নাগরিক রিপোর্ট : পদ্মসেতু চালুর পর ঢাকা-বরিশাল সড়কপথে যাত্রীবাহি বাস কয়েকগুন বেড়েছে। নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাস ধারনের সক্ষমতা নেই। তাই টার্মিনাল সংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের এক কিলোমিটরের বেশী থাকে বাসের দখলে। যে কারনে নথুল্লাবাদ এলাকায় যানজট এখন নিত্যদিনের দূর্ভোগে পরিনত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মহাসড়কের বাইলেন অংশ, যেখানে সাময়িক সময়ের জন্য বাস রাখা হতো সেটাও আটকে দিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি সরকারি দপ্তরে প্রবেশপথ আটকে বাস পার্কি করার অভিযোগে বাইলেন বন্ধ করে দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, কারও মতামত না নিয়েই বিসিসি বাইলেন বন্ধ করেছে। এনিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
তাদের মতে, বাইলেন অংশ আটকে দিয়ে মহাসড়কটি আরও ঝুকিপূর্ন করা হয়েছে। বাইলেনের ওপর অর্ধশতাধিক বাস রাখা যেতো। এখন সেগুলো মুল সড়কে রাখায় যানজট আরও বেড়েছে। সরকারি দপ্তরে প্রবেশপথ আটকে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে ট্রাফিক কনেষ্টবল বা প্রহরী নিয়োগসহ বিকল্প অনেক উপায় ছিল। বিষয়টি নিয়ে বিসিসি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করলে বাইলেন বন্ধ করার প্রয়োজন হতোনা।
সরেজমিনে দিয়ে দেখা গেছে, কাশীপুর সুরভী পাম্পের সামনে থেকে হাইটেক পার্ক পর্যন্ত মহাসড়কের উত্তর পার্শ্বে বাইলেনের প্রায় আধা কিলোমিটার পিলার দিয়ে বন্ধ দেয়া হয়েছে। সড়কের ওইপাশে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়, বরিশাল শিক্ষা বোর্ড, আঞ্চলিক পাসপোর্ট দপ্তর এবং হাইটেক পার্ক। গত সপ্তাহে আটকে দেয়ার পর সড়কটি ডাষ্টবিনে পরিনত হয়েছে। বিসিসির বিভিন্ন এলাকার সংগৃহীত বর্জ্য এনে সড়কের ওপর রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাইলেন সড়কে বাস রাখায় সমস্যার কথা জানিয়ে দপ্তরগুলোর প্রধানরা বিষয়টি বিসিসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। বিসিসি গত সপ্তাহে দুইপাশ পাকা পিলার পুতে বাইলেনের প্রায় আধাকিলোমিটার বন্ধ করে দেন।
বরিশাল জেলা নির্বাচন অফিসের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো: নুরুল আলম বলেন, দিনের বেলায় বাস রাখায় তাদের দপ্তরের প্রবেশ গেটও বন্ধ হয়ে যেতো। এতে সেবা গ্রহিতাসহ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা-যাওয়া মারাত্মকভাবে বিঘিœত হতো। বিষয়টি তারা বিসিসি ও বাস মালিক সমিতিকে লিখিতভাবে জানন। পিলার কারা পুতেছেন তা তাদের জানা নেই। যারা ক্ষমতা রাখেন তারাই পিলার পুতেছেন বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।
ওই এলাকটি বিসিসির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডভূক্ত। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন আহমেদ জানান, গত সপ্তাহে বিসিসির শ্রমিকদের পিলার পুতে মহাসড়কের বাইলেন অংশ আটকাতে দেখেছেন। কেন আটকানো হয়েছে তা নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর হিসাবে বিসিসি কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে আলোচনা করেননি। একটি ব্যস্ততম মহাসড়কের বাইলেন এভাবে আটকে দেয়া ঠিক হয়নি। ওই অংশ দিয়ে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচল করতো।
একই কথা জানান ওই এলাকার দায়িত্ব পালনকারী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) বিদ্যুৎ চন্দ্র দে। তিনি বলেন, ঢাকা-বরিশালসহ দুরপাল্লা রুটের বাস কয়েকঘন্টার বিরতী দিলে বাইলেন অংশে সারি করে রাখা হতো। গত সপ্তাহে কে বা কারা সেটি আটকে দিয়েছে বিষয়টি তারা জানেন না। এখন বাসগুলো বাইরের অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ায় নথুল্লাবাদ এলাকায় যানজট আরও বেড়েছে।
বাস মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক কিশোর কুমার বলেন, সুরভী পেট্রোল পাম্প থেকে হাইটেক পার্ক পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক ওখানকার কর্তৃপক্ষরা আটকে দিয়েছেন। ওখানে বাস রাখায় পাসপোর্ট, নির্বাচন অফিস ও শিক্ষবোর্ড কর্র্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। টার্মিনালে জায়গা না হওয়ায় বাইলেনের একপাশে বাস রাখা হতো। এজন্য সড়ক বন্ধ করে দেয়ার নিয়ম নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করবো।
এ বিষয়ে বিসিসির প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার রোহান জানান, বাস রাখায় নানা সমস্যার কথা জানিয়ে সেখানকার কয়েকটি সরকারি দপ্তর থেকে চিঠি দেয়া হয়। বিসিসি প্রহরী নিয়োগ করেও বাস রাখা বন্ধ করতে পারেননি। তাই আপাতত পিলার পুতে সড়কের ওই অংশটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চালকদের মধ্যে বাস না রাখার অভ্যাস ফিরে এলে পিলার পুতে সড়ক উম্মুক্ত করে দেয়া হবে।##