নাগরিক রিপোর্ট:
মধ্য চৈত্রে ভ্যাপসা গরম আর থেমে থেমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বরিশাল নগরে অসহনীয় অবস্থার সৃস্টি হয়েছে। গত ক’দিন ধরে গরমে যেন পুড়ছে নগরবাসী। তার উপর সকাল থেকে রাত অব্দি কয়েক দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট। মঙ্গলবার বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে নগরের হাসপাতালে খোজ নিয়ে জানা গেছে, গরমে ডায়রিয়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু সহ বৃদ্ধরা। চিকিৎসকরা পানি ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরার্মশও দিয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা গড়াতে বরিশাল নগরের প্রধান সড়কগুলোতে অনেকাংশে মানুষের ভীর কম লক্ষ্য করা গেছে। আর দুপুরে নগর অনেকটাই ফাঁকা ছিল আদালতপাড়া, সদর রোড, টাউন হল সহ গুরুত্বপূর্ন স্থান। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও দর্শনার্থীদের ভীর ছিল কম। গরমে নগরের ত্রিশগোডাউন, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্কে মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই সীমিত।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রনব কুমার রায় বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিল সোমবার ছিল ৩৪.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রোববার ছিল ৩৩.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তামমাত্রা আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। উত্তরাঞ্চলে বৃস্টি হওয়ায় ৩১ মার্চ বৃস্টি হতে পারে বলে জানান উচ্চ পর্যবেক্ষক প্রনব।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুতের লোড শেডিং কয়েক দফায় হচ্ছে। মঙ্গলবারও সকালে সাকুর্লার রোড, নবগ্রাম সড়কে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। একই ঘটনা ঘটে বিকেলেও। নগরীর প্যারারা রোডের বাসিন্দা আনোয়ারুল হক বলেন, বিদ্যুতের সংকট যদি না থাকে তাহলে কেন প্রতিদিন বিভ্রাট হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিভ্রাট আর শিশু-বৃদ্ধদের কস্ট হচ্ছে।
বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের লোডশেডিং এর কথা অস্বীকার করে বলেন, হয়তো লাইন মেরামত করতে গিয়ে মাঝে মাঝে কোন এলাকার বিদ্যুৎ কিছু সময় বন্ধ রাখতে হয়।
গরমে ডায়রিয়াসহ নানা রোগের বৃদ্ধি:
ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বরিশাল বিভাগে বিগত দিনের চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা ১০ জন বেড়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার আরও বাড়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা। বিগত ২৪ ঘন্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে ২৪৬ জন রোগী। এর মধ্যে এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৮ জন রোগী। এক সপ্তাহ আগে ২৪ ঘন্টায় প্রায় ১শ’ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্তের পরিসংখ্যান রয়েছে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ে।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন ৮ জন রোগী। রোগীর স্বজনরা জানান, পেটের পীড়া সহ পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের স্বজনরা।
বরিশাল জেনারল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. দিলরুবা তানিম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা বেড়েছে। এ কারনে দুষন এবং জীবানু ছড়িয়ে পড়ছে। ঐসব জীবানু সুপেয় পানি এবং খাবারের সাথে মিশে পেটে গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সাধারন মানুষ। এ জন্য খাবার ঢেকে রাখা, বাঁসি পঁচা খাবার না খাওয়া এবং বিশুদ্ধ পানি পান করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃঞ্চ মন্ডল বলেন, চৈত্র-বৈশাখে পানিবাহিত এ রোগটির প্রকোপ দেখা দেয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নদী-খালের পানি ব্যবহকারীরা ডায়রিয়ায় বেশী আক্রান্ত হন। নগরের পথচারীরা গরমে পিপাসু হয়ে পথেঘাটে শরবতসহ নানা মুখরোচক খাবার খাচ্ছেন। এতেও ডায়রিয়া, আমাশয়, চর্মরোগ ছড়াতে পারে। বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, প্রতি বছর এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এ জন্য সবাইকে খাদ্যাভাসে সতর্ক থাকতে হবে।