বরিশালে হঠাৎ মাঠে নেমেছে আ’লীগ : বাড়ছে উত্তেজনা হামলায় আহত ১৬

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে হঠাৎ করেই নগরী এবং জেলার বিভিন্নস্থানে উত্তেজনা বাড়ছে। সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একযোগে মিছিল সমাবেশ করার পর নগরীতে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে নগরী এবং জেলার বিভিন্নস্থান বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিএনপির প্রচার মিছিলে পুলিশ বেধরক লাঠিচার্জ করেছে। এতে বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। একই দিন দুপুরে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলাকালে বানারীপাড়ার উত্তর বাজারে লাঞ্ছিত করা হয়েছে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহামুদ মাহাবুব মাষ্টারকে। এছাড়া সোমবার বেলা ১১টায় উজিরপুর উপজেলার ইচলাদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লিফলেট বিতরণকালে ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল হোসেন খান অভিযোগ করেন, গণসমাবেশ উপলক্ষে মঙ্গলবার বাকেরগঞ্জের কলসকাঠী বন্দরে বিএনপির লিফলেট বিতরণ ও গণমিছিল কর্মসূচি ছিল। লিফলেট বিতরণ শেষে বেলা ১১টায় বন্দরে গণমিছিল শুরু করা হলে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলাউদ্দিন মিলনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বেধরক লাঠিচার্জ করে মিছিল ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। লাঠিচার্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি হারুন জমাদ্দার, কলসকাঠী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মনছুর সিকদার, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এনায়েত হোসেন খানসহ ৫জন আহত হয়েছেন। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আলাউদ্দিন মিলন বলেছেন, কলসকাঠী বন্দরে বিএনপির দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্খায় দুই গ্রুপকে বন্দর এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য বলা হলে তারা স্বেচ্ছায় চলে যান। লাঠিচার্জ করার অভিযোগ অসত্য।

একই দিন (মঙ্গলবার) দুপুর ২টয় বানারীপাড়া বন্দরের উত্তর বাজারে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলাকালে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহামুদ মাহাবুব মাষ্টারকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। গোলাম মাহামুদ মাহাবুব মাষ্টার বলেন, আওয়ামী লীগের ৮-১০ জন কর্মী সমর্থক এসে তার হাত থেকে লিফলেট ছিনিয়ে নেয় এবং লাঞ্ছিত করে। তবে এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা।

উজিরপুরে সোমবার বেলা ১১টায় ইচলাদি বাসষ্ট্যান্ডে গণসমাবেশের লিফলেট বিতরণকালে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন উজিরপুর পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদ খান। তিনি বলেন, বরিশাল নগরে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় গণসমাবেশ সফল করতে সোমবার বেলা ১১ টার দিকে ইচলাদি বাসষ্ট্যান্ডে বিএনপির ১৫-২০ জন নেতাকর্মী লিফলেট বিতরণ করছিলেন। তখন ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান। এতে তাদের ১০ নেতাকর্মী জখম হয়েছেন। তবে উজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন ব্যাপারী বলেছেন, হামলার ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর গড়িয়ারপাড় এলাকায় যুবলীগের নেতাকর্মীরা মারধর করেছেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সজিব নিশাদকে। বরিশাল মহানগর বিএনপি এক বিবৃতিতে সজিব নিশাদের ওপর হামলার নিন্দা করে বলেছে, এভাবে হামলা চালিয়ে বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশে গণজোয়ার ঠেকানো যাবে না।

এদিকে বরিশাল নগরীতে সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ সক্রিয় হয়েছে আওয়ামী লীগ। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সোমবার সন্ধ্যায় মিছিল ও সমাবেশ করেছে দলটি। মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকায় যুবলীগের মহাসমাবেশ এবং ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতেই এই মিছিল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। ওই সূত্রমতে, এখন থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মিছিল সমাবেশ করার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ৫ নভেম্বর বরিশাল নগরে বিএনপির বড় জমায়েতকে ঘিরে আওয়ামী লীগের এধরনের কর্মসূচি সংঘাত ও অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই দুই পক্ষেরই উচিত নিজেদের সহিষ্ণু করে দলীয় কর্মসূচি পালন করা।

স্থানীয় রাজনীতি সচেতন মহল মনে করেন, আগামী ৫ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাপে রাখতে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো হয়েছে। মহানগর বিএনপির দাবী, গণসমাবেশের আগে মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ঢাকায় যুবলীগের মহাসমাবেশ এবং আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন- এই দুই ইস্যুকে সামনে রেখে মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো হয়েছে, যাতে বিএনপি একতরফা গণসমাবেশের প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারে। ৯ নভেম্বর পর্যন্ত নগরীর ৩০ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তবে নগরীতে আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা যুবলীগের মহাসমাবেশে ১০-১২ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যাবো। তাই নিজেদের সংগঠিত করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মসূচি দিয়েছি।’

এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের হঠাৎ এই মিছিল সমাবেশের কর্মসূচিকে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দাবী করে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘আমাদের গণসমাবেশ ব্যাহত করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ একের পর এক চক্রান্ত করছে, এসব করে কোনো লাভ হবে না’।

বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতেই পারে। তবে আশা করবো, তারা সহনশীল পরিবেশ বজায় রাখবেন। যদি তারা গণসমাবেশের জন¯্রােত বাধাগ্রস্থ করতে মহড়া দিয়ে, বাধা দিয়ে, মারধর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন তাহলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *