মা ইলিশ রক্ষায় প্রশ্নবিদ্ধ অভিযান

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ সোমবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। এবার মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে হামলা, সংঘাতের ঘটনা বেশ আলোচিত ছিল। এতে একজন কোস্টগার্ড সদস্য নিহত হয়েছেন। হামলার শিকার হয়েছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, ভুমি ও মৎস্য কর্মকর্তা। ইলিশ নিধন হয়েছে দেদাড়ছে। রোববারও বরিশালে এক বাড়ি থেকে ১৫ মন ইলিশ উদ্ধার হয়েছে। শেষ মুহর্তে নদী তীরে হাট বসেছে মা ইলিশ বিক্রির। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযান বাধাগ্রস্থের নেপথ্যে মৌসূমী জেলেসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার জড়িত। তারাই মা ইলিশ ধরতে নদীতে জেলেদের নামিয়েছে। এজন্য রোববার পর্যন্ত বিভাগের ৬১৫ জনকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। গত বছর ২২ দিনে জেল দেয়া হয়েছিল ১ হাজার ১৩৩জনকে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের দাবী ৯০ ভাগ মা ইলিশ রক্ষা করা গেছে। কিন্তু অভিযান বেশি হলেও গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় অর্ধেক জেল-জরিমানা হওয়ায় অভিযানের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুস সালেহীন বলেন, বিভাগের ৬ জেলায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় রোববার পর্যন্ত ৬১৫জনকে জেল, জরিমানা ১৮ লাখ টাকা, ইলিশ উদ্ধার ৮ লাখ মেট্রিক টন এবং জাল উদ্ধার হয়েছে ৫৪ লাখ মিটার। এবার গত ২০ দিনে অভিযান হয়েছে ২ হাজার ৫০৫টি। অপরদিকে গতবছর বিভাগে ২২ দিনে অভিযান হয়েছে ২ হাজার ৫০৫টি। অভিযান বেশি হলেও দন্ড কম প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক নাজমুস সালেহীন বলেন, এবার অভিযান ছিল বেশ কড়াকড়ি। তাই জেলেরা নদীতে কম নেমেছে।

তবে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহর্তে বরিশালের মেঘনা, আড়িয়াল খা, সন্ধ্যা, কীর্তনখোলা, কালাবদরে ইলিশ ধরার মহোৎসব চলেছে। রোববার সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদের রাজাপুর গ্রামে এক বাড়ি থেকে ১৫ মন ইলিশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে মৎৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস স্বীকার করেছেন। গত কয়েকদিনে হিজলার আবুপুর ও মেহেন্দীগঞ্জের চরে হাট বসে মা ইলিশের।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, জনগনের অল্প টাকায় মাছ খাওয়ার প্রবনতার কারনে জেলেরা নদীতে নেমেছে। অনেত আড়তদারও এর সাথে জড়িত। হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তিনি দাবী করেন প্রতিরোধ করেছেন বলেই বাধা এসেছে। রোববার পর্যন্ত জেলায় ৪৪৬ জনকে জেল দেয়া হয়েছে। তবে গতবছর ২২ দিনে জেল হয়েছিল ৪০৪জনের।

জানতে চাইলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির বরিশাল জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন সিকদার বলেন, এবার হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে যেভাবে অভিযান হয়েছে তাতে ইলিশ রক্ষার চেয়ে জেলেদের উপর অত্যাচার বেশি হয়েছে। হামলা হয়েছে বাড়িতে ঢুকে গর্ভবতি নারীর উপরেও। তিনি দাবী করেন, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জের নদীতে দেদাড়ছে যারা মা ইলিশ ধরেছে তারা মৌসুমী জেলে।

এ প্রসঙ্গে হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ: হালিম বলেন, মৎস্যজিবীরা অভিযান ব্যার্থ দেখতে চায়। তারা বানোয়ট খবর ছড়ায়। একই কথা জানিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, যারা চোরের মত মা ইলিশ ধরেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তবে জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, ২২ দিনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সফলতা ৬০ ভাগের বেশী হবে না। এবছর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বরিশালের মেঘনায় বেপরোয়াভাবে ইলিশ নিধন করা হয়েছে। অভিযান চালাতে গিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং হিজলায় কোষ্টগার্ডের জাহাজের ওপর হামলাসহ একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, প্রভাবশালী মাছঘাট মালিকদের ভাড়াটিয়া মৌসুমী জেলেরা ইলিশ নিধন করে প্রশাসনের ইন্ধনে হামলা চালনোর ধৃস্টতা দেখিয়েছে।

এব্যপারে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে এর সাথে কেবল জেলে নয় মৌসুমী জেলে এবং চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও জড়িত। তারা ঝুকি নিয়ে অভিযান করেছেন। হিজলায় একজন কোস্টগার্ড নিহত হয়েছেন। একই উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা হামলার শিকার হন। মেহেন্দীগঞ্জে ইউএনও হামলার শিকার হয়েছেন। বাবুগঞ্জে ভুমি কর্মকর্তা হামলার মুখে পরেন।

ঝালকাঠীতে ইউএনও হামলার শিকার হন। এসব ঘটনায় কারা জড়িত তা চিহিৃত করতে আইনশৃংখলাবাহিনী মামলা করছে। তারা মন্ত্রনালয়েও রিপোর্ট দিচ্ছেন। তবে তাদের অবজারভেশন অনুযায়ী এবার ৯০ ভাগ মা ইলিশ রক্ষা করা গেছে। রোববার মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে ইলিশ রক্ষা অভিযানের এসব চিত্র তুলে ধরা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *