবো।

আগামীতে এভাবেই কর্মসূচী পালিত হবে’। নাসরিন অভিযোগ করেন, ১৯৯৪ সাল থেকে ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতি করে তিনি এখন বিএনপিতে আছেন। মহানগর বিএনপির কর্মসূচী তাকে জানানো হয়না। তিনি কর্মসূচীতে গেলে এক শীর্ষ নেতার অনুসারীরা তাকে কটুক্তি করেন। মহানগর বিএনপির প্রতিনিধি হিসাবে তিনি শহীদ মিনারে পৃথকভাবে পূস্পার্ঘ্য অর্পন করেছেন।


নগর বিএনপির কর্মসূচী না জানানোর একই অভিযোগ করেন সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন মন্টু। তিনি বলেন, ‘গত ৭/৮ মাস যাবত দলের কর্মসূচী তাকেসহ অনেককে জানানো হয়না। তারা কর্মসূচীতে গেলে মঞ্চে উঠতে দেয়া হয়না। পাশ থেকে উস্কানীমুলক কথা বলা হয়। গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় সমাবেশের মঞ্চেও তিনি উঠতে পারেননি। মন্টু বলেন, নগর বিএনপির চেইন অব কমান্ডে দূর্বলতা আছে। বর্তমান নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম হবেনা। তাই সকলে এখন নগর বিএনপির পরিবর্তন চায়।


এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, নগর বিএনপির নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে কেউ কর্মসূচী পালন করলে সেটা সমিচীন হয়নি। অ্যাডভোকেট মন্টু ও আফরোজা নাসরিনের পৃথক কর্মসূচী পালনের বিষয়টি তাদের জানা নেই। বিষয়টি তারা দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করবেন।


সরোয়ার বিরোধীতার কারন : বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে কোন সময় নগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে দলের হাই কমান্ড। সম্ভাব্য কমিটিতে সদস্য সচিব পদটি বাগিয়ে নিতে চান সরোয়ার বিরোধীরা। প্রায় চার বছর আগে সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহিনের মৃত্যু হলে ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক হন সরোয়ারের আস্থাভাজন জিয়াউদ্দিন সিকদার। এতে ক্ষুদ্ধ হন সরোয়ারের আস্থাভাজন নব্বই দশকের ছাত্রদল নেতারা। তারা ভেতরে ভেতরে একট্রা হয়ে গত একবছর যাবত একাধিক ঘরোয়া সভা করেন। গত তিনদশক যাবত বরিশালে সরোয়ারের নেতৃত্ব বিরোধী বিএনপি নেতাদেরও শক্তি এতে আরও বৃদ্ধি পায়। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাবেক ছাত্রদল নেতারা ঢাকায় গিয়ে সাবেক ১০ ছাত্রনেতার একটি তালিকা দিয়েছেন দলের হাইকমান্ডের কাছে। জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপাতি আক্তার হোসেন মেবুল তখন সমকালকে বলেন, এই ১০ জনের মধ্যে যে কাউকে আসন্ন কমিটির সদস্য সচিব করার দাবী করেছেন তারা।
যদিও এসব বিষয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার বারবার বলে আসছেন, যারা তার বিরোধীতা করেন তারা দলের বিভিন্ন পদে থেকেই কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করেন না। এমনকি তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয় নিয়ে তারা কখনও তার কাছে আসেননি।##



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *