জনগণের বাঁশ, জনগণের ঝাড়

Spread the love
সৈয়দ জুয়েল : রাজনীতির নোংরা খেলায় তৃতীয় বিশ্বের তকমা শুধু বাংলাদেশ নয়। ভারত,পাকিস্তান,শ্রীলঙ্কা সহ বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে এ তালিকার শীর্ষে। বাংলাদেশ যেহেতু নিজের দেশ,তাই সেটি নিয়েই আলোচনা করা যুৎসই। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আহামরি কোন পরিবর্তন আসেনি। বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দিনকে দিন তলানিতে।
এখানে ভোটের মাঠের স্লোগান,নেতাদের নিয়ে স্লোগান সবকিছুই সেই মান্ধাতা আমলের। নতুনত্ব নেই কিছু। একই সুর শুনতে শুনতে এগুলো এখন বড়ই বেসুরা। বিশেষ করে অমুক ভাইয়ের চরিত্র,ফুলের মত পবিত্র! অমুক নেতার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে! নেতা তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়িনাই! আরো কত কি! আর যত বড় নেতা,পাতি নেতা, আউলা নেতা রয়েছেন,সবাই জনগনকে বেঁচে দেয়ার এক প্রতিযোগিতা। কথার শুরু জনগন দিয়া, শেষ জনগন দিয়া। এত ভালবাসা জনগনের জন্য থাকলে জনগন তো আজ গনতন্ত্রের স্বর্গ সুখে থাকা উচিত ছিলো।
স্বাধীনতার পর থেকে আসলেই কি সেই স্বর্গ সুখ পেয়েছি আমরা! ঘর থেকে বের হলে জীবিত না মৃত ফিরবো, শব্দদূষণে বয়রা হওয়ার অবস্থা,চিকিৎসা ব্যাবস্থা ভঙ্গুর। যোগাযোগ,শিক্ষা,বিভিন্ন সেক্টরে অবাধে দূর্নীতি,অনিয়মই যেখানে নিয়ম সেখানে জনগন কি আর জনগন থাকে! মাঝে মাঝে জনগনকে পন্য বলেও মনে হয়।  তবে পন্যের তো কিছু মূল্য থাকে, অনেক জনগনের সে মূল্যটুকুও নেই।
এতকিছুর পরেও তারপরও প্রশ্ন জাগে এই জনগনই আবার রাস্তায় নেমে নেতাদের পক্ষে স্লোগান কেন দেয়! আসলে এ ছাড়া তাদের কোন পথও থাকেনা বোধহয়। বেকারত্ব ঘুচাতে রাজনীতির গ্যাঁরাকলে থেকে টেন্ডারবাজি,এলাকার পাতি নেতা হয়ে দু- চার শালিসি করে টু পাইস কামানোর ধান্দা, আবার কচু কাটতে কাটতে ডাকাত হওয়ার মত পাতি নেতা থেকে বড় নেতাও কেউ হয়ে যান।
এত কিছুর পরেও ভোগের রাজনীতি থেকে ত্যাগের রাজনীতি করার লোকের সংখ্যা যে একেবারে নেই,তা নয়। তবে তা খালি চোখে দেখা দুস্কর। এখানে রাজনীতি এখন ব্যাবসা। জনসেবা যদুঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। জনগনের চাহিদার সাথে প্রাপ্তির যখন অমিল থাকে তখন রাজনীতি বা রাজনীতিবিদ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সচেতন জনতা। তবে দূর্ভাগ্য হলে এটিও সত্য তারপরও দেশ নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতিবিদরা।
তাহলে জনগন বিক্রি করে ফায়দা লুটলেও তারপরও কেন বিক্রি হওয়া জনগন টু শব্দ করেনা। এর বড় কারন বোধহয় রাজনীতি দিয়ে পেট চালানো। পেট নীতির কাছে রাজনীতি অসহায় থাকলেও বিকল্প কোন পথ গড়ে না ওঠায় রাজনৈতিক কর্মী এখনো পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। উন্নত বিশ্বে সাধারন মানুষের  রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ খুব একটা নেই,এর বড় কারন তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দ রয়েছে। এমনকি ভোট নিয়েও তাদের তেমন আগ্রহ নেই।
ইউরোপের কথাই যদি ধরা হয়,এখানের অধিকাংশ দেশে জাতীয় নির্বাচনের দিনে রাজপথ,সরু পথ,আড্ডার পথ কোন পথেই ভোটের কোন আমেজ দেখা যায়না। কোন ধরনের উৎসবমুখর ছাড়াই বেশ সাদামাটা ভাবেই দিনটি যায়। এর কারন হয়তো এসব দেশের আম জনতা জানেন বা বুঝেন সরকার যেই আসুক আমার যে অধিকার,সে অধিকারের জায়গায় খুব বেশি গড়মিল তারা করতে পারবেনা, আর করলেও তার জবাবদিহিতা রয়েছে। বাংলাদেশ সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অধিকাংশ রাজনীতিবিদরা প্রায় প্রতিটি জায়গায়  তারা হস্তক্ষেপ করে থাকেন,যেটি তাদের কাজ নয়। তাদের যতটুকু দায়িত্ব সংবিধান দিয়েছে,ঠিক ততটুকুর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে সরকারি বেসরকারি অনেক বিভাগে তাদের স্বাভাবিক কাজের গতি অনেক বাড়বে, দূর্নীতি কমবে,বাড়বে স্বচ্ছতা।
স্বাধীনতার পর থেকে যে অপরাজনীতির ধারা শুরু হয়েছে, সেটি থেকে বের না হতে পারলে আগামীদিনে জদু,মধু,কলিমুদ্দি,সলিমুদ্দিরাই রাজনীতির ধারক বাহক হবে।  সুশিক্ষায় শিক্ষিতরা ভুলেও এই পথে আসবেনা। যেটি গনতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি। জনগনের যে ঝাড়,সেখানের বাঁশ যেন জনগনই না খায়। উপলব্ধি যদি এখনই না হয় রাজনৈতিক দলগুলোর,ভবিষ্যতে কর্মী সংকট এতটাই প্রকট হবে যে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ আর গরম হবেনা। রাজনৈতিক দলগুলোর থাকতে হবে ফেসবুক,টক শো আর সাংবাদিক সন্মেলনের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়েই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *