লাইনে দড়িয়ে তরকারি কেনা জর্জা মেলোনি ইতালির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী

Spread the love
ইতালির নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী জর্জা মেলোনি জয় পেয়েছেন বলে আভাস মিলেছে।  এর ফলে তিনি এখন দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। মেলোনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির সবচেয়ে কট্টর সরকারের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জর্জিয়া মেলোনির জন্ম ১৯৭৭ সালে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি ইতালির রাজনৈতিক দল মোভিমেন্তো সোশিয়ালে ইতালিয়ানোর (এমএসআই) তরুণদের সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দলটি গড়ে তুলেছিলেন ইতালির ফ্যাসিবাদী শাসক বেনিতো মুসোলিনির অনুসারীরা। এই সংগঠনকে তার ‘দ্বিতীয় পরিবার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন মেলোনি। মেলোনির যখন জন্ম হয়, তখন তার মায়ের বয়স ছিল ২৩ বছর। এর মাত্র দেড় বছর আগেই মেলোনির বড় বোন আরিয়ানা পৃথিবীতে এসেছিল। সংসারের খরচ মেটাতে নানা ধরনের পেশার সঙ্গে জড়িয়েছিলেন মেলোনির মা। কিশোরী বয়সেই একই পথে হেঁটেছিলেন মেলোনি। পানশালার কর্মী থেকে বাচ্চাদের দেখভাল—অনেক কিছুই করতে হয় তাঁকে।
মেলোনির বাবা ছিলেন ইতালির রাজধানী রোমের উত্তরাঞ্চলের ধনী এলাকার বাসিন্দা। পেশায় একজন হিসাবরক্ষক। মেলোনির শৈশবেই তিনি তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। পরে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে বসবাস শুরু করেন। মেলোনিদের দেখতে অবশ্য মাঝেমধ্যে আসতেন। তবে ১১ বছর বয়সে মেলোনি সিদ্ধান্ত নেন, বাবার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখবেন না। মেলোনিকে নিয়ে ইতালির আবরুজো অঞ্চলে ব্রাদার্স অব ইতালির গভর্নর মার্কো মার্সিলিও বলেন, ‘কোনো কিছু পেতে হলে কীভাবে লড়াই করতে হয়, তা তিনি ছোটবেলা থেকেই শিখেছেন। এটাই তার চরিত্র গঠন করেছে।’
রোমের লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক লরেঞ্জো কাস্তেলানি বলেন, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সুর বেশ নরম করেছেন মেলোনি। আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি তাঁর যে অবিশ্বাস ছিল, সেদিক দিয়েও নরম হয়েছেন। একটি শক্তিশালী দল হিসেবে সরকারে আসতেই নিজের আচরণে বেশ সাবধানতার সঙ্গে পরিবর্তন এনেছেন তিনি। সমালোচকেরা বলছেন, মেলোনির এই সুরবদল শুধুই লোক দেখানোর জন্য। ইতালির ইউনিভার্সিটি অব বোলোনিয়ার অধ্যাপক পিয়েরো ইগনাজি বলেছেন, ‘কোনো পরিবর্তন আসেনি। ইতালির ডানপন্থী রাজনীতির যে চরিত্র, তা নতুনভাবে দেখা যাচ্ছে। আর নব্য–ফ্যাসিবাদকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।’ তার ভাষ্যমতে, মেলোনির সুরে যে পরিবর্তন, সেখানে ছদ্মবেশ রয়েছে।
৪০ বছর ধরে আনা মারিয়া তর্তোরা রোমের বাজারে বিশ্বস্ত গ্রাহকদের কাছে পাকা টমেটো এবং তাজা শসা বিক্রি করেছেন। তিনি কখনো ধারনাও করেননি ছোট্ট যে মেয়েটি তার দাদার হাত ধরে সেখানে তরকারি কেনার জন্য একসময় লাইনে এসে দাঁড়াতো সে এখন ইতালির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছে। মেলোনির দাদা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আনা মারিয়া বলেন, ‘তিনি একজন দারুণ মানুষ ছিলেন এবং তার নাতনীকে খুব ভালবাসতেন। মেলোনি আমার শিম খেয়েই বড় হয়েছে। ভালো খেয়েছে সে এবং ভালোই বেড়ে উঠেছে।”
বাজারটি গারবাতেল্লাতে নামে একটি এলাকায় অবস্থিত। রোমের দক্ষিণাঞ্চলের এই জায়গাটিতে শ্রমজীবী শ্রেণীর বাস এবং ঐতিহ্যগতভাবে বামদের একটি ঘাঁটি বলে পরিচিত। বেনিতো মুসোলিনির পর ইতালির প্রথম উগ্র ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে থাকা একজন রাজনীতিকের বেড়ে ওঠার জায়গা হিসেবে এলাকাটি একেবারেই বেমানান।
ইতালির নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর দেশটির রাষ্ট্রপতি সার্জিও মাতারেলা একটি স্থিতিশীল সরকারের নেতৃত্ব কে দিতে পারবেন সেটি নির্ধারণ করতে দলীয় নেতাদের সাথে পরামর্শ করবেন। জর্জা মেলোনি যুক্তি দেবেন তিনি এই দায়িত্বের জন্যে একদম সম্মুখভাগে রয়েছেন।
বামপন্থী বাবা আর ডানপন্থী মা
রোমে জন্মগ্রহণ করা জর্জা মেলোনির বয়স যখন মাত্র এক বছর তখন তার বাবা ফ্রান্সেসকো পরিবারকে ছেড়ে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে চলে যান। ফ্রান্সেসকো ছিলেন বামপন্থী আর তার মা আনা ডানপন্থী ছিলেন। অনেকে মনে করেন বাবার অনুপস্থিতিতে প্রতিশোধে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছেন।
তার পরিবার নানাবাড়ির কাছে গারবাতেল্লায় চলে যায়। সেখানেই ১৫ বছর বয়সে নব্য ফ্যাসিবাদী দল ইতালিয়ান সোশাল মুভমেন্টের যুব ফ্রন্টে যোগ দেন তিনি। পরে দলটির উত্তরসূরি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের ছাত্র শাখার সভাপতি হন তিনি।
মার্কো মার্সিলিও গারবাতেল্লার এমএসআই অফিসে একটি সভা করছিলেন। ঠিক তখন ১৯৯২ সালে জর্জা মেলোনি তার দরজায় কড়া নেড়েছিলেন। বয়সে দশ বছরের বড় মার্সিলিও তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং রাজনৈতিক মিত্র হয়ে ওঠেন। মার্সিলিও আজ আবরুজো অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *