অনৈতিক সম্পর্কের জেরে নির্মম পরিনিতি এক নারীর

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : একাধিক অবৈধ সম্পর্কের জেরে এক নারী নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন। নাসরিন সুলতানা নামক মধ্যবয়সী ওই এক নারী সৌদি প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান একাধিক পুরুষের সঙ্গে। এরই জেরে তিনি নিঁখোজ হলে অপহরণ মামলার তদন্তে নেমে খুনের লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসে পুলিশের তদন্তে। ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর আংটি, ঘড়ি ও ব্রেসলেট দেখে ওই নারীর লাশ শনাক্ত করেন স্বজনরা। অপহরণে সন্দেহ ছিল যার দিকে, তদন্তে বেরিয়ে এলো তিনিই খুনি। গ্রেফতারের পর ব্যবসায়ী আবদুল হাই পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, ত্রিমুখী সম্পর্কের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড। গতকাল শুক্রবার পুলিশ সূত্রে এ সব জানা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, স্বামীর সাথে নাসরিন সম্পর্কের ইতি টেনেছিলেন কয়েক বছর আগে। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নাবিলাকে নিয়ে থাকতেন রাজধানীর কদমতলীর গোয়ালবাড়ি এলাকায়। পূর্ব পরিচিত ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল হাইয়ের সাথে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। চলতি বছরের গত ১৮ মে সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে বেরিয়ে যান নাসরিন সুলতানা, যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে। বের হওয়ার পর থেকেই ছিলেন নিখোঁজ।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ ঘটনায় গত ২৪ জুন অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কদমতলী থানার এসআই লালবুর রহমানকে। তিনি তদন্তে নেমে জানতে পারেন, নাসরিনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আবদুল হাইয়ের। পরে গত বৃহস্পতিবার আবদুল হাইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। গ্রেফতার করা হয় আবদুল হাই ও তার গাড়ির চালক রানাকে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বেরিয়ে যাওয়ার পর, সন্ধ্যার দিকে নাসরিন ফোন করেন নিচতলায় থাকা প্রতিবেশীকে। অনুরোধ করেন- মেয়েকে খাবার পৌঁছে দিতে। মেয়ে নাবিলাকেও ফোন করে জানান, আসতে দেরি হবে। মেয়ে নাবিলা তখনই মায়ের গলায় অস্বাভাবিকতা টের পান।
নাবিলা পুলিশকে বলেন, ওইদিন ফোন করে আমার মা বলেন-তোমার হাই মামা আমাকে জুস খাওয়াইছে, আমার মাথা ঘুরতেছে। যখনই জুসের কথা বলেছে, তখনই আমার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক লেগেছিল। কিন্তু পরদিন সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে আবদুল হাই মামলা করতে নিরুৎসাহিত করেন। যে কারণে মামলা করার আগ্রহ থেকে সরে দাঁড়ান পরিবারের সদস্যরাও। এক পর্যায়ে নিখোঁজের সপ্তাহ খানেক পর অপহরণ মামলা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই আসে, আব্দুল হাইয়ের নাম। নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর, চালকসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে চালক স্বীকার করেন, সেদিন গাড়ির ভেতরেই গলা টিপে নাসরিনকে হত্যা করেন, আব্দুল হাই। দড়ি দিয়ে বাটখারা বেঁধে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে লাশ ফেলে দেন শীতলক্ষ্যা নদীতে। আবদুল হাইও স্বীকার করেন নিজ হাতে খুনের কথা। পরে জানা যায়, ঘটনার ৩ দিন পর রূপগঞ্জ থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা হিসাবে যে লাশ উদ্ধার করেছিল সেটিই নাসরিনের। ঘড়ি, ব্রেসলেট এবং আংটি দেখে সেটি শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরাও। এই হত্যার বিষয়ে আবদুল হাই আর তার চালক দু’জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটি এখন অপহরণ থেকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হলো।
আব্দুল হাইয়ের স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে ডিএমপি’র ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় আব্দুল হাইকে তার ড্রাইভারসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর আব্দুল হাই স্বীকার করে যেÑ সে তাকে (নাসরিনকে) মেরে ফেলেছে। নাসরিন সুলতানা আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে ‘কমিটমেন্ট’ করেছিল যেÑ সে হাইকে ছাড়া অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াবে না। কিন্তু, সেই ‘কমিটমেন্ট ব্রেক’ করে সে একাধিক পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। যে কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল হাই নাসরিনকে হত্যা করে।
ডিসি আরো বলেন, শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের পর নাসরিনের লাশটি অজ্ঞাত ছিল। যে কারণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা পুলিশ লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তারাই সেটি দাফনের ব্যবস্থা করে।
পুলিশ জানায়, সৌদিপ্রবাসী নাসরিনের সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হয় কয়েক বছর আগে। এর পর থেকে তিনি এক মেয়েকে নিয়ে শনির আখড়ার গোয়ালবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বিচ্ছেদের পর নাসরিন নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ভারত থেকে ওষুধ এনে বিক্রি শুরু করেন। আর সেই সূত্রে পরিচয় হয় যাত্রাবাড়ীর ইসলাম ফার্মেসির মালিক আবদুল হাইয়ের সঙ্গে। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সুবাদে আবদুল হাই নাসরিনের বাসায় যাতায়াত করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *