পিরোজপুর ছাত্রলীগের কমিটির ভাঙ্গার যত কারন

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : গঠনিক ব্যর্থতা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে জড়ানোসহ বহুদোষে দুষ্ট পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শুক্রবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল- নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার কথা জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ওই বিবৃতিতে আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নেতাদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়েছে কেন্দ্র নির্ধারিত প্রতিনিধি দলের কাছে। কেন্দ্রের সহ-সভাপতি আওলাদ খানসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল পিরোজপুরে উপস্থিত থেকে জীবন বৃত্তান্ত গ্রহণ করবেন।

পিরোজপুর ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ৬ মে জাহিদুল ইসলাম টিটুকে সভাপতি এবং অনিরুজ্জামান অনিককে সাধারণ সম্পাদক করে পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। তখন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ৯০ দিনের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রায় ৪ বছরেও সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক অনিরুজ্জামান অনিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। তারা কেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হলেন তার কারন খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগে বিরাজমান বিভক্তিতে জড়িয়ে পড়াসহ ব্যক্তিগত আখের গোছাতে লিপ্ত থাকায় টিটু-অনিক একমত হয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি।

পিরোজপুর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সদ্য বিদায়ী সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু ছিলেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ একে,এম,এ আউয়ালের অনুসারি আর বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অনিরুজ্জামান অনিক ছিলেন পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর শ.ম রেজাউল করিমের সমর্থক। সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচিও টিটু এবং অনিক পৃথকভাবে পালন করেন। টিটুর কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একে,এম,এ আউয়াল এবং অনিক এর কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান ফুলু অংশ নেন।

এদিকে অভিযোগ আছে, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর টিটু এবং অনিক সাংগঠনিক কাজের চেয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন অর্থ উপার্জন ও গ্রুপ ভারি করার কাজে। টেন্ডারবাজি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশয় দেওয়ারও অভিযোগ আছে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি জাহিদুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে অনিরুজ্জামান অনিকের দূরত্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। ওই দূরত্বের জের ধরে ২-৩ দিন আগে অনিরুজ্জামান অনিক তার একার স্বাক্ষরে পিরোজপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন সদ্য বিদায়ী সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিটু এককভাবে সদর উপজেলা কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদ জানান। অভিযোগ করা হয়েছে, অনিক অর্থ বাণিজ্য এবং ব্যক্তিগত দল ভারি করতে একাই সদর উপজেলা কমিটি ঘোষণা করেন।

কেন্দ্র থেকে কমিটি বিলুপ্ত করা এবং বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদায়ী সভাপতি জাহিদুল ইসলাম টিটু  বলেন, প্রধানত বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক অনিরুজ্জামান অনিক কর্তৃক এককভাবে সদর উপজেলা কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ হন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তাই তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। টিটুর মতে অনিকের দোষে তিনিও দোষি হয়েছেন। সাংগঠনিক ব্যর্থতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়াসহ অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেন টিটু। অনিরুজ্জামান অনিকের মোবাইল ফোন (০১৭২-৪৪৯৪৭৩১) বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আওলাদ খান বলেন, আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যেই তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত অপর দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে পিরোজপুর গিয়ে জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নেতাদের জীবন বৃত্তান্ত গ্রহণ করবেন। আওলাদ স্বীকার করেন পদ প্রত্যাশী নেতারা তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

এদিকে জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে সভাপতি-সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত চাওয়ায় ওই দুই পদে আগ্রহী ছাত্র নেতারা কেন্দ্রের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

ওই সূত্র মতে সভাপতি পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আসিফ ইকবাল, ছাত্রলীগ নেতা হাফিজুর রহমান জুম্মান, ইফতেখার মাহমুদ সজল ও খান রাসেল। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বারী তালুকদার জয়েন, জুনায়েদ রাসেল, সৈয়দ মাহিন জাকারিয়া, ইনতিয়ার শুভ ও শাহরিয়ার ইমন সবুজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *