সাদিকের কারনে হাসানাত পরিবার ছেড়েছেন সাবেক অনুসারীরা !

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : অসীম দেওয়ান ২০১১ সালে গঠিত মহানগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। তিনি দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর স্ত্রী প্রয়াত শাহান আরা আবদুল্লাহর ফুফাতো ভাই। সে হিসাবে অসীম সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লার মামা । তার বসতবাড়িও নগরের কাউনিয়ায় হাসানাতের শ্বশুরবাড়ির অদুরে। হাসানাত বলয়ের লোক হিসাবেই তার ছাত্র রাজনীতি শুরু এবং সেই সুত্রে মহানগরের সাধারন সম্পাদক হন বলে জানা গেছে। সেই অসীম এখন বরিশাল আওয়ামী লীগে হাসানাত পরিবারবিরোধী গ্রুপে নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম।

৯০’র দশকে দাপুটে ছাত্রলীগ নেতা বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মো জসিমউদ্দিন পরিচয় ছিল হাসানাত আবদুল্লাহর সিপাহশালার অন্যতম। ‘৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন সময়ে হাসানাত আবদুল্লাহ চিফ হুইপ থাকাকালীন নগর নিয়ন্ত্রকের অন্যতম ছিলেন জসিমউদ্দিন। যে কারনে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতাসীন হলে তাকে ৮-১০ বছর বরিশালের বাইরে থাকতে হয়েছে। সেই জসিম এখন অসীম দেওয়ানদের কাতারে ভিড়েছেন।

জসীম-অসীমসহ অন্তত অর্ধডজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন যারা গত এখন হাসানাত পরিবারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা রয়েছেন এই দলে। তাদের এতদিন মহানগর-সদর আসনের সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। এখন হাসানাতের ভাই মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের ‘নতুন বরিশাল’ শ্লোগানের পক্ষ নিয়েছেন। হাসানাতের আপন শ্যালক মফিজুল ইসলাম কামালও রয়েছেন এই দলে।

কেন তাদের হাসানাত পরিবারবিরোধী অবস্থান এর খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, সকলের অভিযোগের আঙ্গুল তার বড় ছেলে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দিকে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ- সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র হওয়ার পরই নিজের বলয় তৈরী করতে মেধাবী ও সাংগঠনিক নেতাকর্মীদের দল থেকে তাড়িয়েছেন। কৌশল হিসাবে নানাভাবে অপমান-অপদস্থ এমনকি অনেকের গাঁয়ে হাতও দিয়েছেন। অনেকের বসবতবাড়িতে সিটি করপোরেশরে বুলড্রোজারের আঘাত করেছেন। যারা তার আনুগত্য মেনে নিয়েছেন তাদেরকে নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ করেছেন।  ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসানাত আবদুল্লাহ সবকিছু জানলেও তিনি নিরব থেকে ছেলেকে মৌন সমর্থন দিয়েছেন।

উল্লেখিত বিষয়গুলো জানিয়ে বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন আহ্বায়ক মঈন তুষার সমকালকে বলেন- ‘সাদিক নিজে অশিক্ষিত-অসাংগঠনিক, তাই যারা তার চেয়ে জ্ঞানী ও সাংগঠনিক তাদের দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি তার বাবার রাজনৈতিক শিষ্যদেরও ছাড় দেননি’।

হাসানাত পরিবারের প্রতি বিরাগভাজন হওয়ার কারন জানতে চাইলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অসীম দেওয়ান বলেন, সাদিক আবদুল্লাহ আমেরিকা থেকে বরিশালে এসে রাজনীতি শুরু করলে তার সঙ্গেই ছিলাম। তিনি আমার আত্মীয়ও বটে। ধীরে ধীরে তার অসাংগঠনিক কাজসহ নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে আমার প্রতি হিং¯্র হয়ে ওঠেন সাদিক। আমার বাসায়  দফায় দফায় বাসায় হামলা ও গুলিবর্ষন করা হয়। এতে টিকতে না পেরে ২০১৪ সালের শেষ দিকে বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে যাই। গত ৯ বছরে পালিয়ে ২-১ বার বরিশালে আসলেও কাউনিয়ায় নিজের বাসায় যেতে পারিনি’।

২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বরিশাল ত্যাগ করেন তখনকার দাপুটে ছাত্রলীগ নেতা জসিমউদ্দিন। সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ মেয়র থাকাকালীন (২০০৮-১৩) তিনি বরিশালে ফেরেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, হিরণের সহযোগীতায় বরিশালে ফেরেন তিনি। তার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। এ বিষয়টি ভালভাবে নেননি হাসানাত পরিবার। যে কারনে হিরণের মৃত্যুর পর (২০১৪) মহানগর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রন সাদিকের হাতে ফিরলে সেখানে জায়গা হয়নি জসিমের। তিনি রাজনীতিতে নিস্ক্রীয় হয়ে যান। তবে এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য তিনি বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। পরিবারিক প্রয়োজনেই রাজনীতিতে নিস্ক্রীয় ছিলেন। সাবেক ছাত্রলীগার হিসাবে তিনি এখন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে রয়েছেন।

সাদিকের রোষানল থেকে রক্ষা পাননি তার আপন মামা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল। পারিবারিক বিরোধের জেরে দক্ষিণ চকবাজারে কামালের নির্মানাধীন বহুতল বানিজ্যিক ভবনের কাজ সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়া হয়। দফায় দফায় ভাংচুর করা হয় ভবনটি। মেয়র হওয়ার পরই মামাকে অপসারন বরিশাল ক্লাবের সভাপতি হন কামাল। অথচ তার এই মামা ২০১৮ সালে সাদিকের নির্বাচনে গণমাধ্যমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়িত্বে ছিলেন।

ভাগনের এ আচরন প্রসঙ্গে মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও ভবনটি ভাঙ্গা হয়। মেয়র বরিশাল ক্লাবের সভাপতি হয়েছেন অবৈধভাবে। কারন সদস্যপদ ১০ বছর না হলে কেউ সভাপতি হওয়ার বিধান নেই। সাদিক এই নিয়ম ভেঙ্গেছেন’।

নগরীর গুরুত্বপূর্ন বানিজ্যিক এলাকা সাগরদীতে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনের নির্মানাধীন ভবনটি নকশা বহির্ভূত অভিযোগ তুলে বুলড্রোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়। জসিমেরও অভিযোগ, শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পর তিনি সাদিকের দাসত্ব গ্রহন করেননি। তাই তার ভবনটি ভেঙ্গে দেয়া হয়।

গত রমজানের শেষদিকে ইফতারের আগ মুহুর্তে নতুন বাজার এলাকায় জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান হাওলাদারের ভবনের সামনে বুলড্রোজার স্থাপন করা হয় ভাঙ্গার জন্য। এক সময়ে হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্টজন শাহজাহান ও স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধের মুখে পরে ফিরে যায় সিটি করপোরেশনের লোকজন। জানা গেছে, থ্রিহুইলার যানবহনের নিয়ন্ত্রন পেতে টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সংগঠক শাহজাহানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন মেয়র সাদিক। সেই শাহজাহান এখন খোকন আবদুল্লাহর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য।

সাদিকের আনুগত্য না মানলে ওয়ার্ড নেতারাও তার রোষানলে পড়তেন নেতাকর্মীদের অভিযোগ। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল মালেক খানের নাতি ফাহিম হাসনাইন খান ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পদক। পারিবারিক বিরোধে স্ত্রীর দায়ের ঢাকায় গ্রেপ্তার হন ফাহিম। এ অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপির আত্মীয় হওয়াও ফাহিমের অপরাধ বলে জানা গেছে। আবার সাদিকের আস্থাভাজন ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক কেফায়েত হোসেন রণির বিরুদ্ধে বিয়ের প্রভোলন দেখিয়ে ধর্ষন মামলা দায়ের করেছিল এক তরুনী। তখন মহানগর আওয়ামী লীগ আটঘাট বেঁধে রণির পক্ষে নামেন এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশী তদন্তে অব্যাহতি দেয়া হয় রণিকে।

গত ডিসেম্বরে গঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের একসময়ের কর্মী জর্ডান রোড এলাকার সন্তান শেখ আসিফ ওয়ালী ইনান। এতে আনন্দ-উল্লাসের বদলে নিরব ছিল মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগ। জানা গেছে, ইনান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য (বরিশাল নগরীর সন্তান) জাহাঙ্গীর কবির নানকের অনুসারী হওয়ায় বরিশাল ছাত্রলীগের ওই ভূমিকা ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *