কেজিতে তরমুজ বিক্রি নিয়ে নৈরাজ্য, সমালোচনার ঝড়

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক:
গরমে হাঁসফাঁস করছে বরিশালের সাধারন মানুষ। বিশেষ করে সবচেয়ে কস্টে আছেন রোজাদাররা। এই রোজায় তাই বরিশালে তরমুজের কদর ব্যাপক। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবার রমজানের শুরুতেই বরিশালে খুচরা বিক্রেতারা তরমুজ বিক্রি করছেন কেজি দরে। যদিও এই তরমুজ তারা পাইকারী বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা কিনে আনছেন পিস হিসেবে। ফলে খুচরা বাজারে মৌসুমী ফল তরমুজের মুল্যের ব্যবধান কয়েকগুন। এ নিয়ে গত ক’দিন ধরে বরিশাল নগরীতে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। দাম নিয়ে নৈরাজ্যের বিপরীতে এমন সমালোচনার মুখে জেলা মার্কেটিং অফিসার আগামী মৌসুমে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারির সুপারিশ করার আশ্বাসের বানী শুনিয়েছেন ক্রেতাদের।


বরিশাল আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তীব্র এই গরমের সুযোগ নিয়ে নগরীর চৌমাথা বাজারে ক্রেতা ৫ কেজি ওজনের একটি তরমুজের দাম হাকেন ২২৫ টাকা। কেজি প্রতি ৪৫ টাকা চাওয়ায় সেখানে ক্রেতা বিক্রেতা তর্ক লেগে যায়। ইয়াছিন হাওলাদার নামে একজন চাকুরেজীবী বলেন, পোর্টরোডে পাইকারী পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই তরমুজের দাম হতে পারে ১০০ টাকা। এক পর্যায়ে ক্রেতা বাধ্য হয়ে সরে যান। এভাবে প্রতিদিনই তরমুজ নিয়ে হট্টোগোল লাগছে নগরীতে। যদিও কৃষি অধিদপ্তর দাভি করেছে, এবার তরমুজের ফলন ব্যাপক।


এদিকে ফেসবুকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি হওয়ায় সমালোচনার ঝর বইছে। সৈয়দ মজুমদার নামে একজন বলেন, ‘কেজি দরে তরমুজ কেনা বন্ধ করুন। এক বছর না খেলে মরে যাবেন না।’ ফয়সাল আহমেদ মুন্না নামে এক ছাত্রনেতা জেলা প্রশাসনের দৃস্টি আকর্ষন করে বলেন, ‘মানুষ ইফতারিতে তৃপ্তির জন্য একটু তরমুজ খায়। কিন্তু যে তরমুজ ৮০-৯০ টাকায় পিস বিক্রি হয় পাইকারী হিসেবে সেই তরমুজ খুচরা বাজারে কেজি বিক্রি চলছে ৪০ টাকা।’ গনমাধ্যম কর্মী আরিফুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তরমুজ কিনছে শত হিসেবে। তবে কেজি হিসেবে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে।’

এদিকে তরমুজের দাম নিয়ে এমন লংকা কান্ড ঘটায় বরিশাল জেলা বাজার কর্মকর্তা এএসএম হাসান সরোয়ার শিবলী রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে এক দীর্ঘ্য ফেসবুক স্টেটাসে উল্লেখ করেন, তরমুজের পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু আপত্তি উত্থাপিত হচ্ছে। সর্বত্রই খুচরা বিক্রেতারা আড়ত হতে প্রতি শত হিসেবে ক্রয় করে কেজি হিসেবে বিক্রয় করাতেই মূলত এই আপত্তি। তিনি খুচরা বিক্রেতাদের কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রির নানা যুক্তির ফিরিস্তিও দিয়েছেন। মার্কেটিং কর্মকর্তা উল্লেখ করেন- ‘তারপরেও তরমুজের খুচরা বিক্রেতাগণের জন্য প্রতি পিস হিসেবে বিক্রয়ে বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন আগামীতে জারির বিষয়ে অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালে মৌসুমের শুরু থেকেই অস্বাভাবিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে গ্রীষ্মের প্রথম মৌসুমী ফল তরমুজ। ফুটপাতের খুচরা ব্যবসায়ীদের একটি চক্র এবছর বরিশালে কেজি হিসাবে তরমুজ বিক্রির প্রথা চালু করে এ ব্যবসাকে জিম্মি করে ফেলেছেন। আড়তঘরে পাইকারী ক্রয়ের দ্বিগুনেরও বেশী তারা ভোক্তাদের কাছে তরমুজ বিক্রি করছেন।


এবার মৌসুমের শুরু থেকেই ফুটপাতে তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা দরে। তবে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে তরমুজের পাইকারী মোকামে কৃষক ও আড়তঘর সর্বত্র পিস হিসাবে তরমুজের পাইকারী বেচাকেনা হচ্ছে। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মজিদনগর গ্রামের চাষী মো. রাকিব এক সপ্তাহ আগে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকাম ‘দত্ত বানিজ্যলয়’ নামক আড়তঘরে প্রতি পিস তরমুজের দাম ৪৮ টাকা। একই সময়ে কেজি হিসেবে বিক্রি করায়একটি ছোট তরমুজের দাম পড়েছে ৯০ টাকা এবং বড় তরমুজ ৩০০ টাকা।


দামের এ তারতম্য প্রসঙ্গে দত্ত বানিজ্যলয়ের স্বত্বাধিতাকরী গণেশ দত্ত বলেন, ওইদিন তার আড়তঘরে ৫-৬ কেজি ওজনের তরমুজের শত ৫-৬ হাজার টাকা এবং ৭-১০ কেজি ওজনের তরমুজ ৮-১০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। অর্থাৎ প্রতিপিস তরমুজের দাম পড়েছে ছোট সাইজ ৫০-৬০ টাকা এবং বড় সাইজ ৮০-১০০ টাকা।


বরিশাল কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এবছর বিভাগের ৬ জেলায় ২৪ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তারমধ্যে সর্বাধিক পটুয়াখালীতে ১৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে এবং ভোলায ৫ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।


এব্যপারে বরিশাল জেলা বাজার কর্মকর্তা এএসএম হাসান সরোয়ার শিবলী সাংবাদিকদের বলেন, কৃষকের মাঠ ও আড়তঘর সর্বত্র পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রি করা হয়। কেজি দরে বিক্রি করে বরিশালে ফুটপাতের ব্যবসায়ীররা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আগামী বছর মৌসুমের শুরুতেই তাদের নিয়ন্ত্রনে আনার কয়েকটি সুপারিশ নিয়ে তারা কাজ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *