রাত পোহালেই বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কপথে ফেরীযুগের অবসান

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী জেলা শহরের দুরত্ব সড়কপথে ৩৮ কিলোমিটার। যান্ত্রিকযানে এক শহর থেকে আরেক শহরে পৌছতে সময় লাগতো ৫ ঘন্টা। পথিমধ্যে ৫টি ফেরী ছিল এ বিলম্বের প্রধান কারন। আশির দশকের পর একে একে ৪টিতে সেতু নির্মিত হলে কমতে থকে ফেরী বিরম্বনা। সর্বশেষ ফেরী ছিল বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাকে বিভক্ত করে রাখা ¯্রােতস্বিনী পায়রা নদীর লেবুখালী পয়েন্টে। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি মেগাপ্রকল্পের অন্যতম পায়রা নদে নির্মিত সেতুটি রোববার (২৪ অক্টোবর) উদ্বোধনের পর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী হয়ে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে যেতে ফেরীযুগের অবসান ঘটবে। বরিশাল থেকে পটুয়াখালীতে যেতে সময় লাগবে এক ঘন্টারও কম। দুই ঘন্টার মধ্যে পৌছানো যাবে কুয়াকাটায়। পায়রা নদে আড়াআাড়ি করে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলবাসীর একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন।
পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হালিম জানান, কাল রোববার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালী অনুষ্ঠানে অংশনিয়ে পায়রা সেতুর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এরপরই যানবহন চলাচলের জন্য সেতুটি উম্মুক্ত করে দেয়া হবে।
স্বপ্নের পায়রা সেতুতে যানবহন চলাচলের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। রাজধানী থেকে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় যেতে মাওয়া ফেরী পার হওয়ার পর ২২০ কিলোমিটার সড়কপথে থাকবেনা একটিও ফেরী। আগামী বছর পদ্মা সেতুতে যানবহন চলাচল শুরু হলে ঢাকা-কুয়াকাটা সড়ক যোগাযোগ হবে পুরোপুরি ফেরীবিহীন। ৬-৭ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় পৌছানো যাবে।
পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ মো. মাহমুদ ইছা বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে দূর্ভোগের স্মৃতিচারন করে বলেন, ১৯৭৮ সালের আগে পটুয়াখালী-বরিশালের প্রধান যোগাযোগ ছিল লঞ্চে। সময় লাগতে কমপক্ষে আটঘন্টা। পটুয়াখালী থেকে আমতলী-কলাপড়া হয়ে কুয়াকাটা ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির তখন অস্তিত্বই ছিলনা।
৭৮ সালে শুধু ইটবিছানো বরিশাল-পটুয়াখালী সড়ক নির্মিত হলে তৎকালীন জীপ গাড়িতে স্থাপন করা কাঠের বেঞ্চিতে জনপ্রতি ৭ টাকায় যাত্রীপরিবহন শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে পটুয়াখালী শহর সংলগ্ন লোহালিয়া নদী, শিয়ালী, বদরপুর, পায়রা এবং বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলার দপদপিয়ায় মোট ৫টি ফেরী পাড় হয়ে বরিশালে পৌছতে সময় লাগতো ৫ ঘন্টা। তারমধ্যে শিয়ালী ও বদরপুর ফেরী ছিল নৌকায় দড়িটানা পদ্ধতি। মাহমুদ ইসা বলেন, এরশাদ শাসনমালের মধ্যভাগে পিচ ঢালাই সড়ক এবং শিয়ালী ও বদরপুরে সেতু নির্মিত হয়। লোহালিয়া নদীতে সেতু হয় নব্বই দশকের শুরুতে। বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তণখোলায় নির্মিত সেতুতে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে যানবহন চলাচল শুরু হলে বিলুপ্ত ঘটে দপদপিয়া ফেরীর। কাল রোববার পায়রা সেতুতে যানবহন চলাচল শুরুর মধ্যদিয়ে ফেরী বিরাম্বনার অবসান ঘটবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) পটুয়াখালী জোনের কার্যাদেশ সহকারী মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ৭৮ সনের অক্টোবর মাসে সড়কপথ চালুর পাশাপাশি পায়রার লেবুখালী ও লোহালিয়া নদীতে সওজের ইঞ্জিনচালিত ফেরী চালু করা হয়।
আধুনিক প্রযুক্তি ও নান্দনিক নকশার পায়রা সেতু : নদীর দুই পাড়ে দুটি ও নদীর মাঝে একটি, মোট তিনটি পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সেতুটি। নদীর তলদেশে বসানো হয়েছে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল, যা দেশে সর্ববৃহৎ। ৩২টি স্প্যানের মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেস্ট পাইলসহ ১০টি পিয়ার, পাইল ও পিয়ার ক্যাপের ওপর নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৬৭টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট রয়েছে এটিতে। দেখলে মনে হবে যেন শুন্যের ওপর দাড়িয়ে আছে সেতুটি। সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় নদী থেকে সেতুটি ১৮.৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে। এটি এক্সট্রা ডোজ কেবল সিষ্টেমে তৈরী দেশের দ্বিতীয় সেতু। চারলেন বিশিষ্ট মুল সেতুটির দৈঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়ক ১ হাজার ২৬৮ মিটার। মুল সেতুটি আলোকসজ্জা করায় রাতে ঝলমল করে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, দেশে এই প্রথম বসানো হয়েছে হেলথ মনিটরিং সিষ্টেম। ভূমিকম্প, বজ্রপাত ও ওভারলোড গাড়ির ক্ষেত্রে এই সিষ্টেম আগাম সংকেত দেবে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে। পদ্মাসেতুর পিলারে পর পর দুইবার ফেরীর ধাক্কা লাগায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাই পায়রা সেতুর দুটি পিলারে ষ্টীলে কাঠামো দিয়ে প্রতিরক্ষাব্যুহ তৈরী করা হয়েছে।
সওজের তত্ত্বাবধানে ১ হাজার ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে পায়রা সেতু নির্মান বাস্তবয়িত হয়েছে। যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং কুয়েত ফান্ড ফর ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশল ডেভেলপমেন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *