চিটার, বাটপার, ঠগবাজ প্রতারক, ভণ্ড ‘লীগ’ যুক্ত শতাধিক সংগঠন!

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগের জেলা, উপজেলা ও বিদেশ শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে’-সম্প্রতি এমন একটি বিজ্ঞাপন ফেসবুক ঘুরছে। যিনি এই বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর। দলের নীতি বহির্ভূত এই কর্মকান্ডের জন্য এরই মধ্েয তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে ‘আওয়ামী লীগ চাকরিজীবী লীগের’ মতো এমন অসংখ্য নাম সর্বস্ব সংগঠন গড়ে উঠেছে। কোনটার পেছনে ‘লীগ’, কোনটার পেছনে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা’ বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে।
ওই সময়ে নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে এমন কয়েকটি সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জের ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, দলটির অনুমোদিত সহযোগী সংগঠন ছাড়া কেউ নামের সঙ্গে ‘লীগ’ শব্দটি যোগ করতে পারবেনা।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম বা ছবি ব্যবহার করে কেনো রাজনৈতিক দোকান খেলা যাবেনা।’ এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ থেকে কঠোর ব্যবস্থার কথা বলা হলেও আওয়ামী, বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী, কিংবা লীগ শব্দ ব্যবহার করে সংগঠনের সংখ্যা খুব বেশি কমানো যায়নি।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এসব সংগঠনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রতারনা ও ধান্দাবাজি করা। এসবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের যেসব সংগঠন আছে, এর বাইরে এসবের কোনো ভিত্তি নেই।
দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘এসব সংগঠন তো আমাদের নিয়মের মধ্েয পরে না। দলীয় কেউ যদি এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের নিয়ম হচ্ছে যদি বঙ্গবন্ধু বা তার পরিবারের নাম ব্যবহার করতে হয়, তাহলে সেটি বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তারা বিবেচনা করে তদন্ত করে যদি মনে করে ভালো সংগঠন তাহলে অনুমোদন দেন।’

‘কিছু লোকজন আছে যারা অসৎ প্রকৃতির লোক; তারা এই নাম ভাঙিয়ে এই কাজ করছে। যুগ যুগ তারা এরা এসব কাজ করে আসছে। মানুষ বিপদে যখন থাকে তখন তারা ওইটার সুযোগ নেয়। আমরা কোনো মতে এটাকে সাপোর্ট করি না। আমাদের নোটিশে আসলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করি’, বলেন জাফরউল্লাহ।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো হচ্ছে যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ, মহিলা শ্রমিক লীগ, আওয়ামী মৎসজীবী লীগ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রয়েছে ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নামসর্বস্ব এসব সংগঠনের পর লীগ শব্দটি ছাড়াও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, শেখ রাসেল ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামও ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব সংগঠন মূলত লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড, ব্যানার-ফেস্টুন-সর্বস্ব। বাস্তবে এসব সংগঠনের কোনও কর্মকান্ড নেই। এসব সংগঠনের মূল ব্যবসা তদবির বাণিজ্য থেকে শুরু করে সংগঠনের পদ দেওয়ার নামে মনোনয়ন বাণিজ্য। অনেক ক্ষেত্রে অনেকে না বুঝেই মনে করেন এসব সংগঠন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত।

ভূঁইফোড় এসব সংগঠনের নামগুলোর মধ্েয রয়েছে আওয়ামী তরুণ লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি লীগ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, জাতীয় শিশু কিশোর লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী তৃণমূল লীগ, বাংলা আওয়ামী সোনার বাংলা লীগ, আওয়ামী হকার্স লীগ, আওয়ামী বাস্তুহারা কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী শিশু লীগ, আওয়ামী প্রচার লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, মোটর চালক লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী পর্যটন লীগ, বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী অনলাইন লীগ, বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, জননেত্রী পরিষদ, দেশরতœ পরিষদ, নৌকার সমর্থক গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, আওয়ামী তৃণমূল লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, আমরা মুজিব হবো, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ, ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী পর্যটন লীগ, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা পরিষদ, চেতনায় মুজিব, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, নৌকার নতুন প্রজন্ম, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ২১ আগস্টের ঘাতক নির্মূল কমিটি, সজীব ওয়াজেদ জয় পরিষদ, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মচারী লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ঘাট শ্রমিক লীগ, আমরা নৌকা প্রজন্ম, নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী, নৌকার নতুন প্রজন্ম, ডিজিটাল ছাত্রলীগ, আওয়ামী প্রচার লীগ, আওয়ামী শিশু-যুব সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ।

এছাড়াও আছে এমন আরো নামসর্বস্ব সংগঠন। এসব সংগঠন গড়ে ওঠার পেছনে অনেক ক্ষেত্রে দলের অনেক নেতাদেরও হাত থাকে। এসব সংগঠনের আয়োজনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যান তারা। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে সমালোচনা হলেও কার্যত সবকিছু থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এসব সংগঠনের উদ্েযাক্তাদের প্রতারক আখ্যা দিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রাইজিবিডিকে বলেন, ‘এরা চিটার, বাটপার, ঠগবাজ প্রতারক, ভণ্ড। এগুলোর দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। মূল দলের যে স্পিড, যে আদর্শ, নীতি এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ধান্দাবাজি করার জন্য আর সুবিধা আদায়ের জন্য, প্রতারনা করার জন্য নাম ব্যবহার করে। লীগ তো অনেক কিছুর নামের সঙ্গেই আছে, সেইজন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুুক্ত- ব্যাপারটি এমন নয়।’

তিনি বলেন, ‘খুবই পরিস্কারভাবে গঠনতন্ত্রে আছে, কোন সংগঠনগুলোকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু নেই। এগুলো বিভিন্ন সময়ে সুযোগসন্ধানীর কাজ। এসব নাম ব্যবহার করে নিজের অবস্থানকে পোক্ত করার অপচেষ্টা মাত্র। এই যে বিকৃত রুচি-মানসিকতা, সুবিধাবাদী মানসিকতা, আওয়ামী লীগের নামকে ব্যবহার করে সুনাম নষ্ট করে বিতর্কিত করার জন্য তাদের কিছু যায় আসে না।’

সংগৃহীত- রাইজিং বিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *