পরকিয়ার জেরে খুন হন পল্লী চিকিৎসক মিলন : শ্বশুর ও পুত্রবধু গ্রেফতার

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের চরছয়গাঁও গ্রামের মিলন দপ্তরি (৩০) নামের এক পল্লী চিকিৎসক ছয় মাস আগে নিখোঁজ হন। বহু খোঁজাখুঁজি করেও মিলন দপ্তরির সন্ধান না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে হিজলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন নিখোঁজ মিলনের বড় ভাই সবুজ দপ্তরি। সেই জিডির সূত্র ধরে মিলনের নিখোঁজ হওয়ার রহস্য উদঘাটন করেছে হিজলা থানা পুলিশ।

হিজলা থানার দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এক গৃহবধু এবং তার শ্বশুর পরিকল্পনা করে মিলনকে হত্যার পর তার লাশ মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তদন্ত করতে গিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হওয়ার পর গত সোমবার ওই গৃহবধু ও তার শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মিলন দপ্তরিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর মঙ্গলবার রাতে গৃহবধু ও তার শ্বশুরকে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হিজলা থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মোঃ ইউনুস মিয়া  এ তথ্য নিশ্চিত করে বুধবার দুপুরে বলেন, গৃহবধু ও তার শ্বশুরকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
হত্যার শিকার পল্লী চিকিৎসক মিলন দপ্তরি হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের চরছয়গাঁও গ্রামের আব্দুল খালেক দপ্তরির ছেলে। হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়া গৃহবধু ও তার শ্বশুর হলেন একই উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের পূর্ব খাগেরচর গ্রামের মৃত আব্দুর রব ঘরামির ছেলে আব্দুর রশিদ ঘরামি (৬৪) ও তার প্রবাসী ছেলে মনির হোসেনের স্ত্রী রাহেলা বেগম (২৭)।

হিজলা থানার ওসি মোঃ ইউনুস মিয়া বুধবার বলেন, শ্বশুর রশিদ ঘরামি ও পুত্রবধু রাহেলা মিলন দপ্তরিকে হত্যার কথা স্বীকার করে পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার কথা স্বীকার করে পুনরায় তারা জবানবন্দি দেন।
শ্বশুর রশিদ ঘরামি ও পুত্রবধু রাহেলা বেগমের স্বীকারোক্তির বরাদ দিয়ে ওসি মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, পল্লী চিকিৎসক মিলন দপ্তরির সঙ্গে গৃহবধু রাহেলা বেগমের পরকিয়া প্রেম ছিল। ঘটনাটি শ্বশুর আব্দুর রশিদ জানতে পারেন। এতে ক্ষুব্ধ আব্দুর রশিদ পুত্রবধু রাহেলার মাধ্যমে গত ৩০ জানুয়ারি রাত ১০ টার দিকে ফোন করে মিলনকে তাদের বাড়িতে আনেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্দুর রশিদ মিলনের চোখে মরিচের গুড়া নিক্ষেপ করেন। এ সময় মিলন আব্দুর রশিদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুর রশিদ ভারী লাঠি দিয়ে মিলনের মাথায় জোরে আঘাত করে। এতে মিলন ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। আব্দুর রশিদ ও রাহেলা বেগম মিলনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শ্বশুর ও পুত্রবধু মিলে মিলনের হাত-পা রশি দিয়ে বেধে বাড়ির পাশ্ববর্তী মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়। এখন পর্যন্ত মিলনের লাশ পাওয়া যায়নি।

মিলন দপ্তরি নিখোঁজের পর তার বড় ভাই সবুজ দপ্তরি ১ ফেব্রুয়ারি হিজলা থানায় জিডি করেছিলেন। জিডি’র তদন্ত করে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকান্ডের শিকার মিলনের সর্বশেষ অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শ্বশুর আব্দুর রশিদ ঘরামি ও পুত্রবধু রাহেলা বেগমকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। পরে তারা জিজ্ঞাসাবাদে মিলনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

ওসি মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, সবুজ দপ্তরির করা জিডিটি হত্যা মামলার এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। হিজলা থানার পরিদর্শক তদন্ত আব্দুর রহমান মিলন দপ্তরি হত্যা মামলা তদন্ত করবেন। ##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *