প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরম বন্ধু গলওয়ে সিটি মেয়র

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ আয়ারল্যান্ডের গলওয়ে শহর যেন ছবির মত সুন্দর। এই শহরের সৌন্দর্য্য ও উন্নয়নের পুরোধা গলওয়ে সিটি মেয়র নীল মেকনিলস। আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরম বন্ধু তিনি। বাঙ্গালীদের কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে মুগ্ধ এ মেয়র। ডৈইলি  নাগরিককের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তার কার্যালয়ে গেলে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বিনয়ী জানতে চাওয়া- চা, না কফি খাবে? কফি বলার পরে নিজেই কফি শপের লাইনে দাঁড়িয়ে কফি নিয়ে এসে আমাদেরকে তা পরিবেশন করলেন। তিনি হলেন সদা হাস্যজ্জল মেয়র -নীল মেকনিলস্। আয়ার‌ল্যান্ডের গলওয়ে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তিনি। যিনি গলওয়েতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের একজন পরম বন্ধু হিসাবে খ্যাতি পেয়েছেন। গলওয়ের নানা সমস্যা ও সমাধান, একটি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা, বিদেশী বিনিয়োগ, নগরের সৌন্দর্য বর্ধনে পদক্ষেপ, নানাবিধ বিষয়ে খোলামেলা কথা বললেন দৈনিক নাগরিকের সাথে| গলওয়েতে মেয়রের ভবনে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন ‘ডৈইলি নাগরিক’ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ সোয়াইব আহম্মেদ (সৈয়দ জুয়েল)|

সৈয়দ জুয়েল : জনগনের ভালবাসায় কাউন্সিলর থেকে মেয়র, কেমন উপভোগ করছেন সময়টা?

নীল ম্যাকনিল : সততা, দায়িত্ববোধ, আর  জনগনের ভালবাসা আমাকে এ জায়গায় এনেছে। আমি উপভোগ করছি আমার কাজকে।

সৈয়দ জুয়েল : আপনার সময়ে সবচেয়ে বড় অর্জন কি?

নীল ম্যাকনিলস : ট্রানসপোর্টের উন্নয়ন, মানবাধিকার, মানসিক স্বাস্হ্য, নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে পদক্ষেপ, নয়টি মেডিক্যাল ডিভাইস কোম্পানী, দুইটি কলেজ উল্লেখযোগ্য।

 সৈয়দ জুয়েল : গলওয়ে সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হাউজিং, এ সমস্যা নিরোধে করপোরেশন কোন উদ্যোগ নিয়েছেন?

নীল ম্যাকনিলস্ : হ্যা । আমরা ১১০০ নুতন বাড়ী তৈরীর কাজে হাত দিয়েছি,আগামী দু বছরে এর কাজ শেষ হবে। তখন এ সমস্যা আর থাকবেনা। এ ছাড়া চীনও হাউজিং এ প্রজেক্টে ভবিষ্যতে বিনিয়োগে আগ্রহী দেখিয়েছে।ইউরোপীয় ইউনিয়নে কিছু আইনি জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে ভবিষ্যতে হাউজিং সমস্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

সৈয়দ জুয়েল : শহর সুন্দর রাখার জন্য একটা সংগঠন আছে tidy Galway, এটার চেয়ারপার্সন আপনি। এ সময়টাতে প্রচুর পর্যটক আসেন গলওয়েতে। কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনে?

নীল ম্যাকনিলস্ : ৩ মিলিয়ন ইউরো খরচ করা হয়েছে শুধু ফুলের টব, আর নানান ফুল গাছ রোপন করে। এছাড়াও ট্রান্সপোর্টের সুবিধার বাড়ানোর জন্যও যা যা করা দরকার, তা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।

সৈয়দ জুয়েল : পুরাতন ডাবলিন রোডে স্কুল, কলেজ, অফিস ছুটিকালীন অনেকটা সময় জ্যামে আটকে থাকতে হয়। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এ নিরোসনে কোন উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে কি?

নীল ম্যাকনিলস্ : বার্না থেকে পার্কমোর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার একটা সংযোগ সড়ক পরিকল্পনাধীন আছে। ২০২০ সালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। এটা বাশ্তবায়ন হলে এ জ্যামটা আর থাকবেনা।

সৈয়দ জুয়েল : গলওয়ে বসবাসরত বাংলাদেশী সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

নীল ম্যাকনিল : গলওয়েতে স্পোল্যান্ডের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠ বাংলাদেশীরা। সততা, নিস্ঠা, কাজের প্রতি কমিটমেন্ট, বাংলাদশী সংস্কৃতি, আইরিশ সংস্কৃতির প্রতি তাদের ভালবাসা দেখে আমি অভিভূত। বাংলাদেশীরা আইরিশ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

সৈয়দ জুয়েল : গলওয়েতে বাংলা ভাষার স্কুল স্থাপন অনেক দিনের দাবী, স্কুলে একজন বাংলা শিক্ষকের নিয়োগদানে কর্পোরেশনের কোন ভাবনা আছে কি-না?

নীল ম্যাকনিলস : ২০২০ ক্যাপিটাল কালচারে একটা বড় প্রজেক্ট আসবে, সেখানে বিষয়টা উত্থাপন করার পরে আমরা এ বিষয়ে কাজ করতে পারবো। আমি চেস্টা করবো  আমার সেরাটাই দিতে।

সৈয়দ জুয়েল : এ বছর কতজন ট্যুরিস্ট এসেছেন গলওয়েতে?

 নীল ম্যাকনিলস : তিন মিলিয়নের মত হবে, এদের বড একটা অংশই আমেরিকান।

সৈয়দ জুয়েল : কিছুদিন পূর্বে আপনি চীন সফরে ছিলেন। চীন গলওয়েতে কোন কোন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী?

নীল ম্যাকনিলস : শিক্ষা, ট্রানসপোর্ট, হাউজিং,এ বিষয়গুলোতে তারা বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়েছে।

সৈয়দ জুয়েল : আপনার রাজনৈতিক Idol কে?

নীল ম্যাকনিলস : প্রেসিডন্ট মাইকেল ডি হিগ্যান্স (বর্তমান)।

 সৈয়দ জুয়েল : কবে নাগাদ জাতীয় নির্বাচন হবে?

নীল ম্যাকনিলস : এ বছরের নভেম্বরে। তবে ব্রেক্সিটের জন্য একটু দেরি হতে পারে।

সৈয়দ জুয়েল : একজন লেবার নেতা হিসাবে কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনের?

নীল ম্যাকনিলস : লেবার পার্টি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আশা করছি গত নির্বাচনের ফলাফলের চেয়ে আরও ভাল হবে এবার। আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সৈয়দ জুয়েল : মেয়রের মেয়াদ শেষ, কি ভাবছেন ?

নীল ম্যাকনিলস : নভেম্বরে নির্বাচন।আমি একজন প্রার্থী। আমাকে গলওয়ের মানুষ ভালবাসে, যার জন্য তারা আমাকে বার বার নির্বাচিত করেছেন। আমি আশাবাদী, আমার সততা, জনগনের প্রতি আমার ভালবাসা। তারা আমার পাশেই থাকবেন।

সৈয়দ জুয়েল : আপনি একজন সফল মেয়র। সফলতার মূলমন্ত্র কি?

নীল ম্যাকনিলস : কঠোর পরিশ্রম, জনগনের প্রতি ভালবাসা, কাজকে ভালবাসা, নিজের জায়গা থেকে জনগনের জন্য সেরাটা দেয়া, সততা। এটা ই মূলমন্ত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *