নাগরিক রিপোর্ট : নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) টালমাটাল অবস্থান মধ্যে থাইল্যান্ডে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসরকারের প্রশংসা ও বিএনপির কড়া সমালোচনা করেছেন। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারা যাবেন না বলা হলেও, দলটির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিমানবন্দরে রওশনকে স্বাগত জানান।
পাঁচ মাস দেশে ফিরে রওশন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্ববাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ক্রটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন। তাঁকে অনুরোধ করব বিষয়গুলো সমাধান করতে। মন্ত্রীদের আরও আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে। ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে।এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সবার উচিত সরকারকে সহযোগিতা করা।
তবে বিএনপির কড়া সমালোচনা করেন বিরোধীদলীয় নেতা। তিনি বলেছেন, বিএনপির শাসনামলে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরশাদ, আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজর নেতাকর্মী জেলে ছিলেন। জাপাকে জনসভাও করতে দেয়া হয়নি। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কি করে? তাছাড়া হাওয়া ভবনের দুর্নীতি অপতৎপরতা দেখেছি। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।
বিমানবন্দর থেকে হোটেল ওয়েস্টিনে যান রওশন। সেখানেই থাকবেন তিনি। প্রায় ১৬ মাস দেশে বিদেশে চিকিৎসার পর অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন জানিয়ে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন ঠিক আছি। আমার পায়ে কিছু সমস্যা আছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময় সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য।
জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিধবা রওশন বলেন, আগেও বলেছি,আজও বলছি-আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। সবাই জানেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা কত কষ্ট সহ্য করেছি। দলকে বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। বরং জাতীয় পার্টির সব সদস্যকে খোলা মনে আহ্বান জানিয়েছি-যারা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু ও কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তারা দলে ফিরে আসুন। ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকূল সময় ছিল। যারা ওই সময় সঙ্গে ছিলেন, তাদের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। দলের সব এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অন্যান্যদের সঙ্গে বসব। বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবঝি দূর করব। ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারব জাতীয় পার্টি।
রওশন এরশাদ দাবি করেন, দলকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে। যেমন হয়েছিল ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে। আগেই জানানো হয়েছিল, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেবেন রওশন। বিমানবন্দরে তিনি বলেন, এরশাদের স্নেহধন্য এবং তাঁর পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই লাঙ্গলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়া হবে। রওশনের লিখিত বক্তব্যে, জাপার প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ছিল।
রওশন এরশাদের সঙ্গে তাঁর ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, পুত্রবধূ মাহিমা সাদও দেশে ফিরেছেন। বিমানবন্দরে আরও উপস্থিত ছিলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাসরিন জাহান রত্না এমপি, রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ, জি এম কাদের জামানায় জাপা থেকে বাদ পড়া নেতারা।