বিলুপ্ত হতে পারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি অচিরেই বিলূপ্ত হতে পারে। দলের একটি দায়িত্বশীল সুত্র এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাগনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে মহানগর কমিটির টানাপোরেনের অবসান ঘটাতে কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরই নতুন কমিটির বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন- বর্তমান মেয়র ও মহানগরের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের চাচা। খোকনের বড় ভাই ও মেয়রের পিতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা। তবে হাসানাত পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ বছর যাবত খোকন সেরনিয়াবাতের বৈরী সম্পর্ক।

সুত্রগুলো জানিয়েছে, দুটি কারনে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে। প্রথমত, খোকন সেরনিয়াবাতকে প্রার্থী ঘোষনার ১৮দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মহানগর কমিটি নিবাচনী কাজে যুক্ত হননি। দ্বিতীয়ত, গত সোমবার মহান মে দিবস পালনে সকালে খোকন সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা হয়। যাতে অংশ নেননি সাদিক অনুসারী মহানগর নেতাকর্মীরা। বিকালে মহানগর কমিটি পৃথক শোভাযাত্রার নামে শোডাউন করেছে। এই শোডাউন মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো মনে করছেন দলের হাইকমান্ড।

সুত্র জানায়, মে দিবসের বিকালে সাদিক অনুসারীরা শোডাউন করার পর ওইরাতেই ঢাকায় কেন্দ্রেীয় কয়েকজন শীর্ষ নেতা বৈঠক করেন। তারা মহানগরের মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি গঠরে পক্ষে একমত হন। এতে খোকন সেরনিয়াবাতকে আহ্বায়ক ও ৩ জনকে যুগ্ন আহ্বায়ক করার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে মে দিবসে পৃথক শোভাযাত্রা না করার জন্য রোবাবার দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত তৎপরতা চলে জানা গেছে। রাত ১২টার পরে মহানগরের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর, সহ সভাপত ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তালূকদার মো. ইউনুস প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের কালিবাড়ি সড়কের বাসায় যান। তখন তার প্রতিশ্রুতি দিযেছিলেন- বিকালের শোভাযাত্রা করবেন না তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তালুকদার মো. ইউনুস প্রার্থী খোকনের বাসায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পৃথক শোভাযাত্রা হলেও আমরাও নৌকার পক্ষেই শ্লোগান দিয়েছি। এর বেশী কিছু বলতে তিনি রাজী হননি।

মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য এবং শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, মহানগর কমিটির নেতাদের আচরন দেখে মনে হচ্ছে তারা সাদিক আবদুল্লাহর কর্মচারী। এই কমিটিকে নির্বাচনের মাঠে নামানো হলে তারা আত্মঘাতি কাজ করতে পারেন। তাই কমিটি বিলুপ্তি ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত গত ২৪ এপ্রিল রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে এসব জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, আগামী ৯ মে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে আসবেন। সভানেত্রী যেদিন তারিখ দেবেন সেদিনই মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ যৌথ বর্ধিত সভা করে নৌকার পক্ষে কাজ করা শুরু করবে। মহানগরের কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আরেক সহ সভাপতি ও সিটির প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল হোসেন লিটু এ প্রসঙ্গে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নগর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ন হয়নি। পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের দিন থেকে মেয়াদ ৩বছর ধরা হবে। সে হিসাবে মহানগরের মেয়াদ আছে আরো এক বছর। কমিটির পরিবর্তন করতে হলে সম্মেলনের মাধ্যমে হতে হবে।

এব্যপারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন। তার আগেই মহানগরের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিটি বিলুপ্ত ও নতুন আহ্বায়ক গঠনের পরিকল্পনার বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৮ মে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন শুধুমাত্র এ.কে.এম জাহাঙ্গীরকে সভাপতি ও মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষণা দেয়া হয়। এক বছর পর ২০২১ সালের ১জানুয়ারী পচাত্তর সদস্যের পূর্ন কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। রাজনৈতিক পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও মেয়র পতœী লিপি আবদুল্লাহও মহানগরের সদস্য পদ পান। মহানগরের সম্মেলনের আগে ৩০টি ওয়ার্ডে পৃথক সম্মেলন করে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা দেয়া হয়। গত সাড়ে ৩ বছর ধরে দুই সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *