পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া- মীর্জা ফখরুল

Spread the love

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু তো কারও পৈত্রিক সম্পত্তি না, পদ্মা সেতু রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার উদ্যোগে নির্মাণ করা। এখানে আরও একটি কথা আপনার সকলের অবগতির জন্য জানিয়ে দিই- পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন খালেদা জিয়া। একদিকে না, পদ্মা সেতুর দুই দিকেই ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছিল।এগুলো কিন্তু কেউ উচ্চারণও করে না, বলেও না।’

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল

ফখরুল বলেন, ‘যমুনা সেতু যখন তৈরি হয় তখন একই অবস্থা তৈরি করেছে। যারা করলেন তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একজনের নাম, একজনের মূর্তি তৈরি করে নামটাই পরিবর্তন হয়ে গেল। অর্থাৎ এই দেশে যেই ক্ষমতায় যায়, সবকিছু দখল করে নিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর বিষয়েও ঘটনাগুলো একই ভাবে ঘটছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পদ্মা সেতু সম্পর্কে যে অহেতুক, অযৌক্তিক কথাবার্তা বলে দেশকে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংকট টা পদ্মা সেতু নয়, সংকট টা ভোটের অধিকার, সংকট টা আমার অধিকার, সংকট টা মিথ্যা মামলার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সংকট তো হচ্ছে বিচার না পাওয়া; সংকটতো হচ্ছে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া। এই বিষয়গুলো হলো আমাদের সংকট, আমরা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলছি। এসব বিষয়ে সমস্ত দেশকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে ও জনগণকে একত্রিত করার চেষ্টা করছি। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেরে ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে ফখরুল বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি একটি কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের যে দুর্ঘটনা ঘটেছে এ জন্য আমরা শুধু শোকাহত নই; এই ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ, বিষ্মিত। আমরা মনে করি যে সম্পূর্ণ সরকারের ব্যর্থতা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে ২২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং আরও অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, একটা কন্টেইনার পোর্টে যদি যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে এর দায় কার? সেটা অগ্নি থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হোক বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা হোক। ফলে যে কোনো দুর্ঘটনাকে মোকাবিলা করার ব্যবস্থা তারা করতে পারেনি। পোর্টে শুধুমাত্র উন্নয়নের কথা আওয়ামী লীগ সরকার বলে, কিন্তু সীতাকুণ্ডের এই ঘটনা আবার প্রমাণ করেছে এটা তাদের কথা মিথ্যা কথা। কারণ দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নাই, কত ভঙ্গুর।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এমনকি সীতাকুণ্ডের ঘটনায় যারা এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, হাসপাতালে আছেন তাদের অক্সিজেন সাপ্লাই নেই। তাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই, সেখানে কোন বার্ন ইউনিট নেই। এই ঘটনায় আবার প্রমাণ হলো সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। তারা দুর্ঘটনা ও জনগণের জানের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের জন্য যে একটা প্রয়োজন আধুনিক কন্টেইনার পোর্ট, সেটা তৈরি করতে আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

‘৭৫-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেক বার’ ছাত্রদলের দেওয়া এ স্লোগান সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭৫-এর হাতিয়ার বলতে কি বোঝানো হয়, ৭৫ এর হাতিয়ার বলতে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর একটা ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত থেকে দেশকে, জাতিকে রক্ষা করার জন্যে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখনকারই হাতিয়ারের কথা বলা হয়। যদিও এ কথাগুলো আমরা বলিনি, যদিও এই কথাগুলো আমাদের দলের কথা নয়, আমি জানিনা তারা কীভাবে বলেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘৭৫ এর হাতিয়ার বলতে কোন বিশেষ ব্যক্তিকে হত্যা করার জন্য বা কোনো কিছুকে ধ্বংস করার জন্য নয়। ৭৫-এর হাতিয়ারের কথা যদি কেউ বলে থাকে তাহলে এটা দেশ ও জনগণকে রক্ষা করার জন্য সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে। তখন যে পরিবর্তনটা এসেছিল জিয়াউর রহমানকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে এটাকে আমরা বোঝাই। কিন্তু ৭৫-এর হাতিয়ার স্লোগানটা আমরা দিইনি।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে বর্তমান সরকার পরিবর্তন করতে হবে। তারপর একটা নিরপেক্ষ সরকার আনতে হবে এবং এই নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাহলে জনগণ তাদের ভোট প্রয়োগ করে পছন্দের সরকার গঠন করবে।

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *