গনমাধ্যমে পেশাদারিত্বর অভাব, দায় কার!

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল:
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কাগজে কলমে,সভা সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার গনমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বললেও-প্রতক্ষ বা পরোক্ষভাবে গনমাধ্যম কখনোই স্বাধীন ছিল না। এর মাঝে জোগ হয়েছে শিল্পপতিদের নগ্ন আগমন। নিজেদের ব্যাবসা বা কালো টাকা নিরাপদ রাখতে ঢাল হিসেবে সংবাদপত্র খুলে নিজেকে নিরাপদ রাখার সংখ্যাও কম নয়।

বাংলাদেশে অনেক তুখোর পেশাদার সাংবাদিক রয়েছেন,যারা এ শিল্পতিদের ইচ্ছের কাছে নতজানু না হলেও কলমের ধার অধরা থেকে যায়। হাত খুলে না লিখতে পারলে সাংবাদিকরা কখনো তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনা। আবার ভূঁইফোড় সাংবাদিকদের ভীড় বাড়তে থাকায় প্রশ্নের মুখে পরছে পেশাদাররা। সব মিলিয়ে কঠিন এক সময় পার করছে গনমাধ্যম।

১৬০৫ সালে ষ্ট্রাসবুর্গ থেকে প্রথম সংবাদপত্র বের হয়ে ১৯২০ এর দশকে আধুনিক সংবাদপত্রের যে পথচলা শুরু হয়েছে,যেখানে সকল সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রেস স্ট্যান্ডার্টস অর্গানাইজেশনের আইন মেনে চলতে বাধ্য। এটি সাধারন নাগরিকরাও যেমন জানেন না, আবার অনেক ভূঁইফোড় সাংবাদিকরাও জানেননা।

এতে করে প্রায়ই জনরোষে পরে গনমাধ্যম। কিন্তু সাধারন নাগরিকরা এটি জানেনা যে-গনমাধ্যমের নির্বাহী কোন ক্ষমতা নেই। গনমাধ্যমের কাজ জনসন্মুখে ঘটনা প্রকাশ করা, যাতে সরকার ও সাধারন মানুষ বিষয় বুঝে তরিৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গনমাধ্যমকে বিরোধী দল সবসময়ই মনে করে এটি সরকারের তল্পিবাহক, আবার এই বিরোধী দলই যখন সরকারে থাকে,তখন তারাও গনমাধ্যমকে তার ইচ্ছেমত ব্যাবহারের চেষ্টা করেন।

তার মানে সংবাদ কর্মীরা সবসময়ই একটি মানসিক চাপে থাকেন। সাংবাদিকরাও অন্য পেশার মত একজন মানুষ,তাদেরও সংসার রয়েছে, তারাও চায় দেশের সব কিছু ঠিকঠাক চলুক। তাদের কাজ কলম চালানো,অস্ত্র নয়।

একটু চিন্তা করে দেখুন করোনার এই মহামারিতে আপনি রিমোটের বাটন চেপে সারা পৃথিবীর সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আসেন। যে সময়টায় আপনি ঘরে বসে নিরাপদে টেলিভিশন দেখছেন বা সংবাদপত্র পড়ছেন,সে সময়টায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতাল,বাজার,রাস্তায় ঘুরছেন সংবাদ সংগ্রহে সংবাদ কর্মীরা।অনেক সংবাদকর্মীর মৃত্যুও হয়েছে করোনায়,অনেকে অসুস্থ ছিলেন,এখনো আছেন।

অনেক প্রতিষ্ঠানই বিশজনের কাজ দশজনে করেছেন,তারপরও থেমে থাকেনি তারা,সঠিক সময়ে আপনার কাছে খবর পৌছে দিয়েছে। একটি সুস্থ সমাজ গঠনে শুধু সাংবাদিকদের একার কাঁধে দায় বর্তায়না,এ দায়িত্ব সবার। আপনার দায়িত্ব আপনি কতটুকু পালন করেছেন! নিজের কাছে প্রশ্ন রেখে হিসেব মিলিয়ে নিবেন। শুধু গনমাধ্যম নিয়ে সমালোচনাই যদি কারো পেশা হয়ে থাকে,তাহলে সে সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা পেশাদার সংবাদকর্মীদের রয়েছে।

গুলির ভয়,হাত কাটার ভয়,সমালোচনার ভয় যদি সংবাদকর্মীরা করতোই তাহলে এ পেশার মৃত্যু হত আরো আগে। শত বাঁধা পেড়িয়ে গনমাধ্যম এখনো টিকে আছে পেশাদারিত্বের জোরে। ডাক্তার,ইন্জিনিয়ার,ব্যাবসায়ী, রাজনীতিবিদ সহ অনেক পেশার মানুষ সাংবাদিক হতে চায়,কিন্তু সাংবাদিকরা সাংবাদিকই হতে চায়। তাই হাজার বিতর্কের মাঝে- সাংবাদিকের কলম অন্ধকার কুটিরের মাঝে কুপির একটুখানি আলোর মতই আশা জাগিয়ে চলবে। হয়তো ধীরে, তবুও চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *