মেহেন্দিগঞ্জে সুবিধাভোগীরা ওঠার আগেই ভেঙ্গে পড়েছে ঘর

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : পেশায় আইনজীবী সহকারী (মহুরী) ইউনুস হোসেন স্বপরিবারে থাকেন বরিশাল নগরীতে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার ‘আশ্রায়ন প্রকল্প- ১’র আওতায় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে নির্মান সম্পন্ন হওয়া একটি ঘর পেয়েছেন ইউনুস হোসেন। একমাস আগে ঘরটি দায়িত্ব বুঝে পেলেও ওই ঘরে তিনি ওঠেননি।
কেন ওঠেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ঘরে উইঠ্যা জানডা খুয়ামু, যেকোনো সময় ঘর ভাইঙ্গা পড়বে’। তিনি জানান, শ্রীপুর গ্রামের বাড়িটি নদীভাঙ্গনে বিলীন হলে তিনি আর নতুন ঘর তোলেননি। চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি সরকারি ঘর পেয়েছিলেন। কিন্ত ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় ওই ঘরে পরিবার নিয়ে ওঠেননি তিনি।
ইউনুচের দেয়া তথ্য মতে, শ্রীপুরের বাহেরচর গ্রামে তিনি যেখানে ঘর পেয়েছেন সেখানে মোট ৯টি ঘর নির্মান হয়েছে। তবে মাত্র দুটি ঘরে দুই পরিবার উঠেছে। একাধিক ঘরে দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে, আঙ্গিনায় জমে পানি। পলেস্তরা খসে পড়ায় এবং বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় বরাদ্ধ পাওয়া অন্যরা কেউ পরিবার নিয়ে ঘরে থাকছেন না।
স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে, আশ্রায়ন প্রকল্প- ১ এর আওতায় শ্রীপুর ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে মোট ৪০টি ঘর নির্মিত হয়েছে। প্রায় সবগুলো ঘরেই একই অবস্থা। ৯টি ঘর পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গতমাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সবগুলো ঘর কমপক্ষে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে ঘরগুলো নির্মিত হলেও শ্রীপুরের ইউনিয়নে তদারকিতে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ। প্রশাসনের নজরদারী যথাযথ না হওয়ায় ব্যাপক অনিয়ম করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। এমনকি ঘর বরাদ্ধেও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান হারুন ঘরপ্রতি ৩০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা।
সুত্রগুলো জানায়, চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের নিকটাত্মীয় শ্রীপুর স্কুলের সহকারী শিক্ষক মোঃ ছালাম খানের ছেলে মোঃ রাকিব, সরকারি রেশন ভাতা প্রাপ্ত ভোলা পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্য মিজানুর রহমানকে ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আধাপাকা দোতলা ভবনের মালিক শ্রীপুর বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মাসুদ ও চৌচালা ঘরের মালিক মাছ ব্যবসায়ী রফিককে তাদের মূল ঘরের পিছনে তুলে দিয়েছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের দুটি ঘর। এ দুই ব্যবসায়ী ওই ঘর রান্না এবং জ্বালানী কাঠ রাখার ঘর হিসাবে ব্যবহার করছেন।
শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সদ্য বদলী হওয়া ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যান আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানে ব্যাপক দূর্ণীতি করে প্রধানমন্ত্রীর একটি ভাল উদ্যেগ ধুলিসাৎ করে দিয়েছেন।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ জানান, ঘর বরাদ্ধ ও নির্মাণের ক্ষেত্রে তার কোন হস্তক্ষেপ ছিলনা। তবে তিনি দাবী করেছে, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের ছোবলে দুটি ঘর পুরোপুরি ভেঙ্গে গেছে। কয়েকটি ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান দাবী করেন, ইউপি নির্বাচনে দলের মধ্যে যারা দলীয় প্রতীকের মনোনয়ন পাননি তারাই এখন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তার দাবী, প্রকৃত ভূমিহীনরাই ঘর বরাদ্ধ পেয়েছেন।
মেহেন্দিগঞ্জর ইউএনও শাহাদত হোসেন বলেন, তিনি দুইমাস আগে মেহেন্দিগঞ্জে যোগদান করেছেন। সাবেক ইউএনও পিযুস চন্দ্র দে’র সময়ে আশ্রায়ন প্রকল্পের ওই ঘরগুলো নির্মিত হয়েছে। গতমাসে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে কমপক্ষে ৩ ফুট পানির নিচে ঘর তলিয়ে যাওয়া এবং দুটি ঘর পুরোপুরি ও ৯টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন। পরে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নির্মান ত্রুটি নয়, ঘুর্ণিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ঘরগুলো সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। ##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *