বাংলার বাঘকে স্মরনে কেন এতো উদাসীনতা!

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল:
শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হকের মৃত্যু দিনটি ছিলো ২৭ এপ্রিল। তাকে স্মরনে তেমন আয়োজন দেখা যায়নি বরিশালে। ছোট করে কিছু দায়সারা সংবাদ ছাড়া বাড়তি কিছু চোখে পরলোনা। অথচ বাংলার বাঘ খ্যাত এ মহান ব্যাক্তিটি যত গুরুত্বপূর্ন পদে ছিলেন, তা আর ক’জনেই বা ছিল! বাংলার বাঘের মৃত্যু দিনে নিরব থাকলেও এই নগরীর কোন কোন সংস্কৃতিমনাদের দেখা যায় দেশের বাহিরের কোন অখ্যাত ব্যক্তির জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন পালন করে থাকেন ঘটা করে, নানা আয়োজনে।

কলকাতার মেয়র, অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী,পূর্ব পাকিস্তানের মূখ্য মন্ত্রী,পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী,পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, ১৯২৪ সালে বাংলার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন গুনী এ মানুষটি। একজন মানুষের নামের সাথে এতগুলো গুরুত্বপূর্ন পদে আর কেউ কি ছিলেন!

ইংরেজিতে মাস্টার্স শুরু করলেও তিনি গনিত শাস্ত্রে এম,এ ডিগ্রী নেন। কথিত আছে- কোন শিক্ষার্থী তাকে বলেছিলো-মুসলমান শিক্ষার্থীরা গনিতে ভাল নয়,এ কথা শুনে ইংরেজি ছেরে তিনি অল্প সময়ে গনিত বিষয়ে এম,এ,করেন প্রথম বিভাগ নিয়ে। যদিও বিষয়টি তিনি কখনো বলেননি,তাই বিষয়টি রহস্যই রয়ে গেল। পরে বরিশাল রাজচন্দ্র কলেজের গনিত বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে জোগ দিয়েছিলেন কিছু সময়ের জন্য। কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা পরে বরিশাল কোর্টেও আইন ব্যাবসায় ছিলেন তিনি।

ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি,ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুগ্ন সম্পাদক,সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বও পালনেও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ঋন সালিসি বোর্ড গঠন করে তার অভিজ্ঞতার পরিচয় সর্বজনবিদিত। ছিলেন একজন সফল ডেপুটি মেজিস্ট্রেটও।

শের-ই-বাংলা এ,কে,ফজলুল হক বর্তমান বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের একজন সফল আদর্শিক রাজনীতিক ছিলেন। এক জীবনে তিনি তার আপোষহীন নেতৃত্বে জয় করেছিলেন মানুষের হ্রদয়। ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন- যে জাতি গুনীর কদর নেই,সে দেশে গুনী জন্মায়না। একজন দানবীর হিসেবেও এ,কে,ফজলুল হকের কাছাকাছি কেউ আছেন কি না সন্দেহ। নিজ উদ্যোগে জায়গা দান ও প্রতিষ্ঠা করেছেন- হাসপাতাল, মাদ্রাসা, স্কুল,কলেজ সহ অনেক প্রতিস্ঠান।

বরিশালে জন্ম নেয়া এ মানুষটি যখন শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল করেন,তখন ভারত পাকিস্তান তথা এশিয়ায় এত বড় হাসপাতাল ছিলো দু একটি। মানুষের সেবায় মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিজেকে বিলিয়ে দিলেন যে মানুষটি, তার মৃত্যু বার্ষিকীতে জাতি কতটুকু স্মরণ করলো!

ইতিহাসে যার যতটুকু সন্মান, ততটুকু যদি আমরা দিতে কার্পন্য করি, তাহলে বুঝতে হবে উন্নত জাতির দৌড়ে এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে। একজন শের-ই- বাংলা একটি প্রতিস্ঠান। বাংলাকে যে চিনিয়েছেন, সেই উন্নত বুকের উন্নত মানুষকে সহস্র স্যালুট মনের গহীন থেকে।

রাজনীতির মার প্যাচে রাজনীতিবিদরা তাকে গভীর ভাবে স্নরন না করলেও,দেশের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত ও ইতিহাস সম্পর্কে যাদের একটু জ্ঞান আছে,তারা এই মহান নেতাকে স্নরন করবেন তাদের বিবেকের ভালবাসা দিয়ে। “শের-ই-বাংলা”বা বাংলার বাঘের গর্জন এখন শুনতে না পেলেও তার কীর্তির গর্জন আমরা এখনও উপলব্ধি করি তার কর্মের মাঝে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *