সৈয়দ জুয়েল:
করোনার বিধি নিষেধে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলো বিশ্বের মানুষ। শেষ কয়েক মাসে একটু আলোর দেখা দেয়ায় স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফেরার পথে আমরা সবাই। এর মাঝে শুরু হয়েছে নানা অনুস্ঠান, খেলাধুলা। এতে করে আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশিরাও রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। দীর্ঘদিন পর ঘরের চার দেয়াল পেড়িয়ে বাংলাদেশি পরিবার একে অপরের সাথে বিভিন্ন অনুস্ঠানে মিলিত হতে পেরে স্বস্তি সবার মাঝে। তবে সেই স্বস্তির নিঃশ্বাসে ভাটা পরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। যাতে অধিকাংশ বাংলাদেশিরাই হতাশ।
কয়েক সপ্তাহর ব্যাবধানে বাংলাদেশ স্পোর্টস এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড দুটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। যেখানে বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে বিদেশের মাটিতে ছোট এক বাংলাদেশ ভাবাও ভুল হবেনা। কিন্তু এ দুটো খেলায়-ই খুটিনাটি বিষয় নিয়ে খেলোয়ার ও দর্শকদের মাঝে উত্তেজনায় হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে, যা দুঃখজনক।
অনেক স্থানীয় আইরিশ সহ এখানে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েরা এ দৃশ্য দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ়। আগত অনেক ছেলেমেয়েদের প্রশ্ন ছিলো- “এ থেকে আপনাদের কাছ থেকে আমরা কি শিক্ষা নিব”। ছোট এ কথাটি শুনে একজন বাংলাদেশি হিসেবে লজ্জিত হতে হয় সবার। দেশীয় রাজনীতি,সভা, সমাবেশ থেকে শুরু করে অধিকাংশ অনুস্ঠানেই এরকম বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে আমাদের সহ নিজ দেশের। তবে আশার কথা হলো অধিকাংশ বাংলাদেশিরাই শান্তিপ্রিয়। তারা সবসময়ই এগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
খেলা থেকে শুরু যে কোন আয়োজনে আয়োজকদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এর মাঝে সকল বাংলাদেশির সহায়তা নে পেলে সে আয়োজন সফল হয়না। এ জাতীয় ঘটনা বার বার ঘটতে থাকলে আগামী দিনে যে কোন আয়োজন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে যে কোন আয়োজক। আর এতে করে এখানের বাংলাদেশি কমিউনিটি আরো দূর্বল হবে। যেটি কারোরই কাম্য নয়। আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশিদের অনেক সুনাম রয়েছে। সে সুনামের প্রতি সন্মান জানিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। এ জাতীয় আয়োজনে অনেক দূর দূরান্ত থেকে বাংলাদেশিরা মিলিত হন দেশীয় মানুষের সাথে মন খুলে কথা বলার জন্য,প্রান খুলে সুখ,দুঃখ ভাগাভাগি করার জন্য।
এখানে অনাকাংখিত কোন বিষয় যেন সুখের ঘরে আগুন হয়ে ধরা যেন না দেয়। একজন মানুষের মৃত্যুর পরও তার ব্যাবহারকে স্নরন করেন অন্যরা। হতে পারে আপনার, আমার একসাথে মিলিত হওয়ার এটিই শেষ দিন। এই শেষ দিনটিতে আপনার, আমার আচরন কেমন ছিলো! আসুন কোন বিরোধ নয়-শুধরে নেই নিজেকে। আমরা এমন একটি শক্তিশালী গনতান্ত্রিক রাস্ট্রে থাকি, যেখানে কারো প্রতি কারো নির্ভরশীল হতে হয়না। এখানে শুধু দরকার একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সন্মান আর ভালবাসা।
দল, মত, ব্যাক্তির মাঝে মত বিরোধ থাকতেই পারে। তবে তা যেন দেশীয় কোন আয়োজনে প্রভাব না পরে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে আমাদের সবার। দিন শেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি। অন্তরে লাল সবুজের পতাকায় যেন কোন কালিমা লেপন না হয় সেজন্য একে অপরের প্রতি ভালবাসায় এগিয়ে যাবে আমাদের কমিউনিটি, এমনটাই প্রত্যাশা।