মেননের ঘাটিতে ঘুরে দাঁড়ানোই ওয়ার্কার্স পার্টির বড় চ্যালেঞ্জ

Spread the love

 নাগরিক রিপোর্ট : বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলাকে ওয়ার্কর্স পার্টির আতুরঘর বা রাশেদ খান মেনন এমপির ঘাটি হিসাবে গণ্য করা হয়। বাবুগঞ্জ উপজেলাকে সংযুক্ত করে গঠিত বরিশাল- ৩ আসনে রাশেদ খান মেনন ও তার দলের প্রার্থী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সেই আসনে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। মেনন ঢাকা- ৮ আসনে ফের ১৪ দলের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে। এরসঙ্গে তার মুল ঘাটি বরিশাল- ৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) পুনরুদ্ধারও তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল- ৩ আসনে প্রার্থী কে হবেন এনিয়ে এরইমধ্যে বিরোধের গুঞ্জন উঠেছে। একপক্ষ চাচ্ছেন রাশেদ খান মেনন পতœী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেছাকে। ২০১৪ সালের নির্বাচিত এমপি টিপু সুলতানও ফের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভিত্তিক আসন ভাগাভাগিতে বরিশাল- ৩ ওয়ার্কার্স পার্টিকে দেয়া হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তোপের মুখে পড়তে হবে। এখানে ওয়ার্কার্স পার্টির বিরুদ্ধে একট্টা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ টিপু সুলতানকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে সমর্থনে জিতেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। অপরদিকে কোন্দল ও ভাঙ্গনে বিপর্যন্ত ওয়ার্কার্স পার্টির এককভাবে নির্বাচন করে আসন পুনুরুদ্ধারের সক্ষমতাও নেই।

রাজনৈতিক সচেতন মহলের মতে, রাশেদ খান মেননের বোন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বরিশাল- ৩ আসনে প্রার্থী হলে ওয়ার্কার্স পার্টির ভেতরের হিসেব-নিকেশও অজানা কারনে বদলে যায়। যে কারনে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন তার ওপরও অনেকটা নির্ভর করছে ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়ন।

দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘পারিবািরক’ দলে পরিনত করায় এক সময়ের ঘাটিতে ওয়ার্কার্স পার্টি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বোন বেগম সেলিমা রহমান বিএনপির প্রার্থী হলে রাশেদ খান মেনন নিজের আসন ছেড়ে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করে এমপি হন। এরপর থেকেই বরিশাল- ৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির আধিপত্য কমতে থাকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির বর্জন ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকায় পার্টির জেলা সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ টিপু সুলতান এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটের নৌকার প্রার্থী হয়েও তার অবস্থান হয় তৃতীয়। এরইমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বর পদগুলো একে একে হারিয়েছেন দলটির স্থানীয় নেতারা।
স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে, মেনন পতœী লুৎফুন্নেছা এমপি গত দুইবছর যাবত বাবুগঞ্জ-মুলাদী এলাকাতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাকে সর্বাক্ষনিক সহযোগীতা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পদক শাহীন মাহমুদ। সাধারন সম্পাদকের সঙ্গে সাবেক এমপি টিপু সুলতানের বিরোধও রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘পার্টির সাধারন সম্পাদক হিসাবে আমি চাই রাশেদ খান মেনন অথবা তার স্ত্রী লুৎফুন্নেছা বরিশাল- ৩ আসনে প্রার্থী হোক। মেনন পরিবার ছাড়া এ আসনটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবেনা। সাবেক এমপি টিপু সুলতানের সঙ্গে বিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিপু এমপি থাকাকালীন পার্টির অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেননি।

টিপু সুলতান বলেন, চলতি বছর বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি তাকে বরিশাল- ৩ আসনের প্রার্থী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকাতে পার্টিতে কোন মতবিরোধ নেই। ১৮ সালের নির্বাচনে জোট প্রার্থী হিসাবে তাকে নৌকা দেয়া হয়েছিল। কিন্ত নৌকার মালিকরাই তাকে হারিয়েছেন।

বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল হক নীলু বলেন, ‘বরিশাল- ৩ আসন হচ্ছে ওয়ার্কার্স পার্টির আসন। ১৪ দলগত নির্বাচন হলে আসনটি ওয়ার্কার্স পার্টি দাবী করবে। প্রার্থী তালিকায় মেনন পতœী লুৎফুন্নেছা এমপি এবং সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান রয়েছেন। দুজনের যেকোন একজন প্রার্থী হবেন। নীলু জানান, ১৮ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসাবে শেখ টিপু সুলতানকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সেটাকে অন্যের নৌকা মনে করে লাঙ্গল মার্কাকে জিতিয়ে দিয়েছেন।

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পীকার আব্দুর জব্বার খানের ছেলে ষাটের দশকের তুখোর ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন এমপির নেতৃত্বে ১৯৮০ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির সৃষ্টি হয়। খান পরিবারের স্থায়ীনিবাস বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে। ঐতিহ্যগতভাবেই এ পরিবারের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব রয়েছে বাবুগঞ্জে। যে কারনে প্রতিষ্ঠার পর বাবুগঞ্জ, উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায় শক্ত ভীত ছিল ছিল ওয়ার্কার্স পার্টির। বাবুগঞ্জ-উজিরপুর নিয়ে সংসদীয় আসনে রাশেদ খান মেনন ১৯৯১ সালে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাবুগঞ্জ-মুলাদী আসনে জেলা সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান দলের সাংসদ নির্বাচিত হন।

সংকটের যত কারন : ২০০৮ সালে রাশেদ খান মেনন ঢাকা- ৮ আসনের এমপি হলে বরিশাল- ৩ আসনের জয়ী হন মহাজোটের প্রার্থী জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু। ‘১৪ সালের নির্বাচন বিএনপিসহ সব দল বর্জন করলে আওয়ামীলীগের সহযোগীতায় জাপার টিপুকে পরাজিত করেন ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ টিপু। এরপরই উন্নয়ন বরাদ্দের ভাগ-বন্টন নিয়ে এমপি শেখ টিপুর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামীলীগ বিরোধ বাঁধে। যার জেরে ২০১৮ সালে টিপু সুলতান নৌকা প্রতীকে ১৪ দলের প্রার্থী হলেও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জাপার গোলাম কিবরিয়া টিপু জিতিয়ে দেন। ওয়ার্কার্স পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব মৈত্রীর তখনকার কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি আতিকুর রহমানও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনের পরে আতিকসহ তার সমর্থক বাবুগঞ্জ উপজলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক এনায়েত করীম ফারুক, মুলাদী উপজেলা সম্পাদক সেলিম চৌকিদার, জাতীয় কৃষক সমিতির থানা সম্পাদক মনিরুজ্জামান হাওলাদারসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বহিস্কৃত হন। আতিকসহ তার বাবা বজলুর রহমান মাষ্টার (কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি) ও ভাই দেহেরগতি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মশিউর রহমান আওয়ামী লীগে যোগদেন। কয়েকমাস আগে বহিস্কার হন ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সুজন আহমেদ। তিনি সাবেক এমপি টিপুর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন। একের পর বহিস্কার ও দলত্যাগে আতুর ঘরে দূর্বল হয়ে পড়ে ওয়ার্কার্স পার্টি। যার বহি:প্রকাশ ঘটেছে গত ইউপি নির্বাচনে সবকটিতে হেরে।

দ্বাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আটঘাট বেধে নেমেছেন আতিক। এ প্রসঙ্গে আতিক বলেন, এই আসনটি জাপা ও ওয়ার্কার্স পার্টির মধ্যে হাতবদল হচ্ছে। এখন আসনটির দাবীদার আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন দিয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী।

ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্রসংগঠন ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও পাশের উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সুজন জানান, দল আদর্শ বিচ্যুত হওয়ায় ২০০৪ থেকে ২০ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রমৈত্রীর সকল সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কয়েকবছর আগে একযোগে ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। ##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *